মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চান তালিকায় নিজ নাম সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়া গোলাম মোস্তফা

0

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট ॥ দেড় বছরের শিশু কন্যা ও স্ত্রীকে রেখে দেশ স্বাধীনের সংগ্রামে অংশ নিই। ভারতে প্রশিণ গ্রহণ শেষে সুন্দরবন অঞ্চলে মেজর জিয়াউদ্দীনের নেতৃত্বে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারিনি। ভাতা বা সুযোগ সুবিধা নয়, পরিবারটি শুধু চাই সম্মান ও স্বীকৃতি। মৃত্যুর আগে আমি অন্তত জেনে যেতে চাই, এদেশের স্বাধীনতার জন্যে যারা যুদ্ধ করেছে সরকারের তালিকআয় তাদের সাথে আমার নামটিও লেখা আছে। বাগেরহাট শহরের সরুই এলাকার অশতিপর রাজ মিস্ত্রী গোলাম মোস্তফা মোলা ‘৭১ এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে আপুত হয়ে এভাবেই কথা বলছিলেন। জীবনের শেষ বয়সে স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে নিয়ে কঠিন সময় পার করছেন। ডিসেম্বর বিজয়ের মাস শুরু। এবিজয় ছিনিয়ে আনতে যুদ্ধে অংশ নিয়েও নিজের প্রাপ্য স্বীকৃতিটুকু মেলেনি প্রায় অর্ধশত বছরেও।
গোলাম মোস্তফা বলেন, ছোটবেলা থেকেই রাজ মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করতাম। তেমন লেখাপড়া করতে পারেনি। ১৯৬৮ সালে পিরোজপুরে কালিকাঠী গ্রামের নাসরিনের সাথে বিয়ে হয়। এরপরে আমাদের কন্যা সন্তান রেখসোনা জন্ম গ্রহণ করে। কিন্তু এর মধ্যে ডাক আসে যুদ্ধের। স্ত্রী-শিশু সন্তান ফেলে পালিয়ে চলে যাই ভারতে। ভারতের বিহারে বীরভূম চাকুলিয়র কেন্দ্রে প্রশিণ শেষে ফিরে আসি দেশে। ’৭১এর ২০শে এপ্রিল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। বাগেরহাটের সুন্দরবন সংলগ্ন রায়েন্দা এলাকায় মেজর জিয়াউদ্দীনের নেতৃত্বে পাক হানাদারদের মুখোমুখি একাধিক বার সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়েছি। তখন আমরা ৩০ জন রাজাকারকে হত্যা করি। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন ঘোষণা হওয়ার পর পিরোজপুর টাউন বিদ্যালয়ের মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ত্র জমা দিই। ২০০০ সাল থেকে একাধিকবার মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভূুক্ত করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে ঘুরেও শেষ পর্যন্ত নাম লেখাতে পারলাম না। বর্তমানে অসুখ-বিসুখে জর্জরিত হয়ে আছি। চলাফেরা করতে কষ্ট হয়, অনেক স্মৃতি ভুলে গেছি। মেজর অবসরপ্রাপ্ত এইচ এম নুরুল হক বলেন, গোলাম মোস্তফা মোলা আমার সহযোদ্ধা। একসংগে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু যুদ্ধ করেও গোলাম মোস্তফা আজও যোদ্ধা হতে পারেননি। পিরোজপুরের সাবেক পৌর মেয়র এমডি লিয়াকত আলী বাদশা ও সাবেক এমপি আউয়ালসহ আমরা শতাধিক লোক একসংগে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম । গোলাম মোস্তফা মোলা লেখাপড়া কম জানতো, তাই সে কখনো লাল মুক্তিবার্তা সংসদে যায়নি। তাই তার নামও তালিকায় আসেনি। অস্ত্র জমা দেবার তালিকাটি রয়েছে তার। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পার হলেও আজও স্বীকৃতি মেলেনি তার। স্বাধীনতায় ওই পরিবারের অবদান ছিল। স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য তারা। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এন্ট্রি করে তাদের সরকারের সব ধরনের প্রকার সুযোগ-সুবিধা দেয়ার দাবি জানান তিনি। গোলাম মোস্তফার স্ত্রী নাসরীন বেগম বলেন, কোলের শিশু সন্তান রেখে স্বামী যখন যুদ্ধে অংশ নেয় সেই সময়ে আট নয় মাস কুড়েঘরে এখানে সেখানে পাক হানাদার বাহিনীর ভয়ে দিন পার করেছি। রাজমিস্ত্রী স্বামীর সামান্য আয়ের অর্থ দিয়ে আমার পাঁচ ছেলে ও চার মেয়ের কাউকেই ভালো লেখাপড়া করাতে পারিনি। বর্তমানে স্বামী খুব অসুস্থ, হার্ট ও চোখের সমস্যা রয়েছে। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই, যাতে আমার স্বামী একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পান এবং আমি যাতে আমার পরিবারটাকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসাবে পরিচয় দিতে পারি, এইটুকুই আমাদের চাওয়া পাওয়া।