ব্যয় মেটাতে ১২০০ কোটি টাকা বাজেট সহায়তা চায় বিজেএমসি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল গত বছরের ৩০ জুন গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ফলে এ মিলগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) বর্তমানে কোনো আয়ও নেই। তবে বিজেএমসির প্রধান কার্যালয়সহ মিলগুলোর বেশকিছু দায় রয়েছে গেছে। আর এসব দায় পরিশোধ ও পরিচালন ব্যয়ের জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ সচিববের কাছে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি লিখে এ সহায়তা চেয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বস্ত্র) ও সচিবের দায়িত্ব পালনরত মোহাম্মদ আবুল কালাম এনডিসি বণিক বার্তাকে বলেন, ২৫টি পাটকল গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের আওতায় বন্ধ করা হলে অধিকাংশ শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। এর পরও কিছু শ্রমিকের পাওনা এখনো রয়ে গেছে। এগুলো পরিশোধ এবং বিজেএমসির কিছু দায় ছিল, সেগুলো পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া আগামীতে পরিচালন ব্যয়েও কিছু সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন পাটকলগুলোর শ্রমিকদের চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার আওতায় পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে। এ জন্য এরই মধ্যে ৩ হাজার ৫২১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যেসব শ্রমিকের পাওনা ২ লাখ টাকার মধ্যে তাদের নগদ অর্থে পরিশোধ করা হচ্ছে। যাদের পাওনা ২ লাখ টাকার বেশি তাদের অর্ধেক নগদ অর্থে, বাকি অর্ধেক তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে পরিশোধ করা হচ্ছে।
নগদ অর্থের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে ৯২ দশমিক ৯৫ শতাংশ শ্রমিককে পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা হতে সঞ্চয়পত্র ইস্যু চলমান রয়েছে। ২৫টি পাটকলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী কর্মরত শ্রমিকের সমুদয় পাওনা এবং অবসরপ্রাপ্ত ৮ হাজার ৯৫৪ জন শ্রমিকের সাকল্য পাওনা পরিশোধ অব্যাহত রয়েছে।
বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বলছে, এছাড়া বিজেএমসির অন্যান্য দায়দেনা ও পরিচালন ব্যয় বাবদ ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের দায় বাবদ ৩৫৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। কাঁচাপাট সরবরাহকারীদের পাওনা বাবদ (আদমজী জুট মিলের পাওনাদিসহ) ২৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গ্যাস-বিদ্যুৎ পরিষেবা বাবদ দায় ৪৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ভ্যাট, ট্যাক্স, ভূমিকর বাবদ সরকারি দায় ৫১ কোটি ২২ লাখ টাকা। স্টোর সরবরাহ, ক্যাটারিংসহ অন্যান্য দায় বাবদ ৭৬ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে সংস্থার কোনো আয় না থাকায় বিজেএমসি ও মিলগুলোতে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি বাবদ ১৮২ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। এছাড়া বদলি শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি বাবদ ৩০৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ না পাওয়া গেলে তা আগামী অর্থবছরে প্রয়োজন হবে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছরে ১ হাজার ২৬৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বা অনুদান হিসেবে বরাদ্দ প্রদানে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
চিঠিতে আরো বলা হয়, সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী—এ চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পাটকলগুলোর অনুকূলে ৯৭৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে। তবে এ ঋণের বিষয়ে চিঠিতে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে বিজেএমসির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রউফ বণিক বার্তাকে বলেন, বিজেএমসি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকগুলোও সরকারি। তাই বিজেএমসি, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী অর্থবছরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে সাধারণত এসব ক্ষেত্রে ঋণের টাকা বুক অ্যাডজাস্টমেন্ট (সম্পদ ও দায়ের সঙ্গে সমন্বয়) হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও বুক অ্যাডজাস্টমেন্ট হতে পারে। তবে সেটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে।
জানা গেছে, সরকারি সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান এবং পাট খাত পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি মিলে কর্মরত সব স্থায়ী শ্রমিকের গ্র্যাচুইটি, পিএফ ও ছুটি নগদায়নসহ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার মাধ্যমে চাকরি অবসানপূর্বক উৎপাদন কার্যক্রম ২০২০ সালের ৩০ জুন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শ্রমিকদের আর্থিক দুরবস্থা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ওই ২৫টি মিলের ২৪ হাজার ৬০৯ জন স্থায়ী কর্মরত শ্রমিকের সমুদয় পাওনা বাবদ প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং ২০১৩ সালের পর হতে অবসরপ্রাপ্ত ৮ হাজার ৯৫৪ জন শ্রমিকের সাকল্য পাওনা বাবদ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকাসহ মোট প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা ও সুরক্ষার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্রত্যেকের পাওনার ৫০ শতাংশ নগদে এবং অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র আকারে পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে যেসব শ্রমিকের পাওনা ২ লাখ টাকার মধ্যে তাদের পুরোটাই নগদ অর্থে পরিশোধ করা হচ্ছে।
এছাড়া বিজেএমসির অন্যান্য দায়-দেনা রয়েছে ৭৩৬ কোটি টাকা, যা আগামীতে পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এদিকে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী—এ চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পাটকলগুলোর অনুকূলে বিজেএমসির ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৭৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ বিষয়ে আগামী অর্থবছর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে বিজেএমসি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল সরকারিভাবে বন্ধ হলেও বেসরকারি পর্যায়ে ইজারার মাধ্যমে বন্ধ এসব পাটকল চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিজেএমসির বন্ধ মিলগুলো ভাড়াভিত্তিক ইজারা পদ্ধতিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পুনরায় চালুর বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) এসএম সেলিম রেজাকে এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। নয় সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিজেএমসির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রউফ। কমিটি এরই মধ্যে সরকারি কর্তৃত্ব রেখে বন্ধ পাটকলগুলো ইজারা প্রদানের নীতিমালা ও শর্ত চূড়ান্ত করেছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে শিগগিরই ইজারা-সংক্রান্ত দরপত্রে যাবে বিজেএমসি কর্তৃপক্ষ।