মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ কে বলে সালাম নেই, নেই জব্বার বরকত। ওদের যাত্রাপথে সূর্য ওঠে, আজও পলাশ ফোঁটে। এখনো রক্তে ভেজা মহানগরীর রাজপথ। ভাষার জন্যে আত্মত্যাগ বিশ্বের একমাত্র ইতিহাস সৃষ্টিকারী জাতি বাঙালি। সেই ভাষা আন্দোলনের সমর নায়ক সালাম, জব্বার, বরকতকে উৎসর্গ করে লেখা হয় কালজয়ী গানটি। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…..আজ রোববার সেই মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। বিশ্বের বুকে মাতৃভাষার জন্যে নির্ভয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়ার একমাত্র ইতিহাস সৃষ্টির দিন। বাঙালির ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় শোকের দিন। তাইতো বাঙালি জাতি সগৌরবে গেয়ে ওঠে, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি। আজ রোববার পূর্ণ হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৫২ সালের এদিন বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা পেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি। এরপর থেকে ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। পরবর্তীতে ২১শে ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। পরের বছর ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে তৎকালীন পূর্ববাংলার প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা দেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। মূলত খাজা নাজিমুদ্দিনের এই ভাষণই ভাষা আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টি করে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাংলার ছাত্র-শিক্ষক-জনতাসহ আপামর মানুষ। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় ধর্মঘটসহ বিক্ষোভ একুশে ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার। এক পর্যায়ে ছাত্রদের দৃঢ়তায় ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ঢাকার পলাশীর আমতলায় (বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনের সড়ক) এলে নির্বিচারে ছাত্রদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। এতে নিহত হন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিকসহ আরও অনেকে। এরপর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। অবশেষে বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাঙালি জাতির চরম জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। এই পথ ধরেই ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান ও মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ। একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে কালো ব্যাজ ধারণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবছর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শহীদদের স্মরণে দিনটিতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত ও শোকের কালো পতাকা ওড়ানো হয়। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ছাড়াও প্রচার করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
আজ যখন মহান শহীদ দিবস পালিত হচ্ছে তখন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস নামের এক অদৃশ্য শক্তি বিরাজ করছে। সে কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে পালিত হচ্ছে দিবসটি।