বিশ্বে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে চায় কাতার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রফতানিতে বর্তমানে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার। ২০৫০ সাল পর্যন্ত এ অবস্থান ধরে রাখতে চায় তারা। এরই অংশ হিসেবে বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও এলএনজি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে মরিয়া দেশটি। মধ্যপ্রাচ্যে এলএনজি উৎপাদন বৃদ্ধি কার্যক্রমকে গতিশীল করতে এরই মধ্যে কাতারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইরানও। সেদিক থেকে এ অঞ্চলে এলএনজি উৎপাদন ও এর বাণিজ্যে কাতার-ইরান সম্পর্ক গত কয়েক বছর থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
তবে আগামী দশকগুলোতে এলএনজির বাজারে রফতানিকারক দেশ হিসেবে নিজেদের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে উৎপাদন বাড়াচ্ছে কাতার। এর পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর চাপ বাড়াতে এলএনজির দাম আরো কমাতে চাচ্ছে দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পেট্রোলিয়াম সংস্থা কাতার পেট্রোলিয়াম। গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে এলএনজির বাজারে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার প্রতি নজর দিচ্ছে দেশটি। খবর রয়টার্স ও দ্য পেনিনসুলা।
এদিকে, এলএনজি রফতানির বাজারে কাতারের প্রতিযোগী দেশগুলোকে প্রতিনিয়ত এক ধরনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। বৈশ্বিক বাজারে এলএনজির দরপতনের ধারাবাহিকতা থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করছে প্রতিদ্বন্দ্বীরা। তবে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে মরিয়া কাতার। এ লক্ষ্যে প্রথম ধাপে ২০২৬ সালের মধ্যে এলএনজির বার্ষিক উৎপাদন ৪০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। ওই সময়ের মধ্যে প্রতি বছর ১১ কোটি টন এলএনজি উৎপাদন করবে বলে জানিয়েছে তারা। সরকারি প্রচেষ্টায় একক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘নর্থ ফিল্ড এলএনজি’র কার্যক্রম চালু এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর এলএনজি উৎপাদন কার্যক্রমকে দ্বিতীয় ধাপে সম্প্রসারণের প্রত্যাশা করছে কাতার পেট্রোলিয়াম। এরই অংশ হিসেবে ২০২৭ সালের মধ্যে এলএনজি সক্ষমতা বাড়িয়ে বছরে ১২ কোটি ৬০ লাখ টন উৎপাদনের নতুন পরিকল্পনা ঘোষণা করছে দেশটি। এতে করে জাপান-দক্ষিণ কোরিয়ার এলএনজির সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে কাতার।
এদিকে, আমিরাতভিত্তিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘ক্রেডিট সুইস’-এর বিশ্লেষক সোল কভোনিক বলেন, কাতার চাচ্ছে তার প্রতিযোগীদের এলএনজির সরবরাহ কমিয়ে আনতে। তাদের এ অবস্থান দুবছর ধরে বৈশ্বিক এলএনজির চুক্তিমূল্যের নিম্নগামিতার সহায়ক। এর ফলে এলএনজি বাজারে অন্য প্রতিযোগীরা কিছুটা পিছিয়ে গেছে।
কাতারের এলএনজি বাণিজ্য সম্প্রসারণের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত আমদানিকারক হিসেবে বিশ্ববাজারে দেশটির শীর্ষ অবস্থানকে আরো সুসংহত করবে বলে মনে করছে লন্ডনভিত্তিক আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মার্কিট। সংস্থটির বিশ্লেষক চোঙ জি জিং বলেন, এলএনজি বাজারে কাতারের ঘোষণা অন্য প্রতিযোগীদের উৎপাদনে আগ্রহী করে তুলবে। কাতার পেট্রোলিয়াম সংস্থার উচিত রফতানি বাজারে তাদের কঠোর মনোযোগ নিবদ্ধ করা, যাতে করে একটা দীর্ঘ সময় বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। কারণ এতে করে এলএনজির বাজারে অন্যদের প্রতিযোগিতামূলক সুযোগ বৃদ্ধি করবে।
মূলত, বৈশ্বিক এলএনজি সরবরাহে ৫ শতাংশ দেশের চাহিদা পূরণে অবদান রয়েছে কাতারের। এছাড়াও বিশ্বের সবচেয়ে কমদামি এলএনজি সরবরাহকারী দেশ হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশটি।
সম্প্রতি গ্যাস এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ ফোরামের (জিইসিএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৭ শতাংশ গ্যাস উৎপাদন করে কাতার। এমনকি ২০৫০ সালের মধ্যেই ১১৫ কোটি ঘনমিটার এলএনজি উৎপাদনে সক্ষম হবে দেশটি। এছাড়া একই সময়ের মধ্যে বৈশ্বিক গ্যাস উৎপাদন প্রায় ১৯ দশমিক ৪ শতাংশে উন্নীত করবে তারা।