বেনাপোল স্থলবন্দরে চুরি বেড়েছে কর্মকর্তা অভিযুক্ত, তদন্তে কমিটি

0

শার্শা (যশোর) সংবাদদাতা ॥ বেনাপোল স্থলবন্দরের বিভিন্ন শেড থেকে কোটি কোটি টাকার পণ্য চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন তরফদারের নেতৃত্বে বন্দরে পণ্য চুরির একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এই অভিযোগে বন্দর কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করেছে।
বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরের ১ নম্বর শেড থেকে ১১০২ টন উন্নতমানের শার্টিং ও প্যান্টিং চুরি করা হয়েছে। যার আমদানিকারক এইচবি ইন্টারন্যাশনাল , বেনাপোল , কাস্টমস মেনিফেস্ট নং ৩৬৩৪০/১ । পণ্যটি মিথ্যা ঘোষণার অভিযেগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জব্দ করে। পরে চালানটি নিলামে বিক্রি করা হয় ৬১ লাখ টাকায়। নিলামকারী বেনাপোলের নোভা এন্টারপ্রাইজ পণ্যচালানটি ডেলিভারি নিতে গিয়ে ১১০২ কেজি চুরি যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন। নিলামকারী তাৎক্ষণিক বন্দরের উপপরিচালক মামুন তরফদারকে জানালে তিনি নিলামক্রেতা মোহাম্মদ আলী খানকে হুমকি দিয়ে বন্দর থেকে বের করে দেন বলে অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে খুলনার আমদানিকারক সান ওয়ার্ল্ড ট্রেড ভারত থেকে ১৯ লাখ ৯১ হাজার ৩২০ কেজি ব্রোকেন স্টোন (পাথর) আমদানি করে। যা বন্দরের টিটিআইতে সংরক্ষণ করা হয়। যার কাস্টমস মেনিফেস্ট নং -২৬৪১৩/১৭, ২৪৫১৬/১৩,২৫৫৩৬/১০,২৭৩০৮/৭ পণ্য চালানটি কাস্টমস এর ডেপুটি কমিশনার (আইআর এম) এর নেতৃত্ব ইনভেন্ট্রি করে ১৭ লাখ ৯১ হাজার ৩২০ কেজি কম পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দর কর্তৃপক্ষকে পত্র প্রদান করেছে। যার স্মারক নম্বর ৫ম/২০(০৮)এলসি/নিলাম/বেনা-২০২০ /৫৮৭৬(১-৮)
নিলামকারী বেনাপোলের নোভা এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ আলী খান জানান, বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন তরফদারের নেতৃত্বে বন্দরে একটি শক্তিশালী চোর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। তিনি গত ২ বছর বেনাপোলে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বড় ধরনের পণ্য চুরির ঘটনা ঘটছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বন্দরের প্রতিটি গেটে নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বে থাকার পরও অবাধে প্রবেশ করছে বহিরাগতরা। বন্দর একটি বন্ডেড কেপিআইভুক্ত এলাকা স্বত্ত্বেও কীভাবে বন্দরে অবৈধ লোকজন প্রবেশ করছে, তা নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ’র কোনো মাথা ব্যথা নেই।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, বন্দর থেকে পণ্য চুরি হচ্ছে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। চুরি যাওয়া মালামালের কোনো ক্ষতিপূরণ দেন না বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া বন্দরের উপ পরিচালক মামুন তরফদার ওপারে ভারতের বন্দর কর্তৃপক্ষকে প্রতিদিন কত ট্রাক পণ্য আমদানি হবে তা অবহিত করার পর ভারত থেকে সেই সংখ্যক ট্রাক পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। ফলে ওপারে হাজার হাজার ট্রাক পন্য আটক পড়ে থাকে।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান বলেন, বন্দরে কতট্রাক পণ্য আমদানি হবে সেটি নিয়ন্ত্রণ করে মামুন তরফদার, তিনি বন্দরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তার সাথে কাস্টমস ও রেল কর্তৃপক্ষের মধ্যে রশি টানাটানি হচ্ছে। ফলে প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃস্টি হচ্ছে।
এদিকে বন্দরের উপপরিচালক মামুন তরফদার বলেন, চুরির বিষয়টি নিয়ে উত্তর দেবেন ডাইরেক্টর , চিঠি সাইন করেছেন ডাইরেক্টর। আমি আপনার উওর দিতে বাধ্য নই।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল জলিল এ ব্যাপারে বলেন, বন্দর থেকে পণ্য চুরির অভিযোগ পাওয়ার পর বন্দরের উপপরিচালক মেহেদী হাসানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ২ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, বন্দরের অধিকাংশ সমস্যা আমরা বন্দরের বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে নিয়ে সমাধান করেছি। মামুন তরফদারের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো নেই। টিটিআই থেকে ব্রোকেন স্টোন ও ১ নং শেড থেকে উন্নত মানের মূল্যবান ফেব্রিক্স চুরি গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বন্দরকর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি।