সব হাসপাতালে আইসিইউ সক্ষমতা বাড়াতে হবে

0

করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কা সামলাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম এমনকি নাজেহাল অবস্থা হয়েছে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। এই ভয়াবহ হন্তারক ব্যাধির তীব্র সংক্রমণে রোগীর প্রবল শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, সংক্রমিত হয় ফুসফুস। ফলে, সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের আইসিইউ সাপোর্ট তথা অক্সিজেন না পেলে মৃত্যু মুখে পতিত হয় রোগী। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের সরকারি-বেসরকারি অধিকাংশ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনুপাতে আইসিইউ বেড নেই, এমনকি রাজধানী ঢাকাতেও। অনেক হাসপাতালে কিছু আইসিইউ বেড থাকলেও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং দক্ষ চিকিৎসকসহ জনবল সঙ্কটে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে মুমূর্ষু রোগীর জীবন সংশয় হয়। অধিকাংশ হাসপাতালে এমনকি কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। সংকট মুহূর্তে অক্সিজেনের সাপ্লাইও অপ্রতুল। নেই হাইফ্লো অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এক বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সব জেলাসদর হাসপাতালে আইসিইউ বেড চালু এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাইফ্লো অক্সিজেনের সরবরাহে নির্দেশ দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি অদ্যাবধি। এর জন্য গত জাতীয় বাজেটে বরাদ্দও রাখা হয়েছিল। দুঃখজনক হলো, এসব কেন বাস্তবায়ন হয়নি তার সদুত্তর নেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতি ৫০ বেডের জন্য অন্তত ৩টি এবং প্রতি ১০০ বেডের হাসপাতালের জন্য অন্তত ৫টি আইসিইউ বেড আবশ্যক। বাংলাদেশের অবস্থান এর চেয়ে অনেক পেছনে।
অথচ, বাস্তবতা হলো, বিশ্বের দেশে দেশে ইতোমধ্যে আঘাত হানতে শুরু করেছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তথা সংক্রমণ। নতুন ভ্যারিয়েন্টে খুব দ্রুত সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। বাধ্য হয়ে সীমিত পর্যায়ে হলেও আরোপ করতে হচ্ছে কঠোর বিধিনিষেধসহ লকডাউন। আশঙ্কার খবর হলো, বাংলাদেশেও করোনায় শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েছে। এমতাবস্থায় সরকার গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে তরল অক্সিজেন প্লান্ট বসানোসহ এক গুচ্ছ সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে হাসপাতালগুলোতে গত মার্চে সংক্রমণের শুরুতে যেসব ঘাটতি ছিল তা চিহ্নিত করে পরামর্শক কমিটি অনতিবিলম্বে পূরণ করতে বলেছে।
করোনা মহামারীর এই চরম দুঃসময়ে নতুন দুই হাজার চিকিৎসক এবং পাঁচ হাজার ৫৪ সিনিয়র স্টাফ নার্স জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। বিশেষ করে সেই সময়ে যখন রাজধানীসহ সারাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। একই সঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক রোগী সামলাতে গিয়ে সরকারি-বেসরকারি করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। যে কারণে প্রায়ই ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। বিশেষ করে করোনা রোগের চিকিৎসায় অপরিহার্য পিপিই-মাস্ক-গ্লাভসসহ প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রীর সঙ্কট এখনও বিদ্যমান। সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের ফলে পর্যায়ক্রমে অবশ্য এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে। পিপিই-মাস্ক উৎপাদনে এগিয়ে এসেছে পোশাক শিল্প কারখানাগুলো। ইতোমধ্যে নিবেদিতপ্রাণ একাধিক চিকিৎসক ও নার্সের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরও আছে, যা দুঃখজনক। সে অবস্থায় চিকিৎসক ও নার্সদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান বাঞ্ছনীয়। একই সঙ্গে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেশনসহ তরল অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করা জরুরি। সরকার জরুরিভিত্তিতে অন্তত ৭০টি সরকারী হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে তরল অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপনসহ হাইফ্লো নেজাল মাস্ক দেয়া নিশ্চিত করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।