যশোরে ঘন কুয়াশায় বোরোর বীজতলা নিয়ে উদ্বিগ্ন চাষিরা

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোর অঞ্চল গত কয়েকদিন ধরে ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা পড়েছে। দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখ মিলছে না। টানা কুয়াশার কারণে বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়ে চাষিরা তাদের বোরো চাষের প্রস্তুতি নিতে পারছেন না। আর যারা ইতেমধ্যে বীজতলা তৈরি করেছেন তারা পড়েছেন বিপাকে। বীজতলার চারার গোড়া ও পাতা পচে হলদে হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে যশোরে ১ লাখ ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই টার্গেট নিয়ে কৃষকও বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করেন। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি। কিন্তু বোরোর বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়ে এসে এ অঞ্চল গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। যেকারণে এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ এলাকায় কৃষক বীজতলা তৈরি শুরু করতে পারছেন না। সদর উপজেলার ইছালী এলাকার কৃষক হাদিউজ্জামান মিলন বলেন, বোরো মৌসুম আসলে তারা ধানের বীজতলা নিয়ে বেশি চিন্তায় থাকেন। অন্যান্য বছরে বীজতলা তৈরির পর মাঝামাঝি সময়ে এসে শীত-কুয়াশার কবলে পড়েন। কিন্তু এবার আগেভাগেই মাত্রাতিরিক্ত কুয়াশা দেখা দেওয়ায় তারা বীজতলা নিয়ে চিান্তত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, ৫ বিঘা জমিতে ধান আবাদের টার্গেট নিয়ে গত এক সপ্তাহ আগে বীজতলায় ধানের বীজ ফেলেছি। ইতোমধ্যে জমিতে ধানের চারাও গজিয়েছে। কিন্তু কুয়াশার কারণে তা হলদে রঙ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করছি।
একই কথা বলেন, বাঘারপাড়ার রায়পুর গ্রামের শামসুর রহমান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ১০ কাঠা জমিতে বীজতলা তৈরি করেছি। ধানের চারাও গজিয়েছে। কিন্তু সমস্যা দেখা দিয়েছে ঘন কুয়াশা। কৃষক শামসুর রহমান বলেন, আমার এলাকায় অনেক চাষিই এখন বীজতলা প্রস্তুত করে ফেলে রেখেছেন। বীজতলায় ধানের বীজ ফেলতে সাহস পাচ্ছেন না। কারণ অতীতে তারা মাত্রাতিরিক্ত ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে বীজতলা নষ্ট হওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই বৈরী এ সময়ে তারা সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। একই এলাকার চাষি আব্দুল আলিম বলেন, অন্য বছরে এ সময়ে ধানের চারা তৈরির কাজ পুরোপুরিই শেষ করে ফেলেন তারা। কিন্তু এবছর বোরোর শুরুটা ভালো দেখা যাচ্ছে না। বীজতলা তৈরির বিলম্বের কারণে বোরো আবাদও পিছিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, যেসব জমিতে ইতোমধ্যে ধানের চারা গজিয়েছে সেগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে কোনোরকম রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর যশোরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) দীপঙ্কর দাস বলেন, আমরা কৃষকদের সাথে এ পরিস্থিতিতে নিবিড়ভাবে যোগাযোগ করছি। বিশেষ করে যারা ইতোমধ্যে ধানের বীজ ফেলেছেন সেসব কৃষকদের জমি থেকে ঠান্ডা পানি বের করে দিয়ে সেচের মাধ্যমে বেশি বেশি গরম পানি দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া সাদা পলিথিন শিট দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখারও কথা বলেছি। তিনি বলেন, বীজতলার যত বেশি পরিচর্যা করা হবে তত ঝুঁকির সংখ্যা কমে যাবে। আর যারা এখনো জমিতে কোনো ধানের চারা ফেলেননি তাদের আরও দু একদিন দেরি করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আশা করছি বৈরী এ আবহাওয়া সহসা কেটে যাবে।