দুর্যোগ মোকাবেলায় একলা চলো নীতি কাম্য নয়

0

করোনা মহামারির কারণে সারা বিশ্বে ৩০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ১৪ কোটির বেশি মানুষ। বাংলাদেশেও সাড়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত হয়েছে সাত লাখের বেশি মানুষ। করোনায় শুধু যে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বা মারা যাচ্ছে তা-ই নয়, দেশের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সাধারণ ছুটি, লকডাউন ও বিধি-নিষেধের কারণে উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তার ফলে বহু শ্রমিক বেকার হয়েছেন। শুধু গণপরিবহন বন্ধ হওয়ায় ৭০ লাখের বেশি শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন ছোটখাটো কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক, দিনমজুর এবং হকার বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। পর্যাপ্ত খাদ্য বা অর্থ সাহায্য ছাড়া পরিবার-পরিজন নিয়ে তাঁদের পক্ষে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী নিম্ন আয়ের ৩৬ লাখ পরিবারকে অর্থ সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে ব্যয় হবে এক হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঈদ-উল-ফিতরের আগে এক কোটি ৯ হাজার ৯৪৯টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার। সে জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। দুস্থদের সহায়তার জন্য প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের অনুকূলে সাড়ে ১০ কোটি টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তদুপরি খোলাবাজারে সীমিত আকারে কম দামে পণ্য বিক্রিসহ অন্যান্য সামাজিক কর্মসূচিও চালু রয়েছে। দুস্থদের সহায়তা শুরু না হলেও এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নগণ্য ব্যতিক্রম ছাড়া এনজিওগুলো এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নীরব এবং তাদের নীরবতার কোন ব্যখ্যা নেই। অপরদিকে, সরকারও তাদের কিছু বলছে না। সবাই জানে, এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা মহামারির কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার দ্রুত বাড়ছে। বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির সম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেশের প্রায় এক কোটি ৬৪ লাখ লোক নতুনভাবে দারিদ্র্যসীমার মধ্যে ঢুকে পড়েছে। বহু শ্রমিক বেকার হয়েছে। প্রান্তিক বহু মানুষ তাদের জীবিকা অর্জনের একমাত্র পথটি হারিয়েছে। অনেকে তাদের সামান্য সঞ্চয়, এমনকি ক্ষুদ্র পুঁজিটুকুও খরচ করে ফেলেছে। এ অবস্থায় শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের এসব মানুষকে রক্ষায় দ্রুত বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। মালিক, শ্রমিক ও সরকারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সরকার এর আগে শ্রমিকদের রক্ষায় বেশ কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল। জানা যায়, তার একটা বড় অংশেরই সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সহায়তা কর্মসূচির অপচয় ও অপব্যবহার হওয়ার খবরও গণমাধ্যমে এসেছে। এবারও তা যাতে না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। সরকারি ত্রাণ তৎপরতার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের এবং এনজিওগুলোকে এই দুঃসময়ে অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। বড় শিল্প গ্রুপ ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোকেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এদের সকলকে মানুষের পাশে নামানোর দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। দুর্যোগ মহামারীকালে সরকারের একলা চলো নীতি বুমেরাং হতে পারে বিষয়টি তাদের ভেবে দেখতে হবে।