ব্যাংকে ৯৫ লাখ টাকা সঞ্চয় করেও জোটেনি লভ্যাংশের টাকা!

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১৯৯০টি ভিজিডি সুবিধাভোগীর কপালে লভ্যাংশের টাকা জোটেনি। অথচ তারা দুই বছর ধরে ব্যাংকে জমা করেছেন ৯৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে মোট ভিজিডি কার্ড ছিল ১৯৯৫টি। দু’বছর প্রতি মাসে তারা ব্যাংকে ২শ’ টাকা করে সঞ্চয় করে ৯৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। ব্যাংক এই টাকা নিয়ে ব্যবসা করলেও তাদের শুধু আসলই ফিরিয়ে দিচ্ছে। সূত্র মতে, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ১৯৯৫টি ভিজিডি সুবিধাভোগীর মধ্যে ৫টি কার্ড বাতিল হয়েছে মৃত্যুজনিত কারণে। বাকি ১৯৯০ ভুক্তভোগীকে মেয়াদ শেষে সঞ্চয়ের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে কোবাদ আলীর স্ত্রী প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল পেতেন। চাল উত্তোলনের সময় প্যারাডাইস নামে একটি এনজিওর মাধ্যমে ২’শ টাকা করে সঞ্চয় করেন। কোবাদ আলী জানান, গত মঙ্গলবার তার স্ত্রীকে মাত্র ৪ হাজার ৮’শ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। কোন লাভ দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খোন্দকার শরীফা আক্তার জানান, এর আগে একটি মাদার একাউন্টে টাকা রাখা হতো, যার কারণে মেয়াদ শেষে লভ্যাংশ দেওয়া হতো। কিন্তু এখন ইন্ডিভিজুয়াল একাউন্টে টাকা সঞ্চয় করার কারণে লভ্যাংশ আসছে না। জানা গেছে, এই মেয়াদে প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তাদের (এজেন্ট ব্যাংক) ব্যাংক এশিয়াতে ভিজিডি ভাতাভোগীদের সঞ্চয়ী একাউন্ট খোলানো হয়েছে। এই একাউন্টেই প্রতি মাসে ২’শ টাকা করে জমা করেছে ভুক্তভোগীরা। ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার উদ্যোক্তা সাথী রানী। তিনিও একটি এজেন্ট ব্যাংক নিয়েছেন তার বাবা স্বপন কুমারের নামে। ব্যাংক এশিয়া সঞ্চয়ী হিসাবে কেমন লভ্যাংশ প্রদান করে এমন প্রশ্নের জবাবে সাথী রানী বলেন, ব্যাংক এশিয়ায় সঞ্চয়ী হিসাবে নূন্যতম ৫ হাজার টাকা না থাকলে সঞ্চয়ের কোন লভ্যাংশ দেওয়া হয় না। ব্যাংক এশিয়ার এই নিয়ম। তিনি বলেন, ভিজিডি ভাতাভোগীরা ২৪ মাসে ২’শ টাকা করে ৪ হাজার ৮’শ টাকা জমা করেছেন, যার কারণে তারা সঞ্চয় করেও কোন লভ্যাংশ পাননি। কিন্তু এই সঞ্চয় ব্যাংক এশিয়া বাদে অন্য কোন ব্যাংকে করলে তারা ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী সঞ্চয়ের লভ্যাংশ পেতেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ফুরসুন্ধি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, ‘আমাদের পরিষদে ভাতাভোগীদের ডাচ বাংলা ব্যাংকে একাউন্টে সঞ্চয়ের টাকা রাখা হয়েছে। তারা ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী লভ্যাংশ পেয়েছেন।’ সদর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খোন্দকার শরীফা আক্তার জানান, ‘জেলা প্রশাসনের মিটিংয়ে ব্যাংক এশিয়াতে (এজেন্ট ব্যাংক) ইন্ডিভিজুয়াল একাউন্ট খোলার ব্যাপারে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপ চিঠি দিয়ে আমাদের জানিয়েছে। এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প থেকে ব্যাংক এশিয়াতে একাউন্ট খোলার বিষয়ে বলা হয়েছে। ব্যাংকিং বিষয়ে আমার ধারণা নেই। তাই আমি বলতে পরছি না।’
সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তারা এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পে ফ্রিলান্সিং কাজ করেন। তাদের আয় বৃদ্ধির জন্য ব্যাংক এশিয়ার সাথেও চুক্তি করেছে এটুআই। যার কারণে সহজ শর্তে ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু ব্যাংক চলতে গেলে নিয়মিত লেনদেন ও পর্যাপ্ত একাউন্ট খোলার জন্য মাসিক ও বার্ষিক টার্গেট দেয় ব্যাংক। যার কারণে উদ্যোক্তারা ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাতে সেবা নিতে আসা ব্যক্তিদের তাদের এজেন্ট ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। এতে গ্রাহকদের লাভ না হলেও ব্যাংক ও এজেন্টদের লাভ হয়। এবার ভিজিডি সুবিধাভোগীরা এই কারণেই সঞ্চয়ের লভ্যাংশ পাচ্ছে না। ঝিনাইদহ সদর উপজেলায় ১৯৯০ জন সুবিধাভোগী দুই বছরে সঞ্চয় করেছেন ৯৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা। কিন্তু সঞ্চয়ের কোন লভ্যাংশ জোটেনি তাদের কপালে।