প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত ধরেই এসেছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের জীবনমানের নিরবচ্ছিন্ন উন্নতি এসেছে প্রকৃতির নজিরবিহীন ধ্বংসাত্মক ক্ষয়ক্ষতির মাধ্যমে। বিস্তৃত এক আন্তর্জাতিক পর্যালোচনায় উঠে এসেছে এ চিত্র। এ সময়ে এসে পৃথিবী নামক আমাদের গ্রহটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা নিতে শুরু করেছে, যার নেতিবাচক প্রভাব নিশ্চিতভাবেই এড়াতে পারেনি প্রাণ ও প্রকৃতির জগৎ। খবর এএফপি।
ব্রিটিশ সরকারের পরিচালিত ৬০০ পৃষ্ঠার এই গবেষণাপত্রে আলো ফেলা হয়েছে বৈশ্বিক জীববৈচিত্র্যের অনিশ্চিত অবস্থার প্রতি। দাশগুপ্ত পর্যালোচনা নামে এই গবেষণায় দুই বছরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের কয়েকশ গবেষক সহযোগিতা করেছেন। তবে মূল কাজটি তদারক করেছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজের প্রফেসর ইমেরিটাস অব ইকোনমিকস পার্থ দাশগুপ্ত। যেখানে তিনি বলেন, সব মানুষের জীবন ও জীবিকা গ্রহের স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে।
এই গবেষণায় দেখানো হয়, ১৯৯২ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিন দশকে বৈশ্বিকভাবে জনপ্রতি মূলধন দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু তার বিনিময়ে প্রাকৃতিক মূলধনের যে মজুদ, যা দ্বারা একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সুবিধা পেয়ে থাকেন, তা ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
পর্যালোচনায় বলা হয়, মানুষের জীবনমান সাম্প্রতিক দশকগুলোয় ব্যাপকভাবে উন্নতি লাভ করেছে। কিন্তু যে উপায়ে আমরা তা অর্জন করেছি, তা এসেছে প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক ব্যয়ের মাধ্যমে। পাশাপাশি সতর্কবার্তা দিয়ে বলা হয়েছে, জীববৈচিত্র্য জটিলভাবে মানুষের কল্যাণ এবং স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত। তাই একে রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। অথচ বর্তমান সময়ে এসে কিছু কিছু প্রজাতি ঐতিহাসিক গড়ের তুলনায় এক হাজার গুণ বেশি গতিতে বিলুপ্তির পথে রয়েছে এবং প্রকৃতিক উৎপাদনশীলতা, স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজন ক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় প্রাকৃতিক ক্ষতি সম্পর্কিত বিপর্যয়গুলোকেও, যেখানে কভিড-১৯-এর মতো মহামারীও অন্তর্ভুক্ত। যা কিনা ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তন এবং নানা প্রজাতিগুলোর ওপর চলা ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের ফসল। এখন এই ধারা অব্যাহত থাকলে কভিড-১৯-এর ঘটনা হতে পারে বিপর্যয়ের কেবলই সূচনা বিন্দু।
প্রখ্যাত প্রকৃতিবিদ ডেভিড এটেনবার্গ পর্যালোচনার ভূমিকায় লেখেন, আমরা পুরোপুরিভাবে প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। এটি আমাদেরকে প্রতিটি নিঃশ্বাস সরবরাহ করে এবং আমাদের মুখের সব খাবারও। কিন্তু বর্তমানে আমরা এটিকে এমন গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছি যে অনেক প্রাকৃতিক সিস্টেম এখন ধসে পড়ার মুখে।
জীববৈচিত্র্যের অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো ঐতিহাসিকভাবে প্রবৃদ্ধির মডেলগুলোর বাইরে রয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি সংরক্ষণ প্রোগ্রামগুলো দীর্ঘ সময় ধরে তহবিল সংকটের মাঝেই পতিত ছিল। হিসাবে দেখা গেছে, প্রতি বছর ৪-৬ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করা হয়েছে অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক কার্যকলাপগুলোয়, যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং কৃষি পদ্ধতির ক্ষতিসাধনের মতো ঘটনাগুলো ঘটেছে। এর বাইরে সরকারগুলোও যারা প্রকৃতিকে রক্ষার বদলে ধ্বংসের কাজ করে আসছে, তাদের অধিক অর্থ প্রদান করে আসছে।
এই পর্যালোচনায় অর্থনৈতিক কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য নতুন পথের সন্ধানের কথাও বলা হয়েছে। যেখানে প্রকৃতির পরিষেবাকে বিবেচনায় নেয়া হবে, যা চিরায়ত জিডিপি মডেলকে প্রতিস্থাপন করবে। তবে আরো টেকসই প্রবৃদ্ধির পথ বেছে নিতে হলে ব্যাপক আকারে পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে। সেই সঙ্গে সঠিকভাবে সমন্বয় করতে হবে এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছাগুলোও একই রকম হতে হবে।
সর্বশেষ পর্যালোচনার উপসংহারে বলা হয়, এ ধরনের টেকসই ভবিষ্যৎ বৈশ্বিক জ্বালানি সিস্টেমে সামগ্রিক কার্বন হ্রাসকে যুক্ত করবে।