ভৈরব খননকাজে পুনঃটেন্ডার আহ্বানে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গড়িমসি

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবহেলা ও সময় ক্ষেপণের কারণে ভৈরব নদ খনন কাজের সাথে যুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। অথচ এখনও পর্যন্ত নতুন করে পুনঃটেন্ডারের উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। কবে নাগাদ নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করে কার্যাদেশ দেওয়া হবে সে বিষয়েও স্পষ্ট করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। যশোরের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীও পুনঃটেন্ডার বিষয়ে সুস্পষ্ট করেননি কবে নাগাদ ফয়সালা হবে ।
সূত্র মতে, চলতি বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল্লাহ যশোরের ভৈরব নদ খনন কাজ পরিদর্শন শেষে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করার নির্দেশ দেন। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদকাল বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়। এরপর থেকে তিনি দ্রুত পুনঃটেন্ডারের মাধ্যমে খননকাজ শুরু করার জন্য যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের সুপারিশ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠালেও আজ পর্যন্ত পুনঃটেন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে বহুল প্রত্যাশিত ভৈরব নদ খননকাজের অগ্রগতি এখন থমকে আছে।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ২০১৬ সালে ২৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদী ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের’ কাজ শুরু হয়। এ প্রকল্পের আওতায় এ অঞ্চলের মোট ৯২ কিলোমিটার নদ খনন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদের উজান ও ভাটির ৮০ কিলোমিটারের বেশি খনন কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। জটিলতা চলছে শহরের নীলগঞ্জ থেকে দড়াটানা হয়ে বিরামপুর পর্যন্ত কাজ নিয়ে। সে জটিলতা গত প্রায় দুই বছর যাবৎ চলমান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের শত নির্দেশ ও উপদেশও কোন কাজে আসছে না।
সূত্র জানায়, যশোরের আলোচিত ভৈরব নদ খননে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ শহরের নীলগঞ্জ থেকে কাঠেরপুল হয়ে বিরামপুর অংশের প্রায় দশ কিলোমিটার নিয়ে বিপাকে পড়েন। পাঁচ দফা দরপত্র আহ্বানের পর ১১ কোটি ১৬ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৫ টাকা ব্যয়ের একটি অংশের কাজ পান মেসার্স এসএস এন্ড এমটি (জেভি)। এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা গোপালগঞ্জ শহরের পাঁচুরিয়া এলাকার মধুমতি সুপার মার্কেট। অপর অংশের কাজ পান ঢাকার মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশন। তিনটি প্যাকেজে তাদের খননের জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা।
কিন্তু শুরু থেকেই এ কাজ নিয়ে তারা ব্যাপক টালবাহানা করতে থাকে। তাদের অংশের খননের কাজ বন্ধ ছিল। বার বার তাগিদ দেয়ার পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কোন গুরুত্ব দেয়নি। সর্বশেষ গত ১৪ মার্চ ভৈরব নদ খনন পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল্লাহসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এসময় তারা খননের অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ও মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশনের কার্যাদেশ বাতিল করার নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু কার্যাদেশ বাতিল করলেও এখনো পর্যন্ত পুনঃটেন্ডারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোর।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশনের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়েছে। এখন নতুন ঠিকাদার নিয়োগের জন্য পুনঃটেন্ডারের কাজ চলছে। যে কোনদিন টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তবে কবে নাগাদ হবে সে বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে কিছুই বলতে পারেননি। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ভৈরব খনন কাজের গতি কমেছে। তবে মেসার্স এসএস এন্ড এমটি (জেভি) ধীর গতিতে হলেও তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।