চৌগাছায় ১৮টি ভাটায় আবাদি জমির টপ-সয়েল কেটে মাটির যোগান দেওয়া হচ্ছে , পুড়ানো হচ্ছে কাঠ

0

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছা উপজেলার ১৮টি ইট ভাটায় মাটি যোগান দেওয়া হচ্ছে আবাদি জমির টপ-সয়েল কেটে। ফলে উপজেলা জুড়ে আবাদি জমির মাটি কাটার হিড়িক পড়েছে। সরকারি আইন অমান্য করে কোন কোন ভাটায় ইট পুড়ানো কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কাঠ। চৌগাছার সাধারণ মানুষের পরিবেশ গত অজ্ঞতা ও অভাবের তাড়নাকে পুজিঁ করে নামে মাত্র অর্থের বিনিময়ে ভুমি আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে আবাদি জমির টপ-সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে নজর না থাকায় চৌগাছার ইটভাটা মালিকরা ইট তৈরীর জন্য অবাদে কাটছেন আবাদি জমির টপ-সয়েল। টপ-সয়েল কেটে নেওয়ায় অদূর ভবিৎষতে মানবিক পরিবেশগত ও অর্থ-সামাজিক বিপর্যয়ের আশংঙ্খা রয়েছে।
উপজেলার তেতুলবাড়ীয়ায় এফ বি ইটভাটা, বলিদাপাড়ায় এম এস বি ইটভাটা, চৌগাছা-যশোর সড়কের রোস্তমপুর মাঠে তানজিলা অটো ভাটা, পুড়াহুদা মাঠের ইটভাটা, হাকিমপুর নিমতলায় এইচ এম এম ইটভাটা, দেবীপুর আর কে ইটভাট, পাতিবিলায় দেওয়ান ইটভাটা, নিয়ামতপুর কে এস বি ইটভাটা, ফাঁসতলায় ঐশি মল্লিক ইটভাটা ও মোল্লা ইটভাটা, বন্দুরীতলায় রাজ মল্লিক ইটভাটা, রাজাপুর ইটভাটা, কমলাপুর মোড়ে এইচ এম এম ইটভাটা, মায়ের দোয়া ইটভাটা ও এম ডবলু বি ইটভাট, টেঙ্গুরপুর মোড়ে এম এস বি ইটভাটা, চাদপুর মোড়ে এম ডবলু বি ও পাশাপোল এম এসবি ইটভাটাসহ মোট ১৮টি ইট ভাটা রয়েছে।
এ সকল ইটভাটায় শতাধিক ট্রাক ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন মাঠ থেকে আবাদী জমির মাটি কেটে ইটভাটাগুলোতে নিয়ে জড়ো করছে। প্রতিটি ভাটায় ৮-১০ টি ট্রাক বিভিন্ন মাঠ থেকে আবাদী জমির মাটি আনছে ভাটাই। এ ছাড়াও পরিবেশ মন্ত্রালয়ের আইনকে অমান্য করে কোন কোন ভাটায় পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে বিভিন্ন ইটভাটার মাটি ও লোকাল বালি বহনের সময় ট্রাক চালকে আর্থিক জরিমানা করেও কোন ফল হচ্ছে না। উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন পৌরসভাসহ সর্বত্রই আবাদী জমির মাটি অপরিকল্পিত ভাবে কেটে নেয়ার ফলে উর্বরা শক্তি হ্রাস ও কৃত্রিম জলাবদ্ধতা বেড়েই চলছে।
এ বিষয়ে ফল চাষী আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, মাটিতে ফসল উৎপাদনের জন্য শতকরা ৫ ভাগ জৈব উপাদান অত্যাবশ্যক আবাদি জামির উপরিস্তর কেটে নেওয়ার ফলে ফসলের প্রধান খাদ্য নাইট্রোজেন, পটাশ, জিংক, ফসফরাস, সালফার, ক্যালসিয়াম সহ অর্গানিক বা জৈব উপদানের অপূরনীয় তি হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আবাদী জমি বন্ধা জমিতে পরিনত হবে।
আন্দারকোটা গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে পানি প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃত্রিম জলাবদ্ধতা যা পরবর্তীতে স্থায়ী ভাবে দেখা দিবে। এর ফলে এ অঞ্চলে মানবিক পরিবেশগত ও অর্থ-সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনা হচ্ছে। যা বর্তমান থেকে ভবিষৎ প্রজন্ম পর্যন্ত তিগ্রস্থ হবে।
উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশের অন্যতম উপদান হচ্ছে মাটি পানি ও জলবায়ু। পরিবেশের উপর নির্ভরশীল স্থল ও জলজ পরিমন্ডলে যাবতীয় জৈব প্রক্রিয়া এবং উৎপাদন শিল্প প্রত্য ভাবে মাটি প্রভাবিত পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মাটি ও পরিবেশের মধ্যে আন্তঃসর্ম্পক হিসাবে রয়েছে জৈব ভৌত রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও জলবায়ু।
উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ৬ থেকে ৮ইঞ্চি গভীরতা পর্যন্ত টপ-সয়েল গঠন হতে কয়েক যুগসময় লাগে। এস্তরে উদ্ভিদেও প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান জৈবসার ও হিউমাস পর্যাপ্ত পরিমানে থাকে। অধিকাংশ অনুজীবিও এস্তরে থাকে। যা উদ্ভিদেও খাদ্য প্রক্রিয়া করনে সহায়তা করে। এক কথায় বলা চলে মাটির প্রাণ যে জৈবসার তা এ স্তরেই থাকে। ফলে এ স্তরের মাটি কেটে নিলে মাটি প্রাণহীন হয়ে পড়ে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দীন বলেন, সাধারণত ভূত্বক থেকে ৮ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত জৈব উপাদান বিদ্যমান। এটাকে অনেকে মাটির কর্জন স্তরও বলে থাকেন। মাটির এ স্তরের (পাউলেয়ার) জমা থাকে ফসলাদি বা উদ্ভিদ কূলের মূল খাদ্য। আবাদি জমির উপর থেকে দেড়-দুই ফুট থেকে ৪-৫ ফুট পর্যন্ত মাটির উপরের (টপসয়েল) অংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বদলে যাচ্ছে আবাদী জমির প্রকৃতি। মাটির প্রথম স্তরের (পাওসিয়েল) কেঁচোসহ উপকারী অনুজীব সমূহ বিলুপ্ত হচ্ছে নির্বিবাদে। ফলে এ ভাবে মাটির টপ-সয়েল কেটে নিলে এক সময় দেশের জাতীয় পর্যায়ে খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি দেখো দিতে পারে।