চৌগাছায় ভূমি অফিসগুলোতে খাজনার রশিদ বই নেই

0

এম. এ রহিম, চৌগাছা (যশোর) ॥ যশোরের চৌগাছায় ভূমি অফিসগুলোতে খাজনা আদায়ের রশিদ বই নেই। যে কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। খাজনা দিতে না পেরে তারা অফিস থেকে ফিরে যাচ্ছেন।
বসতবাড়ি ও ধানিজমিসহ ৯০ শতক জমির মালিক চাঁদপাড়া গ্রামের সুলাইমান হুসাইন ২০০৩ সালে জমির খাজনা দিয়েছেন। নতুন করে আবার বকেয়া খাজনা পরিশোধ করে অনলাইনে খাজনা পরিশোধের জন্য নিবন্ধন করবেন তিনি। প্রস্তুতি নেন সোমবার ( ৭জুন) যাবেন নারায়নপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। তখন খবর পান, ভূমি অফিসে খাজনা পরিশোধের রশিদ বই নেই। বাঘারদাড়ী গ্রামের নুর ইসলাম, আলম হোসেন, জাহিদুল ইসলাম জমির খাজনা দিতে সম্প্রতি স্বরুপদহ ভূমি অফিসে যান। দাখিলা বই না থাকায় তাদেরকে ফেরত আসতে হয়েছে। রশিদ বই সঙ্কটে জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারেননি সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের বল্লভপুর গ্রামের আশাদুল ইসলাম ও আন্দুলিয়া গ্রামের কবির হোসেন। পৌর শহরের আ¤্রকানন পাড়ার আব্দুল মান্নান ও আবু ইউছুফ মুকুল তাদের বাস্তভিটার খাজনা দেওয়ার জন্য চৌগাছা সদর ভূমি অফিসে বারবার ধর্ণা দিলেও খাজনা রশিদ না থাকায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। এ ছাড়াও খাজনা রশিদ না থাকায় ভূমি অফিসে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন চৌগাছা উপজেলার অসংখ্য মানুষ। সরকারি হিসেবে গ্রামপর্যায়ে বসতভিটার জন্য শতক প্রতি বছরে ১০ টাকা, বাগানের জন্য ২ টাকা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ৪০ টাকা করে খাজনা নির্ধারিত। ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষিজমি খাজনামুক্ত থাকলেও অন্য জমির মতো বিক্রিত কৃষি জমি রেজিস্ট্রি করতে হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে দাখিলার কাগজ সংযুক্ত করতে হয়। এছাড়া জমির নামজারি ও ব্যাংক লোনের জন্য খাজনা পরিশোধের রশিদ প্রয়োজন হয়। তখন জমির মালিকরা খাজনা পরিশোধ করতে ভূমি অফিসের দ্বারস্থ হন। প্রতিনিয়ত ভিড় লেগেই থাকে ভূমি অফিসগুলোতে। কয়েকমাস ধরে ভূমি অফিসগুলোতে কর পরিশোধের রশিদ না থাকায় জমির মালিকরা বারবার ভূমি অফিসে গিয়েও খাজনা পরিশোধ করতে পারছেন না। এর ফলে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এদিকে, অনলাইনে জমির খাজনা আদায়ের লক্ষ্যে গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলা ব্যাপী মাইকে প্রচারণা চালাচ্ছে উপজেলা ভূমি অফিস। জমির মালিকদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নিজ নিজ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগাযোগ করার আহ্বান করা হচ্ছে। তবে, খাজনা আদায়ের রশিদ না থাকায় জমির মালিকরা বকেয়া খাজনা পরিশোধ করে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। চৌগাছার হাউলি গ্রামের সামাউল ইসলাম বলেন, ‘বিপদে পড়ে জমি বিক্রি করেছি। কিন্তু খাজনা দিতে না পারায় ওই জমির দলিল করে দিতে পারছি না। কবে ভূমি অফিসে খাজনা আদায়ের রশিদ বই আসবে তাও জানিনা।’ স্বরুপদহ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ দিন ধরে খাজনা রশিদ নেই। অনেকে এসে ফিরে যাচ্ছেন। অফিসে বারবার জানিয়েও রশিদ বই পাচ্ছিনা।’
চৌগাছা সদর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘একমাস ধরে খাজনার রশিদ নেই। বারবার অফিসে আবেদন করছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত রশিদ পাইনি।’ চৌগাছা উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির তারেক হোসেন খাজনা আদায়ের রশিদ বই বিতরণ ও সংগ্রহ করেন। তিনি বলেন, ‘উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা মিলে ১০টি ভূমি অফিস রয়েছে। প্রতি অফিসে মাসে ১শ পৃষ্ঠার তিনটি করে বই লাগে। সেই হিসেবে ৩৫-৪০টি বইয়ের প্রয়োজন হয়। সেখানে ২০-৩০টি বই পাই। গত একমাস ধরে কোনো বই পাচ্ছিনা। যশোর জেলা অফিসেও বই নেই। কবে বই পাবো তা বলতে পারছিনা।’ এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাফি বিন কবির বলেন, ‘রশিদ বই সঙ্কটের কারণে অনেক সমস্যা হচ্ছে। যে পরিমান বই আমরা পেয়ে থাকি তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বই চেয়ে জেলায় আবেদন করেছি। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে পাবো।’