বাড়তি দামেও লাগামহীন যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি উচ্চাশা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিশ্বজুড়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম। প্রায় ছয় বছরের মধ্যে জ্বালানি পণ্যটির বাজারে এমন চাঙ্গা ভাব যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকদের জন্য যেন স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। এ কারণে বৈশ্বিক বাজারে অন্যতম সরবরাহকারী দেশটির রফতানিকারকরা চলতি বছর আরো বেশি পরিমাণ এলএনজি রফতানিতে উৎসাহী হচ্ছে। খবর অয়েলপ্রাইসডটকম।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রফতানিকারকদের কাছে এলএনজির বাজার আবারো আকর্ষণীয় হতে চলেছে। কারণ এশিয়ার বাজারের স্পট প্রাইসের তুলনায় মার্কিন বেঞ্চমার্ক হেনরি হাবে জ্বালানি পণ্যটির দাম বেশ কম। এ কারণে দেশটির রফতানিকারকদের জন্য এখন এশিয়াসহ অন্যান্য দেশে বেশি পরিমাণ এলএনজি সরবরাহের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
জ্বালানি তেলের পাশাপাশি বৈশ্বিক এলএনজির বাজারে আধিপত্য বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরে মরিয়া হয়ে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর পর্যন্ত দেশটি তাদের রফতানি সক্ষমতা ব্যাপক হারে বাড়িয়েছে। চলতি বছরও এ সক্ষমতা আরো বেশি পরিমাণ বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এর বিপরীতে শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে মূল্যবৃদ্ধি এবং বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা প্রত্যাশার তুলনায় বৃদ্ধির যে ধারা বজায় রয়েছে, সেটি মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাজার ধরতে আরো বেশি সুবিধা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গত মাসেই এশিয়ার বাজারে এলএনজির স্পট প্রাইস এক লাফে ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছে। মূলত তাপমাত্রা কম থাকায় আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং এ অঞ্চলের শীর্ষ ভোক্তা বাজার চীনে শিল্প খাতের কর্মযজ্ঞ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির কারণে এলএনজির চাহিদা বাড়ছে। চীন ছাড়াও এশিয়ার অন্যতম ভোক্তা দেশ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈদ্যুতিক খাত ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে এলএনজির চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়েছে। এসব কারণেই জ্বালানি পণ্যটির প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিটের (বিটিইউ) স্পট প্রাইস ১২ ডলারের ওপরে এসে দাঁড়িয়েছে, যেখানে গত বছরের শুরুর দিকে দাম ছিল ২ ডলারেরও কম।
এ সময়ে একদিকে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা সংকুচিত হয়ে আসে। অন্যদিকে বাজারে চাহিদা না থাকলেও অধিক সরবরাহ বাজারকে ক্রমশ নিম্নমুখী করতে থাকে। যদিও বছরের শেষে এসে এলএনজির চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির অন্যতম রফতানিকারক দেশ কাতার, অস্ট্রেলিয়া ও নরওয়ে অপরিকল্পিত সরবরাহসংক্রান্ত জটিলতায় বাজারে চাহিদা পূরণে কিছুটা ব্যর্থ হয়েছে। সরবরাহ সংকটের এ সুযোগেই বেশি লাভ করতে সক্ষম হচ্ছেন মার্কিন রফতানিকারকরা। এছাড়া চলতি বছরের শুরুর সময়টাও এশিয়া ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে এলএনজির বাড়তি চাহিদা থাকার সম্ভাবনায় আরো বেশি লাভ ঘরে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে বৈশ্বিক বাজারে এলএনজির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের রেকর্ড ভেঙে চলতি বছরে আরো বেশি পরিমাণ রফতানির কথা ভাবছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (ইআইএ) তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারিতে প্রতিদিন দেশটি থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৮১০ কোটি ঘনফুট এলএনজি রফতানি হয়েছে, বছর শেষে গত নভেম্বরে যার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪০ কোটি ঘনফুটে। আর চলতি বছরে রফতানির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
বৈশ্বিক জ্বালানির বাজারবিষয়ক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেঞ্জির ভাইস চেয়ারম্যান ইড ক্রুকস মনে করেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এশিয়ার বাজারে প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলএনজির চাহিদা বৃদ্ধির যে ধারার সূচনা হয়েছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের রফতানির প্রাক্কলনকে ছাড়িয়ে যাবে।
করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এশিয়া-ইউরোপের ক্রেতারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ করে দিতে থাকে। অন্যদিকে শিল্পোৎপাদন বন্ধ থাকায় এ সময়ে এসব দেশে জ্বালানি পণ্যটির উদ্বৃত্ত তৈরি হয়। যদিও শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে ও করোনাভাইরাসের প্রকোপ কিছুটা কম থাকায় শিল্প-কারখানা চালুর সঙ্গেই সঙ্গেই দ্রুত এলএনজির মজুদ ফুরিয়ে আসতে থাকে এসব দেশে। অন্যদিকে এসব দেশের অন্যতম সরবরাহকারী কাতার, অস্ট্রেলিয়া ও নরওয়ের মতো দেশগুলো থেকেও আমদানি কমে আসে। ফলে সরবরাহ সংকটের এ অবস্থায় বাজার ধরার ভূমিকায় আসে যুক্তরাষ্ট্র। বাড়তি দামেই এসব বাজারে এলএনজির সরববরাহ অব্যাহত রেখেছে দেশটি।
ইড ক্রুকসের ভাষায়, এলএনজির বাজার এখন প্রত্যাশার একেবারে বিপরীতে অবস্থান করছে। জ্বালানি পণ্যটির চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে দাম যেমন বাড়ছে। তেমনি যুক্তরাষ্ট্রও বাড়তি দামে রফতানি করছে। এক কারণে চলতি বছর এলএনজির বাজার ধরতে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে নতুন নতুন উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে মনোযোগ দিচ্ছে।