‘সাংবাদিক গ্রেপ্তারে বিমান ‘ছিনতাই’ নাটক, কড়া প্রতিবাদ পশ্চিমা দেশগুলোর

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিরোধী দলকে সমর্থনকারী একজন সাংবাদিক রোমান প্রোতাসেভিচকে গ্রেপ্তার করতে একটি বিমানের গতিপথ পরিবর্তন করে তা অবতরণ করতে বাধ্য করেছে বেলারুশ সরকার। এরপর ওই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। এরই মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নির্বাহীরা এ ঘটনাকে ‘বিমান ছিনতাই’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। একে হতাশাজনক এক কর্মকা- বলে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে রোমান প্রোতাসেভিচকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দাবি করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের। এ নিয়ে সোমবার জরুরি বৈঠকে বসার কথা রয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতাদের।
ওই বৈঠক থেকে বেলারুশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাউসেদা। তিনি দাবি করেছেন, এমন পদক্ষেপ নেয়া হলে বেলারুশের শাসকগোষ্ঠীর আচরণের ওপর বড় রকম প্রভাব ফেলতে পারে।
উল্লেখ্য, গত বছর বেলারুশে বহুল বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তা নিয়ে নিজের মিডিয়াতে ব্যাপকভাবে খবর প্রচার করেছিলেন সাংবাদিক রোমান প্রোতাসেভিচ। তিনি গ্রিসের রাজধানী এথেন্স থেকে রায়ানএয়ার বিমান সংস্থার একটি বিমানে করে তিনি লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বিমানটি বেলারুশের আকাশসীমায় পৌঁছার পর বেলারুশ থেকে বলা হয় ওই বিমানে বোমা আছে। তাই তাকে জরুরি অবতরণ করাতে হবে। চারদিক থেকে বেলারুশের যুদ্ধবিমান রায়ানএয়ারের ওই বিমানটিকে ঘিরে ধরে এবং অতবরণে বাধ্য করে। পরে অবশ্য ওই বিমানে কোনো বোমা পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে বিমানটি থেকে যাত্রীরা নামতেই তাদের মাঝ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ২৬ বছর বয়সী সাংবাদিক রোমান প্রোতাসেভিচকে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, বিমানটির অবতরণ করার কথা ছিল লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে। কিন্তু তা বেলারুশের আকাশসীমায় পৌঁছার পর কর্তৃপক্ষ নাটক সাজিয়ে তা তাদের রাজধানী মিনস্কে অবতরণ করায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, এতে মারাত্মক আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ওই সাংবাদিক। তিনি সহযাত্রীদের বলেছেন, তাকে মৃত্যুদ- পর্যন্ত দেয়া হতে পারে। বেলারুশের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বিমানটি অবতরণ করিয়ে রোমান প্রোতাসেভিচকে গ্রেপ্তারের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কো নিজে। বিমানটি বেলারুশে অবতরণ করিয়ে সেখানে ওই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের পর আবার বিমানটি ছেড়ে দেয়া হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে ৬ ঘন্টা পরে তা ভিলনিয়াসে অতবরণ করে।
উল্লেখ্য, গত বছর আগস্টে বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী হন আলেকজান্দার লুকাশেঙ্কো। ৬৬ বছর বয়সী এই শাসক ১৯৯৪ সাল থেকে দেশ শাসন করছেন। এ সময়ে তিনি ভিন্নমতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করছেন। বিরোধী দলীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতাকে তিনি গ্রেপ্তার করেছেন। অন্যরা পালিয়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে রয়েছেন। ওদিকে আগে থেকেই প্রেসিডেন্ট লুকাশোঙ্কোসহ বেলারুশের কয়েক ডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবরোধ আছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের। এর মধ্যে আছে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দ করা। বিরোধীদের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ চালানোর কারণে এই অবরোধ দিয়েছে তারা।
বেলারুশের নেক্সটা মিডিয়া নেটওয়ার্ক বলেছে, এফআর৪৯৭৮ ফ্লাইটে তাদের সাবেক সম্পাদক রোমান প্রোতাসেভিচ ছিলেন। বিমান অবতরণের পর তাকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষোভ জানিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। বেলারুশের বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের’ অভিযোগ তুলে শাস্তি দাবি করেছে তারা। ইউরোপজুড়ে রাজনৈতিক নেতারা এরই মধ্যে এ ঘটনায় ইইউ ও ন্যাটোর হস্তক্ষেপ চেয়েছে। বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বেলারুশ সরকারকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘নজিরবিহীন’ এই পদক্ষেপের ‘গুরুতর পরিণতি’ হবে। বেলারুশের বিরোধী নেতা সভেতলানা টিকানোভস্কিয়া সাংবাদিক প্রোতাসেভিচের মুক্তি দাবি করেছেন। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর কাছে পরাজিত হন সভেতলানা টিকানোভস্কিয়া। ওই নির্বাচনে ব্যাপকভাবে জালিয়াতি হয় বলে অভিযোগ করে আসছেন তিনি। ওই নির্বাচন এবং তার পরবর্তী সময়ে বেলারুশের বিরোধীদের পক্ষে বড় ভূমিকা রেখেছিল নেক্সটা মিডিয়া। টেলিগ্রাম চ্যানেলের পাশাপাশি টুইটার ও ইউটিউবে তাদের খবর প্রকাশিত হয়। সভেতলানা টিকানোভস্কিয়া জানান, লুকাশেঙ্কো সরকার ২৬ বছর বয়সী রোমান প্রোতাসেভিচের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনার পর ২০১৯ সালে দেশ ছাড়েন তিনি। এরপর নেক্সটা মিডিয়ার মাধ্যমে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের খবর প্রকাশ করেন তিনি। বেলারুশ কর্তৃপক্ষ প্রোতাসেভিচকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করায় দেশে তার মৃত্যুদ- হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সভেতলানা টিকানোভস্কিয়া।
যেভাবে ঘুরিয়ে নেয়া হয়েছে ফ্লাইট
রায়ান এয়ারের এফআর ৪৯৭৮ ফ্লাইটটি রোববার গ্রিসের এথেন্স থেকে লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে যাচ্ছিল। লিথুয়ানিয়া সীমান্তে প্রবেশের অল্প কিছুক্ষণ আগে ফ্লাইটি পূর্ব দিকে মিনস্কের দিকে গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। বিমানে ১৭১ জন যাত্রী ছিলেন বলে গ্রিস ও লিথুয়ানিয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। রায়ান এয়ার বলেছে, বেলারুশ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে বিমানের ক্রুদের বার্তা পাঠানো হয় যে, এতে নিরাপত্তা হুমকিমূলক কিছু রয়েছে এবং তারা ফ্লাইটটি নিকটবর্তী মিনস্ক বিমানবন্দরে ঘুরিয়ে নিতে বলে। ফ্লাইটরাডার২৪ এর ওয়েবসাইটে ফ্লাইটটির পথপরিক্রমা দেখে জানা যায়, যখন সেটি ঘোরানো হয় তখন বিমানটি মিনস্কের চেয়ে ভিলনিয়াসের বেশি কাছে ছিল। রায়ান এয়ার বলেছে, বিমানে তল্লাশি চালিয়ে কিছুই পাওয়া যায়নি। পাঁচ ঘণ্টা পর বিমানবন্দর ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়।