রোজার আঁচ কি পড়েছে বাজারে?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥প্রতিবারই রোজা শুরুর এক থেকে দেড় মাসে আগেই রাজধানীর বাজারগুলোতে আলু, পেঁয়াজ, খেজুর, ছোলা, বেসন, চিনি, তেল, মশলা, আদা, রসুন এবং বিভিন্ন ফলের দাম বেড়ে যায়। এবার চিরাচরিত সেই দৃশ্যের কিছুটা হলেও ব্যতিক্রম দেখা গেছে।ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেও গত বছর রোজায় বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এবার রোজা শুরুর এক মাসেরও কম বাকি থাকলেও দামবৃদ্ধির সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না।
তাদের ভাষ্য, রোজায় যেসব পণ্য ব্যবহার হয় তার মধ্যে বর্তমানে তেল ও চিনি ক্রেতাদের সব থেকে বেশি ভোগাচ্ছে। তবে রোজাকে কেন্দ্র করে এ দুটি পণ্যের দাম বাড়েনি। এ দুটি পণ্যের দাম দীর্ঘদিন ধরেই বাড়তি।
অন্যদিকে, রোজায় বহুল ব্যবহৃত খেজুর ও ছোলার দাম এখন পর্যন্ত তুলনামূলক কম। রোজাকে কেন্দ্র করে এ দুটি পণ্যের দাম নতুন করে বাড়েনি বরং গত এক মাসে কিছুটা কমেছে। এছাড়া পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও মশলার দামও ক্রেতাদের স্বস্তি দিচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা আরও বলছেন, এবার রোজা উপলক্ষে পণ্যের দাম নতুন করে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে ক্রেতারা অতিরিক্ত হারে কেনা শুরু করলে হয়ত দাম বেড়ে যেতে পারে। ক্রেতারা অস্বাভাবিক আচরণ না করলে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ছোলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বছর এমন সময়ে পণ্যটির দাম বাড়তে দেখা গেলেও এবার কমেছে।
এছাড়া, দাম পড়তির এ তালিকায় রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, জিরাও। এক সপ্তাহ আগে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম কমে এখন ৪০ টাকায় নেমে এসেছে। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
দেশি আদাও কেজি প্রতি ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে, যা এক মাস আগে ছিল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। হলুদের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়, যা মাসখানেক আগেও ছিল ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
মালিবাগ হাজীপাড়ার মুদি দোকানি মালিক মো. আফজাল বলেন, ‘সাধারণত রোজা আসার এক মাস আগেই ছোলা, মসলা, বেসন, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এবার তেমনটি ঘটেনি। দাম বাড়ার বদলে বরং কিছু পণ্যের দাম কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়েই আমরা ছোলার কেজি বিক্রি করি ৮০ টাকা। রোজা আসতে আর এক মাসও নেই। অথচ এখন সেই ছোলার কেজি বিক্রি করছি ৭০ টাকায়। পাইকারিতে কমে কিনতে পারায় আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি।’
খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী আসাদ আলী বলেন, ‘রোজায় যেসব পণ্য বেশি ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে তেল ও চিনি বাদে সবকিছুর দাম এখন তুলনামূলক কম। আর তেল ও চিনির দাম রোজার কারণে বাড়েনি। এ দুটি পণ্যের দাম আগে থেকেই বাড়তি। এখন এক কেজি চিনি ৭০ টাকা বিক্রি করছি। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে এই দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে।’
তেলের দামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় কয়েক মাস ধরেই তেলের দাম বাড়তি। সরকার নতুন করে তেলের দাম আরও বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে এবার রোজার ভেতরে তেলের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। তেমনি অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনাও কম। তবে ক্রেতারা যদি অস্বাভাবিক আচরণ করে অতিরিক্ত কেনা শুরু করলে দাম বেড়ে যাবে।’
এদিকে, রোজায় খেজুরের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফলে এক থেকে দেড় মাস আগেই রাজধানীর বাজারগুলোতে খেজুরের দাম বাড়তে থাকে। সেই প্রবণতা অবশ্য এবার দেখা যাচ্ছে না। কয়েক মাস ধরেই খেজুরের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। এমনকি গত বছরের রোজার তুলনায় এবার খেজুর বেশ কম দামেই বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীতে খেজুরের পাইকারি আড়ৎ বাদামতলীতে নিম্নমানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আর ভালো মানের মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। মাঝারি মানের খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।
খুচরা বাজারে নিম্নমানের খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। মাঝারি মানের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। আর ভালো মানের খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে।
খিলগাঁও তালতলায় খেজুরের খুচরা ব্যবসায়ী আনিসুর বলেন, ‘এবার খেজুরের দাম বেশ কম। গত বছর এক কেজি মরিয়ম খেজুর ১২০০ টাকা বিক্রি করেছি। এখন সেই খেজুর ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। মাঝারি মানের খেজুর আছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। দাম কম হওয়ায় এখন মানুষ নরমাল খেজুর কিনছে না। তাই আমরাও আনছি না। তবে রোজার ভিতরে খেজুরের দাম বাড়বে কি-না সেটা বলতে পারব না।’
খেজুরের দামের বিষয়ে বাদামতলীর তাসফিয়া ফ্রুটস কালেকশনের মালিক শামছুল হক বলেন, ‘এবার খেজুরের দাম বেশ কম। আমরা ভালো মানের মরিয়ম খেজুর বিক্রি করছি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে। আর নরমাল খেজুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি। গত বছর খেজুরের দাম আরও অনেক বেশি ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার রোজায় খেজুরের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখছি না। আমাদের ধারণা সামনে খেজুরের দাম আরও কমতে পারে। কারণ বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুরের সরবরাহ রয়েছে। রোজার ভেতরে খেজুরের সঙ্কট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’
সাথী ফ্রেস ফ্রুটস লিমিটেডের মালিক হাজী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এবার খেজুর সস্তা। গত বছর আমরা এক কেজি মরিয়ম খেজুর ৬৪০ টাকায় বিক্রি করেছি। এবার সেই খেজুর ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য খেজুরের দামও এবার গত বছরের তুলনায় বেশ কম এবং রোজার ভেতরে খেজুরের দাম বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই।’
খেজুরের দাম কমার কারণ জানতে চাইলে এই আমদানিকারক বলেন, ‘এবার আমরা আগে আগেই খেজুর আমদানি করেছি। ভরা মৌসুমে পর্যাপ্ত পরিমাণে খেজুর আমদানি করে মজুত করে রাখায় কম দামে বিক্রি করতে পারছি। এখন খেজুর আমদানি করতে গেলে দাম অনেক বেশি পড়ে যেত। কারণ বাইরে এখন খেজুরের দাম বেশি। তাছাড়া জাহাজ ভাড়াও বেশি এবং কন্টেইনার সঙ্কট রয়েছে। আমরা আগাম প্রস্তুতি নেয়ায় এখন তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে।’