যশোর পৌরসভা নির্বাচন স্থগিত

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় যশোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসাথে আরো দুটি পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনের ওপর তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পৃথক রিটের শুনানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন।
যশোর পৌরসভা ছাড়া অপর দুই পৌরসভা হলো মুন্সিগঞ্জের মীর কাদিম পৌরসভা ও জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভা। যশোর সদর পৌরসভায় ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং মুন্সিগঞ্জের মীর কাদিম ও জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় ১৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করা হয়েছিল। আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ এম রাসেল চৌধুরী। তবে কী বিষয় নিয়ে ও কার করা আবেদনকৃত রিটে এ স্থগিতাদেশ তা গতকাল রাত পর্যন্ত সঠিকভাবে জানা যায়নি।
এদিকে গত ৯ ফেব্রুয়ারি যশোর পৌরসভার নির্বাচন উপলে মনোনয়ন জমা দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হায়দার গণি খান পলাশ, বিএনপি মনোনীত নগর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মোহাম্মাদ আলী সরদার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান কাকন মৃধা। এছাড়া নয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন ও সংরতি কাউন্সিলর পদে ১৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। মনোনয়ন যাচাই বাছাইয়ে বিএনপি মনোনীত নগর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান কাকন মৃধার মনোনয়ন বাতিল করেন রিটানিং অফিসার। তবে মনোনয়নপত্রের বৈধতা পেতে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন যশোর পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মারুফুল ইসলাম। এনসিসি ব্যাংকে খেলাপী ঋণের কারণে তার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছিল। তবে মারুফুল ইসলামের দাবি গত ২৪ জানুয়ারি টাকা পরিশোধ করেন তিনি। ২ ফেব্রুয়ারি ‘টাকা পরিশোধ হয়েছে’ মর্মে চিঠি হাতে পান। তবে নিয়ম অনুযায়ী এনসিসি ব্যাংক ওই ঋণ পরিশোধের চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাবে। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র জমা দিলেও রিটানিং অফিসার তার মনোনয়ন বাতিল করেছিলেন।
এদিকে গতকাল যশোর পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে দিনভর আলোচনা হয়েছে শহরে। নির্বাচন হবে কী না এমন প্রশ্ন ছিল নগরীর বিভিন্ন মহলে। যশোর পৌর নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত হয়েছে এমন একটি খবর মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর সত্যতা কোনো মহল নিশ্চিত করতে না পারলেও এ নিয়ে জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের বেশ বেগ পেতে হয়। দেশের সুপ্রাচীন এ পৌরসভার নির্বাচন সত্যি স্থগিত হয়েছে কী না তা জানতে বিভিন্ন জায়গা থেকে সন্ধ্যার পর লোকসমাজ দফতরেও ফোন আসতে থাকে। তবে এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কোনো সূত্রই নিশ্চিত করতে পারেনি। এ বিষয়ে মঙ্গলবার রাতে জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার মো. হুমায়ুন কবীরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এখনও আমার কাছে এ ধরনের কোনো কাগজপত্র এসে পৌঁছেনি। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে এমন খবর আছে কী না তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদারের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় সম্ভব হয়নি। তবে মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদারের একজন ঘনিষ্ট ব্যবসায়ী নেতার সাথে যোগাযোগ করলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, তার কাছে খবর আছে ঘটনা পুরোপুরি সঠিক। হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে জনৈক তৌহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি সীমানা জটিলতার কারণ দেখিয়ে রিট করলে আদালত তিন মাসের জন্য নির্বাচন স্থগিতের আদেশ দেন। এসময় তিনি হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের দুইজন বিচারকের নামও উল্লেখ করেন। ব্যবসায়ী নেতা বলেন, আজ বুধবারের মধ্যে আদেশের কপি জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে এসে পৌঁছে যাবে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। যশোর পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হায়দার গনি খাঁন পলাশ বলেন, আমিও এমন একটি খবর ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি। তবে এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি। খবর যদি সত্যি হয় তাহলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেবো। নির্বাচনে বর্তমান মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর পরিবর্তে দলীয় মনোয়ন নাটকীয় কায়দায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড দলটির জেলা শাখার বর্তমান সহসভাপতি হায়দার গনি খাঁন পলাশকে দেয়। এ সব কারণে শুরুতেই এ পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে গতকাল থেকে নির্বাচন স্থগিতের কথা ছড়িয়ে পড়ে শহরময়।