চৌগাছা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প জীবিকার সন্ধানে গ্রাম ছাড়ছেন অনেকে

0

এম.এ.রহিম, চৌগাছা (যশোর)॥ চৌগাছায় মৃৎশিল্পীদের ঘরে ঘরে নেমে এসেছে হাহাকার। বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে দেশের চিরচেনা মৃৎশিল্প। দেশের অন্য এলাকার মতো মাটির তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপট। দুর্দিন নেমে এসেছে কুমারপাড়ার সংসার জীবনে। নতুন কর্মসংস্থানের খোঁজে অনেকে গ্রাম ছাড়ছেন। উপজেলার সবচেয়ে বড় কুমারপাড়া ধুলিয়ানী, হাজরাখানা, সাঞ্চাডাঙ্গা, নিয়ামতপুর ও পৌর এলাকায় ইছাপুরগ্রাম। এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে এসব গ্রামের অর্ধশতাধিক কুমার পরিবার। সরেজমিন দেখা গেছে, কুমার ও তাদের পরিবার পরিজনের কষ্টের কাহিনী। অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। কুমারপাড়ার শিশুরা ঝরে পড়ছে শিক্ষা থেকে। এ েেত্র যত না অভিভাবকদের অসচেতনতা, তার চেয়ে বেশি দায়ী অভাব-অনটন। এ ছাড়া করোনার কারণে প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়গুলো শিক্ষার সুযোগ পেলেও স্কুল-কলেজ দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় লেখাপড়ার উৎসাহ হারিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছে শিশুরা। সরেজমিন পরিদর্শনকালে ধুলিয়ানী গ্রামের মাটির সামগ্রী তৈরির কাজে ব্যস্ত গৃহবধূ পুতুল রানী পাল বলেন, এখন কুমার পাড়ার আয় নেই বললেই চলে। সামনে শীতের মৌসুমে আমরা চরকা দিয়ে ভাঁড়, কলস, হাঁড়িসহ বিভিন্ন রকম বাসন-কোসন ও খেলনা তৈরি করতাম। কিন্তু এখন চরকা ব্যবহার হয় না। কারণ বর্তমানে শীতের মৌসুমেও ভাড় কলস ইত্যাতি তেমন বিক্রি হয় না। তাছাড়া চরকা দিয়ে জিনিসপত্র তৈরি করে ভালো দাম পাওয়া যায় না। কারণ প্লাস্টিক সামগ্রীতে বাজার ছেয়ে গেছে। হাজরাখানা গ্রামের নিমাই পাল বলেন, এ পেশাটি টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিকবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার আবেদন আমরা করেছি। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অবহেলার কারণে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না এই পেশার মানুষ। ফলে অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে এ পেশা ও শিল্পটি। কেবলমাত্র পূর্ব পুরুষের পেশাকে টিকিয়ে রাখার জন্যই এখনো অনেকে শত কষ্টের মধ্যেও এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন। মৃৎশিল্পী হারান পাল বলেন, সরকারি-বেসরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধাই তারা পান না। এলাকার জনপ্রতিনিধিরা শুধু নির্বাচনের সময় বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পরে সব ভুলে যান। তিনি বলেন, বাজারে প্লাস্টিক সামগ্রীর ভিড়ে প্রায় বিলুপ্তির পথে দেশের চিরচেনা মৃৎশিল্প। মাটির তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার কমে যাওয়ায় বদলে যাচ্ছে কুমারপাড়ার দৃশ্যপট। দুর্দিন নেমে এসেছে কুমারপাড়ায়। নতুন কর্মসংস্থানের খোঁজে অনেকে গ্রাম ছাড়ছেন।