ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ নির্বিঘ্নে হলে বাংলাদেশের জাতীয় আয় বাড়বে ১৭ শতাংশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ নির্বিঘ্নে করা গেলে বাংলাদেশের জাতীয় আয় ১৭ ও ভারতের জাতীয় আয় ৮ শতাংশ বাড়বে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মঙ্গলবার বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের মধ্যে মোটরযান চুক্তি বিষয়ক এক আলোচনায় এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮২ ও ভারতের বৃদ্ধি পেয়েছে ১২৬ শতাংশ। এই দুইদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করা হলে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে ২৯৭ শতাংশ ও ভারতের বৃদ্ধি পারে ১৭২ শতাংশ।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়য়ই নয়। আঞ্চলিক বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানে বাণিজ্য সম্প্রসারণেও বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে যোগাযোগ দেশগুলোকে লাভবান করবে। এমনকি পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর বাণিজ্য গেট হিসাবেও বাংলাদেশ নিজেকে তুলে ধরতে পারে।বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি মারসি টেমব্যান বলেন, বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ১০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে। আঞ্চলিক বাণিজ্য আরো বিস্তৃত করতে বিশ্বব্যাংক এই খাতে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। এখানে রিজিওনাল রাস্তা, জলপথের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক করিডোর নির্মাণ, স্থলবন্দর নির্মাণ, ডিজিটাল ব্যবস্থা ও অটোমেশানে বিশ^ব্যাংক আগামীতে বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উল্লেখযোগ স্থলবন্দর বেনাপোল ও পেট্রাপোলের দুর্বল অবকাঠামোর উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়, সরু রাস্তা, অবকাঠামো ও ধীর শুল্কায়নে এখানে পণ্য খালাস হতে সময় নেয় ১ সপ্তাহ। অন্যদিকে আফ্রিকার আঞ্চলিক দেশগুলোর মধ্যে একই পরিমাণ পণ্য পরিবহনে ও শুল্কায়ন করতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা।
ভারতের বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি জুনায়েদ আহমেদ বলেন, দুইদেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি এখন একটি চূড়ান্ত সত্য। ভারতের ট্রাক এখন বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশ করতে পারছে না। যার ফলে ত্রিপুরা থেকে কোলকাতায় একটি পণ্যবাহি ট্রাককে ১৬০০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। রাস্তা পেরোতে হতো মাত্র ৪৫০ কিলোমিটার। বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে গেলে শিলিগুড়ির ২৭ কিলোমিটার রাস্তায় করিডোর দিলে ত্রিপুরা থেকে কোলকাতায় পণ্য যেতে সময় লাগতো কমে যেতো। ত্রিপুরা বা সেভেন সিস্টার থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে যেতে সময় কমে যাবে। ট্রাকের রাস্তা পার হতে হবে মাত্র ২০০ কিলোমিটার। পণ্য পরিবহণে ব্যয় কমবে ৪০ শতাংশ। এতে বাংলাদেশের সকল জেলাগুলোও উপকৃত হবে। তেমনিভাবে উপকৃত হবে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ। বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়বে, উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্রের।
ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধিতে প্রধান কয়েকটি বিষয়ও শনাক্ত করা হয়। এরমধ্যে উল্লেখ করা হয়, ২০১৫ সালে ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে মোটর ভেহিক্যাল চুক্তি হলেও তা বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ ড্রাইভিং লাইস্যান্স ও ভিসা সহজ না হওয়া। এছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নানা ধরনের টারিফ ও নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার, উচ্চ শুল্কহার এগুলি প্রধান বাধা হিসাবে কাজ করছে।
সবশেষে রিপোর্ট বলা হয়, ভারতের কোন সংস্থা ব্রাজিল বা জার্মানির কোন সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্য করলে যে পরিমাণ ব্যয় হয়। একই কাজ যদি তারা বাংলাদেশের কোন সংস্থার সঙ্গে করে তবে ব্যয় কম হবে ১৫ থেকে ২২০ শতাংশ।