‘যেভাবেই হোক বাড়ি যেতে হবে’

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা মহামারির কারণে সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। জীবন বাজি রেখে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করাটা যেন মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে অনেকে শত অভিযোগ নিয়েও বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। সোমবার গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা গেছে। বেসরকারি চাকরিজীবী মুজিবুর রহমান ঢাকায় মোহাম্মদপুরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন। মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে মাগুরার পথে যাত্রা শুরু করেছেন।
গাবতলী বাস টার্মিনালে মুজিবুর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বাড়ি গিয়ে মায়ের সঙ্গে ঈদ করবো। যেভাবেই হোক বাড়ি যেতে হবে। যতদূর সম্ভব হয় পায়ে হেঁটে যাব, রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স, ট্রাক-বাস, মাইক্রো, মোটরসাইকেলসহ যাই পাই, তাতে উঠে যাব।’ এভাবেই ভেঙে ভেঙে মাগুরা পৌঁছাবেন বলে জানান তিনি। ভাগনিকে নিয়ে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছেন বেসরকারি চাকরিজীবী নাজমুল হুদা। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভর্তি ব্যাগ মাথায় নিয়ে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কলাবাগান থেকে গাবতলী পর্যন্ত বাসে করে আসলেও দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে বাড়ি পৌঁছাবেন, এ উদ্দেশে বেরিয়েছেন ঘর থেকে। নাজমুল হুদা বলেন, ‘অফিস ছুটি হয়ে গেছে, ঢাকায় এখন আর কোনো কাজ নেই। ভাগনিকে বাড়ি নিয়ে যেতে হবে। এ কারণে জরুরিভাবে বাড়ি যেতে হচ্ছে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রনি। ঢাকায় এক বন্ধুর বাসায় থাকেন। বন্ধু বাড়ি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তিনিও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে জামালপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। রনি বলেন, ‘ঢাকায় আত্মীয়-স্বজন নেই। বন্ধুর বাসায় থেকে পড়াশোনা করি। সে আগামীকাল বাড়ি চলে যাবে। এ কারণে ঝুঁকি নিয়েই আমি পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি যেতে হবে। এতে করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে। তারপরও উপায় না থাকায় বাড়িতে যেতে হচ্ছে।’ রাস্তায় ভেঙে ভেঙে যা পান, তাই ধরে বাড়িতে পৌঁছাবেন বলে জানান তিনি। ভবন নির্মাণের কাজ করেন আরফাজ। সাইট বন্ধ থাকায় সকল শ্রমিকই বাড়ি চলে গেছে। এ কারণে ঢাকায় তাকে একাই থাকতে হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে কুষ্টিয়া যাওয়ার উদ্দেশে গাবতলীতে বসে অপেক্ষা করছিলেন।
তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কাজের সাইট বন্ধ, সকলে বাড়ি চলে গেছে। বর্তমানে খাওয়া-দাওয়া-থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে কুষ্টিয়ায় বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘সব ধরনের পরিবহন বন্ধ থাকায় কুষ্টিয়া পর্যন্ত যাওয়াটা অনেক কঠিন এবং কষ্টের। কিভাবে যাব, কোথায় বাস পাব কিছুই বুঝতে পারছি না। যেকোনো মাধ্যমে যেতে হবে। সে উদ্দেশ্যেই ঘর থেকে বেরিয়েছি। ভাড়া বেশি দিতে হলেও যাই পাব তাতেই রওনা দেব। তাদের মতো এমন হাজারো মানুষ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফোটাতে জীবন বাজি রেখে যেকোনো মূল্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে চান।