কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি নিন

0

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৯ দিনের জন্য লকডাউন শিথিল করা হয়েছিল। এই ৯ দিনে সারাদেশে মানুষ যানবাহনে গাদাগাদি করে চলাফেরা করেছে। মার্কেট, শপিং মল, হাট-বাজারে প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। ছোটখাটো অনুষ্ঠানও হয়েছে। সেসব জায়গায় অন্য স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা, মুখে মাস্ক পরতেও অনেকের অনীহা দেখা গেছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, অচিরেই সারাদেশে সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে যেতে পারে এবং এদের একটি বড় অংশকে হাসপাতালে স্থানান্তর করার প্রয়োজন হতে পারে। আর তখনই দেখা দেবে প্রকৃত সংকট। এখনই হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। সংক্রমণ আরো বাড়লে হাসপাতালে কোনোভাবেই রোগীদের স্থান সংকুলান করা যাবে না। আইসিইউ ও অক্সিজেন সংকট প্রকট রূপ নেবে। সংবাদ মাধ্যমের তথ্যানুযায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাও সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়তে পারে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এখন থেকেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
সংক্রমণের দ্রুত বিস্তার রোধে শুক্রবার থেকে আবারও কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে। কিন্তু মানুষ আগের মতোই অসচেতন আচরণ করছে। প্রয়োজন ছাড়াও অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছে। ঈদের দিন মসজিদে গাদাগাদি ছাড়াও কোলাকুলিও হয়। ঈদের পরদিন সব ধরনের দূরপাল্লার যানবাহন চালু ছিল, যেন জরুরি প্রয়োজনে মানুষ যাওয়া-আসা করতে পারে। কিন্তু সেদিন যানবাহনে চাপ ছিল না বললেই চলে। শুক্রবার লকডাউন শুরু হওয়ার পর হাজার হাজার মানুষ ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে ঢাকা ছেড়েছে এবং ঢাকায় আসছে। অলিগলিতে দোকানপাট খোলা থাকায় সেসব জায়গায় মানুষ আড্ডা জমায়। এমন অসচেতনতা চলতে থাকলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। রাস্তাঘাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর যথেষ্ট তৎপরতা দেখা যায়। তার পরও অপ্রয়োজনে ঘোরাফেরা করায় শুক্রবার অনেককে গ্রেফতার ও জরিমানা করার খবর হয়। কিন্তু মানুষ এতেও সচেতন হয়নি। এ অবস্থায় প্রশ্ন যৌথবাহিনীর পক্ষে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা কতটা সম্ভব হবে? এত মৃত্যু, এত আক্রান্ত হওয়ার পরও মানুষ সচেতন হচ্ছে এটাই বাস্তবতা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আসন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ও সুযোগ-সুবিধা এখনি বাড়াতে হবে। চিকিৎসকসহ প্রশিক্ষিত লোকবলের অভাব পূরণের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিতে হবে এবং তারা যাতে রোগীর ব্যবস্থাপনায় সহায়তা দিতে পারে তেমনভাবে তৈরি করতে হবে। হাসপাতালের চাপ কমানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করতে হবে। রোগীদের প্রাথমিকভাবে এই সব সেন্টারে রাখা এবং অক্সিজেন সাপোর্টসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে হবে। শুধু গুরুতর রোগীদের হাসপাতালে পাঠানে বর্তমান ব্যবস্থা না বদলালে করোনা ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়বে। বিনা চিকিৎসায় অনেকের মৃত্যুর শঙ্কা থাকবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, লকডাউন দীর্ঘ সময় ধরে চালানো যাবে না। তাতে অর্থনীতি যেমন বিপর্যস্ত হবে, তেমনি বহু মানুষের জীবন-জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে। তাই লকডাউনের সময়ে কঠোরভাবে এর বিধি-নিষেধ পালনের মাধ্যমে সংক্রমণের বিস্তার কমিয়ে আনতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে সম্ভাব্য সর্বাধিক সংখ্যায় মানুষকে টিকা প্রদান এবং আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে।