২২ বছর পর প্রাণ ফিরেছে কামারগাড়া বিলে

0

মেহেরপুর সংবাদদাতা॥ এক সময় ‘ঝপ ঝপাঝপ পলো বাও/ মজার মজার মাছ খাও’ মাছ ধরার উৎসবে এ স্লোগান শোনা যেত মেহেরপুরের মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু সেই স্লোগান এখন আর তেমন শোনা যায় না। কেননা বিলে মাছ কমে গেছে। ফলে প্রভাব পড়েছে মাছ ধরার উৎসবেও। ছন্দময় ঝপ ঝপাঝপ শব্দের তালে তালে পড়ছে পলই আর চাকজালের। চাকজালে ধরাপড়া জাপানি-রুইয়ের শব্দ মৎস্য শিকারিদের গতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এভাবেই এলাকার আড়াই শতাধিক শৌখিন মৎস্য শিকারির পদভারে মুখরিত ছিল গাংনী উপজেলার মালশাদহ গ্রামের কামারগাড়া বিল। জাপানি, রুই, মৃগেল, মিনারকাপ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির মাছ ধরে উৎসব করেছেন শৌখিন মৎস্য শিকারিরা। সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকাল থেকেই এলাকার শত শত মৎস্য শিকারি পলই ও চাকজাল নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন বিলে। গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া, শিশিরপাড়া, নওপাড়া, সাহারবাটি, ভাটপাড়া, গাঁড়াডোব, মালশাদহ, হিজলবাড়িয়াসহ আশপাশের ৮-১০ গ্রামের মানুষ মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠে। অনেকে দু-তিন কেজি ওজনের মাছ ধরতে পারলেও অনেকেই ফিরেছেন শূন্য হাতে।
জানা গেছে, মালশাদহ গ্রামের ইনামুল হকের ১০ বিঘা, দবির উদ্দিনের দুই বিঘা, আশরাফুল ইসলামের পাঁচ বিঘা, হাজি মোস্তফার ১০ বিঘা, ঠান্ডু মিয়ার আট বিঘা, চৌগাছা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের তিন বিঘা, মইনদ্দিন হোসেনের চার বিঘা, আমারত মিয়ার তিন বিঘাসহ প্রায় ৬-৭শ বিঘা এলাকাজুড়ে এ বিলটিতে সারা বছর চাষ হলেও দীর্ঘ মেয়াদি অতি বর্ষণে মালশাদহ, হিজলবাড়িয়া চৌগাছা, সাহারবাটি, কুরবাড়িয়া মালশাদহ গ্রামের পানি নেমেই জলাশয় সৃষ্টি হয়। মেহেরপুর সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের আমিনুল ও বজলুর রহমান জানান, আমাদের গ্রাম থেকেই প্রায় ৫০-৬০ জন মাছ ধরতে এসেছি। সবাই দু-একটা করে বড় মাছ পেয়েছি। হিজলবাড়িয়া গ্রামের আমানুল ইসলাম বলেন, মাছ ধরা আমাদের পুরোনো ঐতিহ্য। একটা তিন কেজি ওজনের জাপানি পেয়েছি। হিজলবাড়িয়া গ্রাম থেকে ২৫-৩০ জন মাছ ধরা উৎসবে এসেছেন বলে জানান তিনি।
বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আফসার আলী জানান, আমাদের গ্রাম থেকে ৮-১০ জন মাছ ধরতে এসেছি। আমি এবং রকিবুল ইসলাম একটা করে ২-৩ কেজি ওজনের জাপানি রুই মাছ ধরেছি। এছাড়া গ্রামের অনেকেই জাপানি, মৃগেল, রুই, তেলাপিয়াসহ ছোট ছোট দেশি মাছ পেয়েছেন। গাঁড়াডোব গ্রামের আরিফুল ইসলাম জানান, ১৯৯৮ সালে এভাবে খালবিলে মাছ পাওয়া গেছে। দীর্ঘ ২২ বছর পর বিলে মাছ পেয়ে সেই আগের দিনে ফিরে গেছি। যেন প্রাণ ফিরেছে বিলে। মালশাদহ গ্রামের আমারত আলী জানান, সম্প্রতি অতি বর্ষণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুকুর ডুবে মাছ বিলে এসেছে। ফলে এবার মাছ ভালো পাওয়া যাচ্ছে।