ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি এখনো

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার প্রভাবে রফতানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক মহলের উদ্যোগ ও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কারখানা থেকে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের তালিকা নির্দিষ্ট ফরম্যাট অনুযায়ী যাচাই-বাছাই শেষে এ নগদ সহায়তা দেয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। কিন্তু এ সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনো তৈরি হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
এ উদ্যোগের আওতায় করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া রফতানিমুখী পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের শ্রমিকদের মাসে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেয়ার কথা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য এমন নগদ সহায়তার বিধান রেখে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা-২০২০ জারি করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মানির বাজেট সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে এ কার্যক্রমে অর্থায়ন করবে সরকার। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তিও গতকাল সই হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রয়োজনীয় তালিকা তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ৭ অক্টোবর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ সহায়তা নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘রফতানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পের কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা-২০২০’ অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এ নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এতে আরো জানানো হয়েছিল, এ কার্যক্রমের আওতায় নির্বাচিত প্রত্যেক শ্রমিককে মাসিক ৩ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা দেয়া হবে। একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ তিন মাস এ নগদ সহায়তা পেতে পারেন। তবে নির্বাচিত শ্রমিকরা এ তিন মাসের মধ্যে কোথাও কাজে যুক্ত হলে এ সহায়তা পাবেন না। এজন্য একটি সমন্বিত কমিটির মাধ্যমে শ্রমিকদের তালিকা করা হবে।
এ বিষয়ে শ্রম অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, এতদিন নীতিমালা অনুসরণ করে তালিকা নেয়া হচ্ছিল, কিন্তু এখনো পরিমাণ কম। কতজনের তালিকা জমা পড়েছে, তা ১৩ ডিসেম্বর আমরা সুনির্দিষ্ট জানতে পারব। যতটুকু পাওয়া যায় আমরা চাচ্ছি, এ মাসের মধ্যেই আমরা দুটি পরিশোধ করব।
তিনি আরো বলেন, তালিকা তৈরি সংক্রান্ত কাঠামোটি যথাযথভাবে অনুসরণের প্রক্রিয়াটিও বেশ জটিল। যেমন অনেক শ্রমিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর নেই। এখন তাদের খুঁজে এনে নাম অন্তর্ভুক্ত করাটা জটিল হয়ে পড়েছে। অর্থায়নকারীদের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছিল, এ সহায়তার অর্থ তিনটি ধাপে পরিশোধ করা যাবে, যার দুটি ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করার পর কারখানা কর্তৃপক্ষগুলো ৬০ হাজার শ্রমিকের তালিকা দিয়েছিল। তবে সেগুলো শুধু নাম দেয়া হয়েছে। যথাযথ কাঠামো অনুযায়ী হয়নি বলে বেশির ভাগই ফেরত গিয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে আশা করছি, এরই মধ্যে ১০ হাজার শ্রমিকের নাম তালিকায় হয়তো অন্তর্ভুক্ত করা গিয়েছে। কাজ হারানো শ্রমিকদের খুঁজে বের করতে কারখানা কর্তৃপক্ষের সময় বেশি প্রয়োজন হচ্ছে। ১৫ ডিসেম্বর এ নিয়ে একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে আমরা আশা করছি, এ মাসের মধ্যেই প্রথম দুটি ধাপের টাকা বিতরণ করা সম্ভব হবে।
এ সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত নীতিমালায় বলা হয়েছে, এ কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে শ্রম অধিদপ্তর। কার্যক্রমের বাজেট বরাদ্দও অধিদপ্তরের অনুকূলেই দেয়া হবে। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রফতানিমুখী তৈরি পোশাক এবং চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্প কারখানা এবং শিল্প সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করা হবে। অর্থাৎ কার্যক্রমটি বেসরকারি শিল্প মালিকদের সক্রিয় সহযোগিতার ভিত্তিতেই বাস্তবায়িত হবে।
নীতিমালায় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের কথাও বলা হয়েছে। আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সদস্য সচিব হবেন শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক মনোনীত একজন কর্মকর্তা ও সভাপতিত্ব করবেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এ কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন শ্রম অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক, কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন
অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স অফিসার, কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট চার শিল্প সংগঠনের (বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এলএফএমইএবি ও বিএফএলএলএফইএ) প্রতিনিধি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি এবং শ্রম অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা।
এ কমিটির কর্মপরিধি সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে, কমিটি কারখানা নির্বাচিত ও শিল্প সংগঠনগুলোর যাচাইকৃত উপকারভোগী শ্রমিকের তালিকা বাছাই ও অনুমোদনের জন্য সুপারিশ প্রদান করবে। এছাড়া বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, সমন্বয় সাধন ও বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কোনো সমস্যার উদ্ভব হলে তা সমাধানও করবে কমিটি। এ-সংক্রান্ত বাস্তবায়ন প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার পাশাপাশি তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর দায়িত্বও কমিটি পালন করবে। এছাড়া কমিটি প্রতি মাসে অন্তত একদিন সভায় বসবে। এক্ষেত্রে এ কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের স্বার্থে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সভারও আয়োজন করবে কমিটি।