কাটেনি খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিলতা, দেশের বাইরে নিতে সরকারের‍ “না”

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ খালেদা জিয়ার শারীরিক জটিলতা এখনও কাটেনি। রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। ইতোমধ্যে পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার কথা বলা হলেও সরকারের পক্ষ থেকে ‘না’ করা হয়েছে। এরইমধ্যে বিদেশে নেওয়ার উদ্যোগটি আবার সক্রিয় হলেও রবিবার (১৩ জুন) হাইকোর্টের তরফে জন্মদিনের যাবতীয় কাগজপত্র চেয়ে রুল জারি হওয়ায় পরিস্থিতি নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। খালেদা জিয়ার জন্মদিনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়েরের প্রেক্ষিতে ওই রুল জারি করেন আদালত। রবিবার যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাড. মামুনুর রশিদ মামুন ওই রিট দায়ের করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ও একাধিক দায়িত্বশীলের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, তারা মনে করেন ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট থেকে বিএনপির চেয়ারপারসনের জন্মদিনের কাগজপত্র চেয়ে রুল জারি করা হলেও এর রহস্য অন্যত্র। সম্প্রতি খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট রিনিউ করতে জমা দেওয়ার পরই বিষয়টিতে নজর দেয় ক্ষমতাসীন দল।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, জন্মদিনের বিষয়টিকে আদালতে নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—খালেদা জিয়ার জন্মদিনের তারিখে সংশোধনে আনা। বেগম জিয়া তার চিকিৎসার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে তথ্য সংশোধনে সম্মতি দেবেন কিনা, তাও বিবেচ্য বিষয়। তবে এ কাজটি কোনও পক্ষের জন্যই নির্মল হবে না—বলে মনে করে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্রটি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘একজন নাগরিক হিসেবে চিকিৎসার অধিকার সব মানুষের আছে। সেখানে তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না সরকার। এখন চিকিৎসার জন্য জন্মদিনের সার্টিফিকেটও লাগে। দে ক্যান ডু এনিথিং।’ ক্ষমতাসীন দলের সূত্রে জানা গেছে, ১৫ আগস্টের জন্মদিন সংক্রান্ত বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারপারসন কাগজপত্রে জন্মদিন সংশোধন করলে বিষয়টির সুরাহা হবে। তবে সূত্রের এও দাবি, খালেদা জিয়ার বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আবেদন করা হলে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নিষ্পত্তি হতে পারে। সেক্ষেত্রে পারিবারিকভাবে প্রকাশ্যেই আবেদন করতে হবে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইনের আওতায় সাজা স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যেটাই করতে হবে আইনের আওতার মধ্যে থেকে করতে হবে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরও বলেন ‘আইনের বাইরে কোনও বিশেষ ব্যবস্থা হতে পারে না। দেশে আইনের শাসন আছে এবং আইনের মাধ্যমেই দেশ চলে।’
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ম্যাডামের চিকিৎসার জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেগুলো পারিবারিকভাবেই নেওয়া হয়। এখনও কোনও উদ্যোগের প্রশ্ন আসলে তা পারিবারিকভাবে সম্পন্ন হবে।’ স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চিকিৎসা পাওয়া একজন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। এটা তো ইতিহাসে কালো অধ্যায় হিসেবে থাকবে।যেখানে সাংবিধানিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা, সেখানে চিকিৎসা সেবাকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।’ খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তার জানান, বিএনপিপ্রধানের পাসপোর্ট রিনিউ করতে জমা দেওয়া হলেও রবিবার পর্যন্ত কোনও আপডেট নেই।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ এপ্রিল করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসে খালেদা জিয়ার। ১৫ এপ্রিল সিটি স্ক্যান করান তিনি। অক্সিজেনজনিত সমস্যা দেখা দিলে ২৭ এপ্রিল রাতে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ২৮ এপ্রিল ব্যক্তিগত ও এভার কেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬ মে খালেদা জিয়ার করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। এক মাস পর গত ৩ জুন খালেদা জিয়াকে সিসিইউ থেকে বিশেষ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। ৫ মে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে লিখিত চিঠি দেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার। যদিও সরকার তাতে এখনও সাড়া দেয়নি।