নেতানিয়াহুকে সরিয়ে ক্ষমতায় বসবেন নাফতালি বেনেট?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বেশ বিপাকে রয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টায় রয়েছে বিরোধীরা। ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে বিরোধীরা একটি জোট সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। যদি এই জোট সরকার গঠিত হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একযুগের শাসনের অবসান ঘটবে। কিন্তু ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। সাম্প্রতিক সময়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় বিচার চলছে। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সতর্ক করে বলেছেন, প্রস্তাবিত জোট সরকার দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হবে। কিন্তু বসে নেই বিরোধীরাও। নেতানিয়াহুকে সরিয়ে দিতে বিরোধী দলগুলো ইতোমধ্যেই চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। অপরদিকে নেতানিয়াহু ডানপন্থি রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানিয়েছেন যেন, তারা এই চুক্তির পক্ষে সমর্থন না দেয়।
এদিকে জোট সরকার গঠনের লক্ষ্যে উগ্র -জাতীয়তাবাদী নেতা নাফতালি বেনেট মধ্যপন্থী দলের নেতা ইয়ের ল্যাপিডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে চলেছেন বলে জানা গেছে। রোববার এই চুক্তির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে বেনেটের দল। এই দলের ছয়টি আসন ইসরায়েলে জোট সরকার গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বুধবারের মধ্যেই নতুন সরকার গঠন হতে পারে বলে জানিয়েছেন ল্যাপিড। তিনি বলেন, যদি জোট সরকার গঠনে আমরা সফল হই তাহলে দেশের দীর্ঘ সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে যেতে হবে নেতানিয়াহুকে। ধারণা করা হচ্ছে, জোট সরকার গঠন হলে এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন নাফতালি বেনেট। তাকে নেতানিয়াহুর স্থলাভিষিক্ত করা হতে পারে। ৪৯ বছর বয়সী এই ধনকুবের ইয়ামিনা পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত মার্চে ইসরায়েলে সাধারণ নির্বাচন ভোট অনুষ্ঠিত হয়। এতে জয় পেয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন নেতানিয়াহু। তবে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। চার বছরের মধ্যে দেশটি দু’বার ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। টানা ১২ বছর ধরে ইসরায়েলের ক্ষমতা দখল করে রেখেছেন নেতানিয়াহু। রোববার এক বিবৃতিতে ৭১ বছর বয়সী নেতানিয়াহু বলেন, ‘বামপন্থী সরকার গঠন করবেন না। এ ধরনের সরকার ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।’
নেতানিয়াহু অভিযোগ করেছেন যে, বেনেট জনগণকে ভুল পথে পরিচালিত করছেন। অপরদিকে টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বেনেট জানান, তার দল একটি জোট সরকার গঠনের জন্য আলোচনায় যোগ দেবে। তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু ইয়ের ল্যাপিডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি জাতীয় জোট সরকার গঠনে আমি সবকিছুই করব।’ নেতানিয়াহু কোন ডানপন্থী দল গঠন করার চেষ্টা করছেন না কারণ তিনি ভালভাবেই জানেন যে তা সম্ভব নয়। তিনি পুরো জাতি, পুরো দেশ তার নিজের ব্যক্তিগত অবস্থান পোক্ত করার জন্য পেতে চাইছেন বলে উল্লেখ করেছেন বেনেট। জোটের শর্ত অনুযায়ী, বেনেট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতানিয়াহুর জায়গা নেবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর ৫৭ বছর বয়সী লেপিডকে সে জায়গা ছেড়ে দেবেন। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এমন কোন চুক্তি করা হয়নি। প্রস্তাবিত জোট সরকারে ইসরায়েলি রাজনীতির ডান, বাম এবং মধ্যপন্থী সবারই সন্নিবেশ ঘটবে। এই দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক মতৈক্য না থাকলেও তারা নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে একমত। ১২০ আসনের পার্লামেন্টে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি আসন পেয়েছে বেনেটের দল যা প্রস্তাবিত বিরোধী জোট গঠনে নিশ্চিত সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিতে সক্ষম। শনিবার রাতে নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি বেনেট এবং আরো একটি সম্ভাব্য জোট দলের নেতাকে জোট গঠনের প্রস্তাব দেয়। যাতে করে পালাক্রমে তিনজনই প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। তবে তার সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেননি নেতারা। রোববারও একই প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। ইসরায়েলের নির্বাচন পদ্ধতি অনুযায়ী, সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার শর্ত থাকায় কোন একটি দলের পক্ষে এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন লাভ করা সম্ভব নয়। জোট সরকার গঠনের জন্য ছোট ছোট দলগুলোকেও দরকার হয়। লেপিডকে প্রাথমিকভাবে সরকার গঠনের জন্য ২৮ দিন সময় দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ১১ দিন ধরে গাজা সহিংসতার কারণে এই সময় কমে এসেছে। সহিংসতার কারণে দলটির সম্ভাব্য জোট সহযোগী আরব ইসলামিস্ট রাম পার্টি নিজেদের পিছিয়ে নিয়েছে। ইসরায়েলের শহরগুলোতেও মিশ্র আরব এবং ইহুদী বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর মিলেছে।