কার টাকায় নির্মাণ হবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ রাজশাহী মহানগরীর সোনাদীঘি এলাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ নিয়ে ফের মুখোমুখি রাজশাহী জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন। শুরুতে এই জায়গায় বহুতল মার্কেট করার সিদ্ধান্ত নিলেও সে অবস্থান থেকে সরে এসে শহীদ মিনার করতে আগ্রহী জেলা পরিষদ। তবে এর নির্মাণের ব্যয় জেলা পরিষদ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মেটাতে চায়। এদিকে, এই স্থানে শহীদ মিনারের নকশা দেখিয়ে ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ এনে রেখেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। ফলে তিনি দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বরাদ্দে সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনাতেই এই শহীদ মিনার হবে। তাকে সায় দিয়েছেন রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশাও। ফলে এই শহীদ মিনার কার নেতৃত্বে কোন বরাদ্দে হবে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। এদিকে আজ বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসে, এই স্থানে শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু।
রাজশাহী মহানগরীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার না থাকায় রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষের আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা দূর করতে বর্তমান মেয়রের নেতৃত্বে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ বিষয়ে নকশাও তৈরি হয় মহানগরীর সোনাদীঘি এলাকায় ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত জায়গাকে কেন্দ্র করে। একনেকে এই শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা। কিন্তু, জায়গাটির আইনসঙ্গত মালিক জেলা পরিষদ এই জায়গায় এতদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না। বরং সেখানে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের জন্য জেলা পরিষদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। এ খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে রাজশাহীবাসী। সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক নেতারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের দাবিতে কর্মসূচি পালন শুরু করেন। রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাও এই দাবিতে রাস্তায় দাঁড়ান। এমন চাপের মুখে রাজশাহী জেলা পরিষদ এখন সেই জমিতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। রাজশাহী জেলা পরিষদও সেখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সেটি সরকারের বরাদ্দ দেওয়া টাকায় নয়, জেলা পরিষদ নিজস্ব অর্থে এবং নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জেলা পরিষদের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নন সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। তারা এ ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছেন। রাজশাহী জেলা পরিষদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পুরাতন ভবনের জমিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ও রাজশাহীবাসী যে দাবি তুলেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) জেলা পরিষদে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নাঈমুল হুদা রানা, রবিউল আলম, নারগীস বিবি, গোলাম মোস্তফা, মোফাজ্জল হোসেন, সফিকুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান ফিরোজ, আবু জাফর প্রামানিক, আসাদুজ্জামান মাসুদ, আজিবুর রহমান, নূর মোহাম্মদ, সংরক্ষিত নারী সদস্য কৃষ্ণা দেবী, শিউলী রাণী সাহা, রাবিয়া খাতুন, জয় জয়ন্তী সরকারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাজশাহী জেলা পরিষদের সভায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সোনাদিঘীর পাড়ে একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার নির্মাণে জনগণের দাবি এবং সংসদ সদস্য ও মেয়রের প্রত্যাশার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে সভায় আলোচনা ও পর্যালোচনা করা হয়। সার্বিক পর্যালোচনা শেষে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা সেখানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে একমত হন। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি জেলা পরিষদের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ও অর্থায়নে নির্মাণেরও সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে দ্রুতই চিঠি পাঠানো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তৈরি করার জন্য সাড়ে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এই টাকা দিয়ে সিটি করপোরেশন শহীদ মিনার নির্মাণ করবে। জেলা পরিষদের শহীদ মিনার করা দায়িত্ব নয়। জেলা পরিষদের এই ঘোষণায় সংকটের সমাধান হলো নাকি নতুন সংকট তৈরি হলো তা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, বিজয় দিবসের একটা দিন পরেই সেটা দেখা যাবে। এ ব্যাপারে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘রাজশাহীতে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এখন জেলা পরিষদ তার ওপর দিয়ে কোনও ঘোষণা দিতে পারে না। তারা সম্মত হয়েছে। এখানে সিটি করপোরেশনের মেয়র রয়েছেন, আমি সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছি। কীভাবে কাজটি করা যায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে আলোচনায় আসতে পারেন।’ এসব ব্যাপারে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকারকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
এর আগে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কুমারপাড়াস্থ রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ১৪ দলের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিত্যক্ত স্থানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের। সেইসাথে রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি, ভাষাসৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ বিজয় দিবসে সকাল সাড়ে ১১টায় এই স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। এসময় ভাষাসৈনিক মোশারফ হোসেন আকুঞ্জী, ভাষাসৈনিক আবুল হোসেনসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এবং রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, সিটি মেয়র খায়রুজ্জমান লিটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে অনুষ্ঠানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার উপস্থিত ছিলেন না।