মোংলা বন্দরে রেকর্ড পরিমাণ জাহাজের আগমন

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট)॥ সৃষ্টির ৭০ বছরের ইতিহাস ভঙ্গ করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা এই প্রথম বারের মতো বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। গেল সদ্য বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থ বছরে এ বন্দরে ৯৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজ নোঙর করেছে। এ সময়ে বন্দরে ১৪ হাজার ৪৭৪টি গাড়ি অবতরণ এবং ৪৩ হাজার ৯৫৯টি কন্টেইনার জাহাজে খালাস ও বোঝাই হয়। এতে করে বেশি জাহাজ আগমনের পাশাপাশি এ বন্দরে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে পণ্য ওঠানামা ও রাজস্ব আয় অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে বৃিদ্ধ পেয়েছে।
বিশ্বব্যাপী করোনা অতিমারির মধ্যে এমন জাহাজ আগমন, পণ্য হ্যন্ডলিং ও রাজস্ব আয় বৃদ্ধিকে মোংলা বন্দরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ী, বন্দর ব্যবহারকারী ও সংশ্লিষ্টরা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে মোংলা একটি পুর্ণাঙ্গ আধুনিক স্বয়ং সম্পন্ন বন্দর হিসেবে নিজেকে শিগগিরই প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
বন্দর সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালে বৃটিশ বাণিজ্যিক জাহাজ দ্য সিটি অফ লায়নস সুন্দরবনের মধ্যে পশুর নদীর জয়মনিরগোল নামক স্থানে নোঙ্গর করার সাধ্যমে মোংলা বন্দরের সূচনা করে। এরপর বন্দরটি কোনমতে টিকে থাকলেও ৯০ দশকের দিকে এটি একটি রুগ্ন বন্দরে পরিণত হতে থাকে। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ অর্থ বছর পর্যন্ত এ বন্দর নানা ধরনের প্রতিকুলতার মধ্যে পড়ে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মোংলা বন্দরের উন্নয়নে সরকার অগ্রাধিকার ও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এখানে উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে কাজ শুরু করে। ফলে মোংলা বন্দর গতিশীল হতে থাকে, যার কারণে প্রতি বছর বিদেশী জাহাজ আগমনের রেকর্ড সুষ্টিসহ পণ্য ওঠানামা ও রাজস্ব আয়ে গতি সঞ্চার করতে থাকে।
বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, মোংলা বন্দর দিয়ে এখন সাধারণত কয়লা, পাথর, খাদ্যশস্য,বিকন্ডিশন মটর গাড়ি, মেশিনারীজ,গ্যাস, ক্লিংকার, জিপসাম, ফ্লাই ্অ্যাশ,খেলনা, কসমেটিক্স, ইলেক্সট্রনিক্স, গার্মেন্টস, পার্টস, কাপড় প্রর্ভতি পণ্য আমদানী করা হয়। এ ছাড়া এখান থেকে চিংড়িসহ বিভিন্নব হিমায়িত মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য, টালীসহ নানা ধরনের পণ্য বিদেশী রফতানী করা হয়ে থাকে। সাধারণত চিন থেকে এসব পণ্য আমদানী ও রফতানী হয়ে থাকে। এ ছাড়া মালেয়শিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, সিঙ্গাপুর, জাপান, পাকিস্তানসহ আশপাশ দেশের বিভিন্ন বন্দর থেকে এ বন্দরে পণ্য আমদানী ও রফতানী করা হয়ে থাকে।
সূত্র আরো জানায়, বন্দরের দীর্ঘকাল বিরাজমান সংকট আউটার বার ড্রেজিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ইনার বারেও ড্রেজিং কার্যক্রমের কাজ চলছে। এতে করে অধিক ড্রাফটের জাহাজ এ বন্দরে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারছে। অপরদিকে বন্দর জেটির অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হেেছ। এদিকে বর্তমানে ৯টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এগুলোর কাজ শেষ হলে বন্দর আরো বেগমান হবে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা মনে করছেন, বন্দরের গৃহিত এসব কর্মকান্ডের ফলে এখানে জাহাজ আগমন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পাবে।
মোংলা বন্দরের অর্থ ও হিসাব রক্ষণ সূত্রে জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী ২০২০-২০২১ গত অর্থবছরে মোংলা বন্দরে জাহাজ ভিড়েছিল ৯০৩টি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৯১২টি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৭৮৪টি এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬২৩টি। অপরদিকে এ সময়ে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে যথাক্রমে ৭৫.১১ মেঃ টন, ৯৭.১৬ মেঃ টন,১১৩.১৫ মে,টন,১১০.৩৭ মে.টন, ১১৯.৪৫ মে,টন। আর এ সময়ের মধ্যে রাজস্ব আয় হয়েছে ২২৬৫৬.০৫ লক্ষ টাকা, ২৭৬১৪.৪৯ লক্ষ টাকা,৩২৯১২.১৩ লক্ষ টাকা, ৩৩৮১৯.০৭ লক্ষ টাকা, ৩৪০২৩.১২ লক্ষ টাকা। এ হিসেবে এ বন্দরটি সদ্য সমাপ্ত অর্থ বছরে ১৩০ কেটি টাকা নীট মুনাফা লাভ করেছে। যা গত বছরের নীট মুনাফা হার ছিল ১১৭ কোটি টাকা। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ আগামি ২১-২২ অর্থ বছরে ১ হাজারের বেশী জাহাজ আগমন এবং রাজস্ব আয় ৩৬০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করেছে।
বন্দর ব্যবহারকারী হোসাইন মোহাম্মদ দুলাল জানান, সরকারের দেয়া বিধি নিষেধ মেনেই মোংলা বন্দরের শ্রমিক কর্মচারীরা স্বাস্থ বিধি মেনে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এতে সংশ্লিষ্ট সবাই সহযোগীতা প্রদান করেছেন। বন্দর সৃষ্টির ৭০ বছরে এই প্রথম রেকর্ড সংখ্যক জাহাজ আসার ঘটনায় সবার বিশেষ করে সরকারের একটি বড় ধরনের সহযোগীতা ছিল। বিগত দিনের সরকারের আমলে মোংলা বন্দর সিলেটেড বন্দর ছিল। এ সরকার আসার পর বন্দরের ড্রেজিং,জেটি বর্ধিত করণ, ইয়ার্ড নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের কারণে এই নীট মুনাফা ও সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মোস্তফা কামাল বলেন, সরকারের যে উন্নয়ন পরিকল্পনা আছে, যে মেগা প্রকল্পগুলি চলমান তার পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে খালাস করা হচ্ছে। এতে বন্দওে বর্মচঞ্চলতা বেড়েছে বহুলাংশে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা বলেন, ২০০১ সাল থেকে২০০৮অর্থ বছর পর্যন্ত এ বন্দর নানা ধরনের প্রতিকুলতার মধ্যে পড়ে লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর মোংলা বন্দরের উন্নয়নে সরকার অগ্রাধিকার ও বিশেষ গুরুত্ব দিয়েএখানে উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে কাজ শুরু করে।ফলে মোংলা বন্দর গতিশীল হতে থাকে, যার কারণে প্রতি বছর বিদেশী জাহাজ আগমনের রেকর্ড সুষ্টিসহ পণ্য ওঠানামা ও রাজস্ব আয়ে গতি সঞ্চার করতে থাকে।