ওরা ভয়ঙ্কর ফেরিওয়ালা!

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ পাড়া-মহল্লায় ফেরিওয়ালা ঢুকলে নারীরা পছন্দের কসমেটিকস অথবা কাপড় কেনার জন্য ছুটে আসেন। সেই ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশে যশোর শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ভয়ঙ্কর চোরচক্রের এখন আনাগোনা। কোনো বাড়ি ফাঁকা দেখতে পেলে গ্রিল কেটে অথবা ভিন্ন কোনো উপায়ে ঘরে ঢুকে সোনার অলঙ্কার, মূল্যবান পণ্য নিয়ে সটকে পড়ছে। ওরা নারীদের তিল তিল করে গড়ে তোলা স্বপ্ন ভাঙ্গছে। এমনই ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশের চোরচক্রের কয়েকজন সদস্য পুলিশের হাতে সম্প্রতি ধরা পড়েছে।

আর তাদের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশে বাসাবাড়িতে চুরির নানা কৌশল প্রকাশ পেয়েছে। ওই চোরচক্রের কয়েকজন সদস্য হলো, বেজপাড়া আনসার ক্যাম্পের পেছন এলাকার মজিবর সরদারের ছেলে মানিক সরদার, আব্দুর রহমান ওরফে রহিমের ছেলে মোহাম্মদ হাসান, রইচ উদ্দিনের ছেলে আল-আমিন, আব্দুল্লাহর ছেলে অভি, নাজির শংকরপুর জিরো পয়েন্ট মোড় এলাকার বাবু মোল্লার ছেলে আশিকুর রহমান ওরফে বাপ্পি। এদের মধ্যে মানিক সরদার, মোহাম্মদ হাসান ও আশিকুর রহমান বাপ্পি সম্প্রতি পুলিশের হাতে আটক হয় এবং তারা কারাগারে রয়েছে।

ডিবি পুলিশ ও কোতয়ালি থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই চোর চক্রের সদস্যরা ক্রোকারিজ ও মশারি নিয়ে ফেরিতে বিক্রির নামে শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ঢুকে পড়ে। এরপর তারা খোঁজ করতে থাকে কোন বাসাবাড়িতে লোক নেই, তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। চিহ্নিত করার পর ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশে দিনের বেলায় বাড়ির সামনে অবস্থান করে ঢোকার পয়েন্টগুলো দেখে রাখে। এরপর রাতের বেলায় তারা ভেন্টিলেটর অথবা গ্রিল ভেঙ্গে তালা দিয়ে রাখা বাড়ির ভেতর ঢোকে। বাইরেও তাদের লোক থাকে পাহারায়। তারা ঘরে ঢুকে মূলত সোনার অলঙ্কার, নগদ টাকা ও বহনযোগ্য মূল্যবান পণ্য (ল্যাপটপ জাতীয়) চুরি করে। তারা দ্রুত চুরিতে পারদর্শী। এই চুরি করা সোনার অলঙ্কার তারা নিজেরা বিক্রি করে না। পরিবারের নারী সদস্যদের মাধ্যমে পরিচিত জুয়েলারিতে চোরাই সোনার অলঙ্কার বিক্রি করা হয়।

এর মধ্যে রয়েছে মানিকের মা, খালা, বোন, বাপ্পির দাদি ও আল-আমিনের স্ত্রী। সূত্র জানায়, চোরচক্রের ৩ জন সদস্য মানিক, বাপ্পি ও হাসানকে তারা ইতোমধ্যে আটক করেছে। এদের মধ্যে বাপ্পি ও মানিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা ফেরিওয়ালার ছদ্মবেশে বাসবাড়িতে কীভাবে চুরি করে তার বর্ণনা দিয়েছে। ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, আটক মানিক ও বাপ্পি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৭টি বাড়িতে চুরির কথা স্বীকার করেছে। এর মধ্যে নতুন খয়েরতলার সাততলার একটি ভবনের পাঁচতলার ফ্ল্যাট থেকে ১৯ ভরি সোনার অলঙ্কার, পুলিশ লাইন্স এলাকায় পুলিশের একজন এএসআইয়ের বাসা থেকে ৭ ভরি সোনার অলঙ্কার, পুরাতন কসবার একজন ব্যাংক কর্মকর্তার বাসা থেকে সাড়ে ১০ ভরি সোনার অলঙ্কার ও বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক এলাকার একজন নারী চিকিৎসকের বাড়ি থেকে ৩৫ ভরি সোনার অলঙ্কার চুরি করার তথ্য পেয়েছেন তাদের কাছ থেকে। পুলিশ জানায়, তারা ইতোমধ্যে বেজপাড়া তালতলা মোড় এলাকার দুটি জুয়েলারি থেকে চোরচক্রের বিক্রি করা চোরাই ২৪ ভরি সোনার অলঙ্কার জব্দ করেছে। এছাড়া যে সকল নারীরা জুয়েলারিতে গিয়ে বিক্রি করতো তাদের মধ্যে ৫ জনকে আটকও করেছে। তবে চক্রের প্রধান আল-আমিন ও তার স্ত্রী শিলা খাতুনকে এখনো আটক করা যায়নি। তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে।