গম রফতানিতে লাগাম টানতে যাচ্ছে রাশিয়া?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনা মহামারীর মধ্যে পুরো বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীন বাড়ছে। টানা ছয় মাস ধরে খাবার কিনতে গিয়ে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। এ ধারাবাহিকতায় নভেম্বরে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম প্রায় ছয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে উঠেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। একই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে রাশিয়াতেও। বাম্পার ফলনের পরও দেশটিতে গম ও গম থেকে তৈরি খাবারসহ কয়েকটি নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। করোনা মহামারীর মধ্যে খাবারের দাম অনেক বেশি বাড়লে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে খাবারের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে না পারায় সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেছেন রুশ প্রেসডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সম্ভাব্য সংকট এড়াতে রফতানিতে লাগাম টানতে চাইছে মস্কো। এর জের ধরে গমের রফতানি শুল্ক বাড়ানো কিংবা কৃষিপণ্যটির রফতানিতে কোটা আরোপের চিন্তাভাবনা করছে রাশিয়া সরকার।
রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারীর ধাক্কায় রাশিয়ায় অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। অনেকের আয় আগের তুলনায় কমেছে। এ ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) দেশটির মানুষের সামগ্রিক আয় আগের প্রান্তিকের তুলনায় কমেছে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে আয় কমলেও খাবার কিনতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে রাশিয়ার অধিবাসীদের। করোনা মহামারীর মধ্যে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে দেশটিতে রুটির দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। একই কারণে মহামারীকালে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে রাশিয়ায় গমের আটার দাম ১২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। সূর্যমুখী তেলের দাম বেড়েছে রেকর্ড ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
রাশিয়া বিশ্বের শীর্ষ গম রফতানিকারক দেশ। দেশটিতে এবারের মৌসুমে কৃষিপণ্যটির ফলনও হয়েছে ভালো। এর পরও গম থেকে তৈরি আটা ও রুটির দাম দিন দিন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে যেতে শুরু করেছে। এর পেছনে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গাফিলতিকে দায়ী করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। তার মতে, বাজারে সরকারি নজরদারি শিথিল হয়ে পড়েছে। সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে খাবারের দাম দিন দিন বাড়ছে।
পুতিনের এমন মন্তব্যের পর পরই নড়েচড়ে বসেছে রুশ প্রশাসন। মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানা ও বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে সম্ভাব্য সব ধরনের উদ্যোগ নিতে চাইছে ক্রেমলিন। আর এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গমের রফতানি শুল্ক বাড়ানো ও কোটা নির্ধারণের চিন্তা সামনে এসেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুনের মধ্যে (সাড়ে চার মাসের জন্য) গম রফতানির পরিমাণ ১ কোটি ৭৫ লাখ টনের কোটার মধ্যে বেঁধে রাখতে পারে রাশিয়া। এজন্য রফতানি নিরুৎসাহিত করতে বাড়ানো হতে পারে গমের রফতানি শুল্ক। তবে সম্ভাব্য শুল্ক হারের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসেনি রুশ প্রশাসন। চলতি সপ্তাহের শেষে এ বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। ওই বৈঠক শেষে গমের কোটা কিংবা নতুন রফতানি শুল্ক নিয়ে ঘোষণা দিতে পারে রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়।
রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন বলেন, যেকোনো মূল্যে খাবারের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে কার্যকর উদ্যোগ নেবে রাশিয়া সরকার। সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়ার বিপরীতে খাবারের এমন মূল্যবৃদ্ধি মহামারী পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে পারে। তাই রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দেশে আমরা দ্রুত বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ শুরু করছি। এ সময় তিনি আরো বলেন, মহামারীর মতো সংকটময় পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা না নিতে উৎপাদনকারী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং রফতানিকারকদের অনুরোধ করছি।
গত দুই বছর রাশিয়ার গম রফতানিতে মন্দা ভাব বজায় ছিল। এর পরও বিশ্বের শীর্ষ গম রফতানিকারকের তকমা ধরে রেখেছে দেশটি। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে রাশিয়া থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৩৫ লাখ টন গম রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫০ শতাংশ কম।
চলতি বছর রাশিয়া থেকে আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়ে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৬০ লাখ টন গম রফতানির পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। এর মধ্য দিয়ে এক বছরের ব্যবধানে রাশিয়া থেকে কৃষিপণ্যটির রফতানি বাড়তে পারে ২৫ লাখ টন। রাশিয়ার ইতিহাসে ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি ৪ কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার টন গম রফতানির রেকর্ড হয়েছিল। ওই বছরই বিশ্বের শীর্ষ গম রফতানিকারকের স্বীকৃতি পায় দেশটি।
এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদনে রাশিয়ার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাতে আরো বলা হয়েছে, চলতি মাসের মধ্যে সূর্যমুখী তেলের দাম কমে না এলে পণ্যটির রফতানিতে শুল্ক বাড়াতে পারে রুশ সরকার। এরই মধ্যে সূর্যমুখী তেলবীজ ও সরিষা রফতানিতে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছে দেশটি। এমনকি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী এবং রফতানিকারকরা যাতে ইচ্ছেমতো দাম বাড়াতে না পারেন, সেজন্য সূর্যমুখী তেল ও চিনির সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দেয়ার চিন্তাভাবনাও করা হচ্ছে।
রয়টার্স, ওয়ার্ল্ডগ্রেইনডটকম ও আরটি অবলম্বনে