রিজার্ভে চোখ বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তাদের

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মহামারীর মধ্যেই অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ৪৩ বিলিয়ন ডলার। এ অবস্থায় রিজার্ভের অর্থ থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কথা বলেছিলেন সরকারপ্রধান। এবার দেশের বৃহৎ শিল্পোদ্যোক্তারাও রিজার্ভ থেকে স্বল্প সুদে ঋণ চাওয়া শুরু করেছেন।
এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেয়ার আবেদন জানিয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ)। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের পশাপাশি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়েও চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি। আইপিপি খাতের বিদ্যুৎ উদ্যোক্তাদের দাবি, রিজার্ভ থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের যন্ত্রপাতি আমদানিতে স্বল্প সুদে ঋণ দিলে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকও লাভবান হবে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, রিজার্ভ থেকে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অবকাঠামো প্রকল্পে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এমন উদ্যোগ নেয়া হলে বিদ্যুৎ খাতকে যেন অগ্রাধিকার দেয়া হয়। সংগঠনটি বলছে, এ খাতের সব আইপিপি প্রকল্প সরকার থেকে সার্বভৌম গ্যারান্টি পায়। এ খাতের আয় বৈদেশিক মুদ্রায় হয়, আবার যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য বিদেশ থেকে ঋণও নেয়া হয়। বর্তমানে প্রায় ৩-৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশী ঋণ রয়েছে। যদি রিজার্ভ থেকে ঋণ পাওয়া যায়, তাহলে বড় অংকের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।
সংগঠনটির দাবি, বিদেশী উৎস থেকে যেসব ঋণ নেয়া হচ্ছে, তার সুদহার প্রায় ৬ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে যদি ৩-৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হয়, তাহলে উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বেশি মুনাফা পাবে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আইপিপি খাতের বিদ্যুৎ প্রকল্প আসছে। এজন্য আরো ২-৩ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রয়োজন হবে। এ অর্থও রিজার্ভ থেকে জোগান দেয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে সংগঠনটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইপিপিএ সভাপতি ইমরান করিম বলেন, রিজার্ভের অর্থ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্ড মার্কেটে বিনিয়োগ করে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বন্ডের সুদহার কম থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যদিকে দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বিদেশী বিভিন্ন উৎস থেকে এরই মধ্যে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। এ ঋণের জন্য ৬ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে দিন শেষে দেশের অর্থই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ইমরান করিমের ভাষ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি রিজার্ভ থেকে বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে ৩-৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক উপকৃত হবে। পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার অপচয়ও রোধ হবে।
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে উদ্যোক্তারা ফেরত দিচ্ছেন না। এখন রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দিলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান করিম বলেন, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিরা যাতে ঋণ নিতে না পারেন তার জন্য উদ্যোগ নেয়া দরকার। রিজার্ভ থেকে ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), ঋণ বিতরণকারী ব্যাংক ও গ্রাহকের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হতে পারে। বিপিডিবির কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে উদ্যোক্তারা যে অর্থ পাবেন, তা ব্যাংক হিসাবে জমা হবে। সে অর্থ থেকে ঋণ সমন্বয়ের পর তবেই উদ্যোক্তাদের হিসাবে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলে খেলাপি হওয়ার সুযোগ থাকবে না।
তবে এখনই বেসরকারি খাতে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেয়ার বিপক্ষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রিজার্ভ থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে এরই মধ্যে ঋণ দেয়া হয়েছে। তবে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়ার বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। রিজার্ভ থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ দিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পূর্বানুমোদন লাগবে। পর্ষদ অনুমোদন দিলে এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সব মিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে রিজার্ভ থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে না। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তাগাদা এলে সেটি ভিন্ন কথা।