নিরাপত্তার অভাবেই বাল্যবিয়ে বাড়ছে

0

একবিংশ শতাব্দীতে এসেও বাল্যবিয়ের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি আমাদের সমাজ। করোনা মহামারিকালেও আমাদের দেশে ঘটছে বাল্যবিয়ের ঘটনা। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে ঢাকার একটি খবরে বলা হয়েছে, করোনাকালে দেশে বাল্যবিয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়; করোনা মহামারির সময় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ না করা এবং সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি না করতে পারাও বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ার কারণ। তবে কন্যার নিরাপত্তা ও অভাব বাল্যবিয়ের অন্যতম প্রধান কারণ বলে আমরা মনে করি।
স্বাধীনতা-পরবর্তী চার দশকে বাংলাদেশ অনেক েেত্রই ঈর্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে; এমনকি শিশুদের বিভিন্ন েেত্রও বাংলাদেশের অগ্রগতি সারা দুনিয়ার প্রশংসা পেয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে। অপুষ্টির শিকার শিশুদের হার কমেছে। শিশুশিায়, বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার পরিধিও অনেক বেড়েছে; কিন্তু প্রদীপের নিচের অন্ধকারের মতো বাল্যবিয়ের এই অভিশাপ থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হতে পারছে না। এর দায় যেমন রাষ্ট্রের, তেমনি সমাজেরও। এ েেত্র আইন প্রয়োগেও যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। আর শুধু আইন করেই এ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না, এর জন্য প্রয়োজন হবে ব্যাপক জনসচেতনতাও। বাল্যবিয়ে গ্রামাঞ্চলে বেশি হয়। কারণ গ্রামের অভিভাবকদের অনেকেই অসচেতন। আইনি নিষেধাজ্ঞা ও অল্প বয়সে মাতৃত্বের ঝুঁকির ব্যাপারে তাঁরা অজ্ঞ। বয়ঃসন্ধিণে মেয়ের শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিতেই তাঁরা বিয়ে দিতে উঠে পড়ে লাগেন। মানুষকে এসব বিষয়ে সচেতন করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা, ওয়েবসাইটসহ নানা মাধ্যমে শিশু অধিকারের বিষয়ে প্রচার চালাতে হবে। নারীশিার উন্নয়নে সরকার অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এগুলো গ্রহণ করলে কোনো মা-বাবা কন্যাশিশুকে বোঝা মনে করবেন না। বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগে বিয়ে অবৈধ এ আইন লঙ্ঘিত হলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অন্যদেরও সতর্ক করে। জানা যায়, কাজি বা বিবাহ নিবন্ধনকারীরা বয়স বাড়িয়ে দিয়ে বিবাহ নিবন্ধন করেন। আবার বহু বিবাহ নিবন্ধিতই হয় না। সে েেত্র যাঁরা বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন, তাঁরাও বয়স নিয়ে কারচুপির আশ্রয় নেন। এসব রোধ করতে প্রশাসন, আইনের হেফাজতকারী ও সমাজকে যৌথভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন ল্যমাত্রা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। আর জাতীয় ল্যমাত্রা অনুযায়ী, বাল্যবিয়ে নির্মূল করতে হবে ২০৪১ সালের মধ্যে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সব উপজেলার সব নির্বাহী কর্মকর্তা, সর্বস্তরের জনপ্রতিনিধি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও স্থানীয় শিতিজনরা যদি এগিয়ে আসেন, তাহলেই শুধু আমরা বাল্যবিয়ের এ অভিশাপ থেকে অনেকটা মুক্তি পেতে পারি। তবে চূড়ান্তভাবে মুক্তি পেতে হলে দারিদ্র্য বিমোচনও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আশা করবো, সরকার এক্ষেত্রে চলমান ব্যর্থতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।