করোনায় মৃতের সৎকার, বললেই হাজির তাবলিগ জামাত

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ মৃতের সৎকার করছেন তাবলিগ জামাতের এই সদস্যরাধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ মৃতের সৎকার করছেন তাবলিগ জামাতের এই সদস্যরা
অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপাটি শহরে ৯জন করোনা রোগীর সৎকারের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় জেএমডি গউছ বলেন, গত বছর ভারতে করোনা মহামারি ছড়ানোর জন্য তাবলিগ জামাতকে দায়ী করেছিলেন অনেকে। এখন সবাই আমাদের প্রশংসা করছেন।
তাবলিগ জামাতের একজন সক্রিয় সদস্য গউছ। একই মানসিকতার তাবলিগ সদস্যদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন কোভিড-১৯ জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি। এটি তিরুপাটি ইউনাইটেড মুসলিম অ্যাসোসিয়েশনের অধীনস্ত একটি সংগঠন। এর লক্ষ্য হলো সৎকারসহ মানুষের করোনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করা।
ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াতে চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন অবস্থায় অনেক পরিবার সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা নিজেদের স্বজনের সৎকার করতে দ্বিধায় ভুগছে। আর এতিম ও নিঃস্বদের সৎকারের জন্য কেউই নেই।
গউছ প্রতিদিন ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। ফোনে অনেকেই তাদের স্বজনদের সম্মানজনক সৎকারের জন্য তাদের কাছে অনুরোধ করেন।
তার মতে, গত মাসে প্রতিদিন তাদের দল অন্তত ১৫ টি সৎকার করেছে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে। তিনি বলেন, প্রথম ঢেউয়ে মৃত্যু অনেক কম ছিল, বেশিরভাগ বৃদ্ধদের মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এবার যারা মারা যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগ তরুণ। সৎকারের আগে শোকাহত স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়া কঠিন পড়েছে।
৬০ সদস্যকে তিনটি দলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি টিম প্রতিদিন অন্তত চার-পাঁচটি সৎকারের দায়িত্বে থাকে।
গউছ বলেন, আমরা মৃতের ধর্ম রীতি অনুসারে সৎকার করি। যদি মৃত হিন্দু হন তাহলে আমরা এক টুকরো কাপড় ও ফুল রাখি। খ্রিস্টানদের আমরা মরদেহ কফিনে রাখি এবং গির্জায় প্রার্থনার আয়োজন করি। মুসলিম মৃতের ক্ষেত্রে আমরা জানাজার নামাজ আয়োজন করি।
তিনি জানান, তারা নিজেরাই পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই)-এর ব্যবস্থা করেছেন। তাবলিগ জামাত থেকেও কিছু পিপিই পাওয়া গেছে।
তার মতে, পুলিশ, পৌরসভা ও প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর এই সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা করছে।
তারা জানায়, এখন পর্যন্ত ৫৩৬ জনের সৎকার করেছে তাদের সংগঠন। এদের মধ্যে প্রথম ঢেউকালীন ১৩৪ জন এবং অবশিষ্ট চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়।
কয়েকজন সদস্য মরদেহ নির্দিষ্ট শ্মশান বা কবরস্থানে নেওয়ার ব্যবস্থা তদারকি করেন। গউছ জানান, দলের সব স্বেচ্ছাসেবক পেশায় অটো চালক, রেস্তোরাঁর শ্রমিক ও দিনমজুর। করোনায় তাদের কাজ বন্ধ রয়েছে।
গউছ আরও জানান, তাবলিগের সদস্য ও মুসলিম না হলেও ছয় তরুণ তাদের সঙ্গে কাজ করছেন। তাদের কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে ওই তরুণরা।
ভুল উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত হতে কেমন লাগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই থেকে তিনজন মানুষ ২০২০ সালের মার্চে তাবলিগে অংশ নিয়েছিলেন। পরে মানুষ আমাদের সবাইকে দায়ী করেছিল। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। মানুষ অনেক কিছুই বুজতে পারছে। আমি আশা করি, ভ্রাতৃত্ববোধ ও সমবেদনায় আমরা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠব। সূত্র: দ্য কুইন্ট