কপোতাক্ষ নদে লোনা পানির অনুপ্রবেশ কৃষকদের চরম দুরবস্থা

0

কে এম আনিছুর রহমান,কলারোয়া(সাতক্ষীরা) ॥ কপোতাক্ষ নদে একপ্রকার হঠাৎ করেই লোনা পানির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এতে স্থানীয় কৃষি-প্রাণ বৈচিত্রের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে । এরই মধ্যে সেচের পানির অভাবে ফসলের ক্ষেত ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া লোনা পানি ঢোকায় পঁচতে শুরু করেছে নদে জমাট বেঁধে থাকা কচুরিপানা।
এলাকাবাসী জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়া ও যশোর জেলার কেশবপুরসহ নদীর তীরবর্তী বসবাসরত হাজার হাজার পরিবার কৃষি জমির সিংহভাগ পানির চাহিদা মেটে কপোতাক্ষ নদ থেকে। এক মাসেরও বেশি হলো কপোতাক্ষ নদে হঠাৎ করেই লোনা পানির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এতে কপোতাক্ষের ওপর নির্ভরশীল মানুষ পড়েছেন সেচ সংকটে। কৃষি কাজ, মিল, ছোটবড় কারখানা ও গবাদিপশু পালনে মিষ্টি পানির সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ জানান, হঠাৎ নদীতে লোনা পানি আসায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পরিবার ও কৃষি কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার মানুষ। কৃষি কাজে কপোতাক্ষ নদের পানি ব্যবহারে অভ্যস্ত কৃষকদের এখন চরম দুরাবস্থা।
স্থানীয় চাষি জয়দেব সাহা জানান, একদিকে অনাবৃষ্টিতে পুকুর জলাশয় গুলো শুকিয়ে গেছে। অন্যদিকে ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলসহ সেচ কার্যে ব্যবহৃত মোটর ও স্যালোমেশিনে চাহিদা অনুযায়ী পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কপোতাক্ষ নদীর পানি আগে সব কাজে ব্যবহার করলেও এখন নদীতে লোনা পানি আসায় কাজ ব্যাহত হচ্ছে। পানির অভাবে ইরি ধানের জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। বিশাখা তপন সাহা জানান, আমরা নদীর তীরবর্তী বসবাস করায় কপোতাক্ষ নদের ওপরই নির্ভরশীল শতকরা ৯০ জন মানুষ। নদীতে লবণাক্ত পানি আসায় পশু পালন, নিজেদের গোসল, পরিবারের রান্নাসহ কোনো কাজ করেতে পারছি না। কচুরিপানা পঁচে পানি দিন দিন দুর্গন্ধ হয়ে উঠছে। লবণাক্ত পানি গরু-ছাগলকে খাওয়ালে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।
জয়নগরের ধান চাষি স্বরজিত দাস জানান, নদীতে লোনা পানি এসে ইরি ধানসহ পাট, পানের বরজ ও সবজি আবাদে সেচ কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ধানের ফলন বিঘাতে ২২-২৫ মণ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যায়ে সেচের পানির অভাবে ধানের রোগ বালাইয়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। পানির নানামুখি সংকটের জন্য এখানকার কৃষদের লোকসান গুণতে হতে পারে।
সবজি চাষি কার্তিক মুখার্জী জানান, আড়াই বিঘা জমিতে সবজি আবাদ করেছি। নদীতে লোনা পানি আসায় সবজির জমিতে সেচ দিতে পারছি না। যার কারণে চাষকৃত তরকারির আবাদে ভালো ফলন পাচ্ছি না। প্রচণ্ড রোদের তাপে দুপুরে চারা নেতিয়ে পড়ছে।
পান চাষি হারান ঘোষ বলেন, পানের বরজে সেচের অভাবে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। লোনা পানি সেচের জন্য অনুপযোগী হওয়ায় বরজে সেচ দিতে পারছি না। কাট ফাটা রোদে পান ছোট হয়ে যাচ্ছে, পানের গাছও মারা যাচ্ছে।
কপোতাক্ষে লোনা পানি অনুপ্রবেশের বিষয়ে গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ বলেন, জোয়ার ভাটার প্রাকৃতিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া ও নদীর তলদেহ ভরাট হওয়ার কারণে সমুদ্রের লোনা পানি অনেক বেশি অভ্যন্তরে চলে আসতে পারে। একইসঙ্গে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এটি জলবায়ু পরিবর্তনের অশনি সংকেত নির্দেশ করে।