বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর শীর্ষে ইউনিলিভার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেড। কোম্পানিটির লভ্যাংশে হতাশ হয়ে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনতে আগ্রহী না হওয়ায় সপ্তাহজুড়েই দাম কমেছে। এতে গত সপ্তাহে ডিএসইতে দাম কমার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ থেকে নাম বদল হয়ে ‘ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার’ নাম ধারণ করা কোম্পানিটি। গেল সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি ইউনিটের দাম কমেছে ৪০০ টাকা ৩০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দাম দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২২ টাকা ২০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ছিল ৩ হাজার ২২২ টাকা ৫০ পয়সা। শেয়ারের এই দরপতনের কারণ গত ১ মার্চ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য পরিচালনা পর্ষদের ঘোষিত লভ্যাংশের তথ্য প্রকাশ করে।
বহুজাতিক এই কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ থেকে নাম বদল হয়ে ‘ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার’ নাম ধারণের পর এটিই কোম্পানিটির প্রথম লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত। ইউনিলিভারের কাছে শেয়ার বিক্রির আগে গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ৫৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগে ২০১৮ সালে ৫৩০ এবং ২০১৭ সালে ৫৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। অর্থাৎ নাম বদলের পর কোম্পানিটির লভ্যাংশের পরিমাণ প্রায় ১০০ শতাংশ কমে গেছে। লভ্যাংশ কমার কারণে ১ মার্চই কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ২৪৩ টাকা ৩০ পয়সা কমে যায়। অথচ কিছুদিন আগেও মোটা লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় এক শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে দেখতে দেখতে ২ হাজার ৪৬ টাকা থেকে কয়েক দফা দাম বেড়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩ হাজার ৮৫৯ টাকা পর্যন্ত উঠে। হরলিক্স, মালটোভা, গ্ল্যাক্সোজ-ডি, সেনসোডাইন’র মতো পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কনজিউমার হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিটিক্যালস দুই ইউনিটের মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করলেও লোকসান দেখিয়ে ২০১৮ সালে ওষুধ উৎপাদন কারখানা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল বিজনেস ইউনিটের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বহুজাতিক কোম্পানিটি। এরপর সমঝোতার মাধ্যমে গত বছরের ২৮ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে জিএসকের শেয়ার কিনে নেয় ইউনিলিভার। ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি শেয়ারের প্রতিটি কেনা হয় ২ হাজার ৪৬ টাকা ৩০ পয়সা করে। শেয়ার কিনে নেয়ায় দুদিনের মধ্যে নতুন এমডি নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সেই সঙ্গে ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেয়া হয় ‘ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার’। নাম বদল হলেও ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আগের নামেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছিল। তবে ২৬ নভেম্বর থেকে নতুন নামে লেনদেন শুরু হওয়ার পাশাপাশি ক্যাটাগরিও বদলে যায় কোম্পানিটির। ওষুধ ও রসায়ন খাত থেকে কোম্পানিটি খাদ্য খাতের আওতাভুক্ত হয়। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪৯ টাকা। এর মধ্যে ৯০ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৪ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে। আর বিদেশিদের কাছে আছে দশমিক ৩৪ শতাংশ। এদিকে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ গত সপ্তাহে হতাশ হয়ে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৪১ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। এতে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি ৩২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের পরেই গত সপ্তাহে দাম কমার তালিকায় রয়েছে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ। সপ্তাহজুড়ে এই কোম্পানিটির শেয়ার দাম কমেছে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ দাম কামার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক। এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারানোর শীর্ষ তালিকায় থাকা- প্রাইম ফাইন্যান্সের ৫ দশমিক ২২ শতাংশ, গোল্ডেন সন’র ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, বেক্সিমকোর ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৩ দশমিক ৭৮ শতংশ এবং পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ দাম কমেছে।