বাংলাদেশের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিতে চার বাধা

0

কাজী সোহাগ॥ বাংলাদেশে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিতে চারটি বাধা রয়েছে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল মোবাইল কমিউনিকেশন্স সিস্টেমস এসোসিয়েশনের (জিএসএমএ)। সম্প্রতি জিএসএমএ প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে মোবাইল সমৃদ্ধ ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি অর্জন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। চার কারণের মধ্যে প্রথমে বলা হয়েছে-ফোর-জি মোবাইল কাভারেজ সম্প্রসারণে টেলিকম খাত বিপুল বিনিয়োগ করে ৯৫ ভাগ জনসংখ্যার কাছে গেলেও এই প্রযুক্তি মোবাইল খাতের সার্বিক আয়ের শীর্ষে পৌঁছাতে পারেনি। বাংলাদেশের মোট মোবাইল সংযোগের মাত্র ২৮ ভাগ ফোর-জি ব্যবহার করে। দ্বিতীয় কারণে বলা হয়েছে- এই ফোর-জি কাভারেজ রোল আউট এবং ফোর-জি সেবা ব্যবহারের মধ্যে ব্যবধানের (ইউসেজ গ্যাপ) ইঙ্গিত করে। তৃতীয় কারণটি হলো- এই ইউসেজ গ্যাপের পেছনে সাশ্রয়ী ডিভাইসের অপ্রতুলতা, শিক্ষা ও ডিজিটাল দক্ষতার অভাব, প্রাসঙ্গিকতার অভাব, সেইসঙ্গে সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত উদ্বেগ মূল ভূমিকা রাখছে। সর্বশেষ কারণে বলা হয়েছে-খাত-সুনির্দিষ্ট উচ্চ হারে কর, লাইসেন্সের বিভাজন, তরঙ্গ মূল্য নির্ধারণ এবং তা ব্যবহারের বিধিনিষেধ কাভারেজ সম্প্রসারণে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। চার বাধা তুলে ধরার পাশাপাশি ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির উন্নয়নে দুটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথম সুপারিশে বলা হয়েছে- ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি অর্জনের জন্য কাভারেজ এবং ব্যবহারের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী অবকাঠামো উন্নয়নে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বিত নীতি ও বিধি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ জরুরি। দ্বিতীয় সুপারিশে বলা হয়েছে-ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি উদ্যোগ উদ্ভাবন এবং বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে নীতি গ্রহণে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সঙ্গে পরামর্শসহ বৃহত্তর অংশীদারদের সহযোগিতার জন্য সরকারি নেতৃত্ব জরুরি। জিএসএমএ’র প্রতিবেদনটি বাংলাদেশের মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) এর নিউজলেটার কানেকশনে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে-জিএসএমএ’র প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের কাভারেজ এবং ব্যবহারের প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং কীভাবে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো স্থাপনাকে আরো শক্তিশালী করা যায় সে সম্পর্কে সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে জিএসএমএ’র পাশাপাশি মোবাইল টেলিকম সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির বেশকিছু সমস্যার কথা বলে আসছেন। এমটবের প্রেসিডেন্ট ও রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাবউদ্দিন আহমেদ কানেকশনে মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্প নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবছর বাজেট প্রস্তাবের সময় এলেই মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান-এই বুঝি আবার নতুন করে কোনো কর আরোপ করা হলো। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা এই প্রবণতা লক্ষ্য করছি। নতুন করে কর বৃদ্ধি করা হলে একদিকে তা গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে, অপরদিকে ব্যবসা পরিচালনাকে তা আরো কঠিন করে তোলে। তিনি বলেন, মোবাইল খাতের করের বোঝা এমন একটি পর্যায়ে এসেছে যে অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকেও অত্যন্ত উচ্চ হারে কর্পোরেট কর প্রদান করতে হচ্ছে। যা মূলত ক্ষতিকর পণ্যের প্রস্তুতকারকদের ক্ষেত্রেই করা হয়। আবার কর্পোরেট করও এদেশে মোবাইল খাতের জন্য বেশি। এর বাইরেও এ শিল্পে আরো অনেকগুলো খাত আছে যেখানে কর সংস্কার খুব বেশি জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রায় একই সুরে মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্প নিয়ে মন্তব্য করেছেন এমটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.)। তিনি বলেন, পরিস্থিতি যত খারাপই হোক না কেন আমাদের সবাইকে অতি প্রয়োজনীয় ও জরুরি কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক থাকায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ বা ইন্টারনেট ব্যবহার এখন সবার হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। স্কুলের পাঠ থেকে শুরু করে সব ধরনের আর্থিক লেনদেন বা চিকিৎসা চলছে মোবাইলে। তিনি বলেন, মোবাইল সেবাদাতারা টেলিযোগাযোগ ও দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখলেও এই খাত যতটা ভালো থাকার কথা তা নেই। অতিরিক্ত ভ্যাট-ট্যাক্সের বোঝায় জর্জরিত।