দেশে প্রথম ‘ডিজিটাল বুথ’ খুলছে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥দেশের শেয়ারবাজারের পরিধি বাড়াতে বিদেশের মাটিতে প্রথম বারের মতো খোলা হয়েছে ‘ডিজিটাল বুথ’। এরই ধারাবাহিকতায় এবার দেশের জেলা পর্যায়ে প্রথমবারের মতো খোলা হচ্ছে একই ধরনের ডিজিটাল বুথ।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে প্রথম ব্রোকারেজ হাউজের শাখা হিসেবে ডিজিাল বুথ খুলে ইতিহাসে নাম লিখিয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ইউসিবি স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেড। একইভাবে দেশে ডিজিটাল বুথ খুলে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলায় চলতি বছরের ৩১ মার্চ (বুধবার) এবং চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলায় ৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) ডিজিটাল বুথ অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবে আইল্যান্ড সিকিদউরিটিজ লিমিটেড। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুমোদন সাপেক্ষে দুইটি জেলায় পৃথক ডিজিটাল বুথ চালু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের উল্লাহপারা, নীলফামারীর সৈয়দপুর, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জসহ আরও বিভিন্ন জায়গায় ডিজিটাল বুথ খোলার জন্য আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ডিএসই যাচাই-বাছাই শেষে বিএসইসি অনুমোদন দিলে ওইসব জেলায় বুথ খোলা হবে।
তথ্য মতে, ভোলা জেলায় ৩১ মার্চ ডিজিটাল বুথ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে। ওই দিনই ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শুরুর নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ সকাল ১০টায় বুথ থেকে লেনদেন কার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে লেনদেন শুরুর আগের দিন অর্থাৎ ৩০ মার্চ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় প্রশিক্ষণমূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে ডিজিটাল বুথ উদ্বোধনের কার্যক্রম শুরু হবে। আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভোলা জেলার মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির।
এদিকে, রাঙামাটি জেলায় ৮ এপ্রিল ডিজিটাল বুথ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে। নির্ধারিত সময়ে বুথটি থেকে লেনদেন কার্যক্রম শুরু করা হবে। ওই দিন সকাল ১০টায় রাঙামাটির সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ডিজিটাল বুথের উদ্বোধন করবেন।
আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিজিটাল বুথ চালু করা আগে ভবন ভাড়া নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ডিজিটাল বুথ পরিচালনার জন্যও কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে ভবন ভাড়া ও কর্মী নিয়োগ দেওয়ার পর ডিজিটাল বুথ চালু করতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে। বুথ অনুমোদন দেওয়ার সময় কমিয়ে আনলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বাড়তি খরচ কম লাগতো।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ৭৬৪তম কমিশন সভায় আইল্যান্ড সিকিউরিটিজকে তাদের সুবিধা মতো যে কোনো দু’টি জায়গায় ডিজিটাল বুথ খোলার অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এই দু’টি বুথের কার্যকম পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কক্সবাজার ও ফটিকছড়ি জেলায় আরও দু’টি নতুন ডিজিটাল বুথ খোলা অনুমোদন দেওয়া হবে বলে কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, ফটিকছড়ি ও ভোলা জেলায় ডিজিটাল বুথ খোলার জন্য আবেদন করা হয়েছে। ওই চারটি জায়গায় বুথ স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। তবে, আপাতত পরীক্ষামূলক ভাবে দু’টি জেলায় বুথ খোলার অনুমোদন দিয়েছে বিএসইসি। এরই ধরাবাহিকতায় আমরা চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি ও বরিশালের ভোলায় ডিজিটাল বুথ চালু করা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ দু’টি বুথের পারফরমেন্স দেখে পরবর্তী সময়ে কক্সবাজার ও ফটিকছড়িতে ডিজিটাল বুথ চালু করার অনুমোদন দেবে বিএসইসি।’
এ বিষয়ে বিএসইসি’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র বলেন, ‘স্থানীয়, প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ করতে তুলতে দেশে ও বিদেশে ডিজিটাল বুথ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ব্রোকার তাদের পচ্ছন্দমতো জায়গায় বুথ খোলার আবেদন জানিয়েছে। এর মধ্যে একটি ব্রোকারেজ হাউজকে বুথ চালু করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাদবাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই করে অনুমোদ দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, এর গত গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম স্বাক্ষরিত ডিজিটাল বুথ খোলার নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়, স্টক এক্সচেঞ্জের সম্মতিক্রমে যেকোনো স্টক ব্রোকার ডিজিটাল বুথের জন্য কমিশনে আবেদন করতে পারবে। সিটি করপোরেশনের মধ্যে, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়াও দেশের বাইরেও ডিজিটাল বুথ স্থাপন করা যাবে। ওই বুথ স্টক ব্রোকারের প্রধান অফিস দ্ধারা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনো ধরনের তৃতীয়পক্ষ দ্ধারা পরিচালনা করা যাবে না।
ডিজিটাল বুথ পরিচালনার জন্য স্টক ব্রোকারের প্রয়োজনীয় কাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা, আর্থিক সক্ষমতা ও জনবল থাকতে হবে। দেশের ভেতরে প্রতিটি বুথ খোলার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জে ১ লাখ টাকা জমা দিতে হবে। দেশের বাহিরে খুলতে দিতে ১০ লাখ টাকা। বুথ চালু করতে চাওয়া ব্রোকার হাউজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট থাকতে হবে। এছাড়া, প্রতিটি বুথে কাস্টমার সার্ভিসের জন্য একটি ফোন নম্বর, নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক সুবিধা, কমপক্ষে একজন অনুমোদিত প্রতিনিধি, ভার্চুয়াল ট্রেডিং মনিটর বা ডিসপ্লে টিকার ও নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর বুথের সামনে সাইনবোর্ড থাকবে, যেখানে স্টক ব্রোকারের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, লোকাল এড্রেসের বিস্তারিত তথ্য, যোগাযোগ নাম্বার ও মেইল এড্রেস থাকবে।
বিদেশে বুথ খোলার সেক্ষেত্রে ব্রোকারকে নন-জুডিশিয়াল ৩০০ টাকার স্টাম্পে অমীমাংসিত দাবি, বৈধ দাবি বা অপরিশোধিত দাবির ক্ষেত্রে তারা এককভাবে দায়বদ্ধ থাকবে বলে লিখিত দিতে হবে। ব্রোকার হাউজের পর্ষদ মনোনীত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা যেকোনো শীর্ষ কর্মকর্তা বা পরিচালকের স্বাক্ষর সেই স্ট‌্যাম্পে থাকতে হবে।