নো মাস্ক, নো সার্ভিস : সর্বত্র ঢিলেঢালা

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা। ধানমণ্ডি থানা নির্বাচন অফিসে ব্যস্ততম সময় কাটাচ্ছেন একজন কম্পিউটার অপারেটর। তার কাছে জাতীয় পরিচয়পত্রের সেবা নিতে অনেকেই লাইন ধরে বসে আছেন। সেবাগ্রহীতাদের মুখে মাস্ক থাকলেও সেবা দাতার মুখে তা অনুপস্থিত। অবশ্য অফিসের দরজায় বড় করে লেখা আছে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’। প্রায় একই দৃশ্য ওই ভবনে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের শাখায়। ব্যাংকে উপস্থিত গ্রাহকদের প্রায় সবার মুখে মাস্ক থাকলেও কর্মকর্তাদের অনেকের মুখে মাস্ক নেই। অধিকাংশ কর্মকর্তা মাস্ক গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন।
কিছু সময় অবস্থান করে দেখা গেছে, গলায় ঝুলানো মাস্ক কখনও কখনও মুখে উঠছে। কিন্তু একনাগাড়ে কেউই মাস্ক মুখে রাখছেন না। মাস্ক ব্যবহার ছাড়া কেউ যেন সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলোতে সেবা না পায়, সেজন্য ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি ব্যাপকভাবে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এ ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণার পর বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয়। কিন্তু নির্দেশনা বাস্তবায়নে অবহেলা দেখা গেছে সর্বত্র।
গতকাল রাজধানীর কয়েকটি জনাকীর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাস্ক ব্যবহারে এখনো উদাসীন সাধারণ মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, ১লা নভেম্বর থেকে দেশের সকল দোকান, বিপণি বিতানে মাস্ক পরা ছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতা ও কর্মচারীরা প্রবেশ করতে পারবেন না। পণ্য বিক্রি এবং সেবা দেয়া নিষিদ্ধ। ফলে মাস্কবিহীন ক্রেতা- বিক্রেতা, কর্মচারী কেউ মার্কেটে ও দোকানে প্রবেশ করবেন না। যদি কেউ প্রবেশ করেন তাকে সেবা দেয়া হবে না। এমন ঘোষণার তৃতীয় দিনেও কোথাও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আগের মতোই চলছে সেবা দেয়া-নেয়ার কাজ। মঙ্গলবার রাজধানীর পীর ইয়ামেনি মার্কেট, গুলিস্তান শপিংমল, বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট, নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণি বিতান ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের অনেকের মুখে নেই মাস্ক। মার্কেটে প্রবেশ মুখ কিংবা দোকানে কোথাও নেই সচেতনতামূলক ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ পোস্টার। দোকানগুলোতে একাধিক ক্রেতার সমাগম হলেও মানা হচ্ছে না কোনো রকমের স্বাস্থ্যবিধি। অনেকেই মুখের নিচে কিংবা গলায় ঝুলিয়ে রেখেছেন মাস্ক। কেউ হাতে ও পকেটে রেখে মার্কেটসহ বিভিন্ন বেসরকারি দপ্তরে প্রবেশ করেছেন। কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’-এর বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা পাননি। ক্রেতারা আগের মতোই আসা-যাওয়া করছেন। শুনেছি সরকার মাস্ক ব্যবহারের উপর কঠোর হয়েছে। সকল ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ হলে আমরাও নিয়ম মেনে চলবো। কাপড় ব্যবসায়ী সাজ্জাত হোসেন বলেন, মাস্ক পরতে ভালো লাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে, এতে বিরক্তি লাগে। তার ধারণা, করোনা আক্রমণ করলে মাস্ক আটকাতে পারবে না। যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারাও মাস্ক পরেছেন।
পীর ইয়ামেনি মার্কেটে পাঞ্জাবি কিনতে আসা জহির উদ্দীন বলেন, যখন করোনায় বেশি লোক মারা গেছে, তখন মাস্কের ব্যবহার অনেক বেশি ছিল। আমিও মাস্ক পরে ছিলাম। এখন আর ইচ্ছা করছে না। একটা মানুষ কতক্ষণ আর মাস্ক পরে থাকতে পারে। মাস্ক পকেটে আছে। কোথাও প্রয়োজন মনে করলে ব্যবহার করি। এখন মানুষের মধ্যে করোনা আতঙ্ক কমে গেছে, যার ফলে কেউ মাস্ক পরছে, কেউ পরছে না। মাস্ক ছাড়া সর্বত্রই জনগণ চলাচল করছে।
রাজধানী মার্কেটে দেখা যায়, ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। প্রতিটি দোকানেই চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষি। কারো মুখে নেই মাস্ক। স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। কয়েকটি দোকানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পোস্টার রয়েছে। মাস্ক সংক্রান্ত কোনো সচেতনতা চোখে পড়েনি। দু’-একটি দোকানে ক্রেতা এলেও নেই মাস্ক। দিলকুশা এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের সামনে ও ভিতরে মাস্ক ব্যবহারের নোটিশ দেখা গেছে। মাস্ক ছাড়া সেবা প্রদান করছে না ব্যাংকগুলো। তবে ব্যাংকের বাইরে অনেক সেবা গ্রহীতাকে মাস্ক ছাড়া দেখা গেছে। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে রাজধানীর গণপরিবহনে। বাসে যারা যাতায়াত করছেন তাদের অনেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এমনকি বাসের চালক এবং চালকের সহকারীদের অনেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। এ বিষয়ে বাস চালুর সময়েই নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। পরে এই নির্দেশনা আরো কয়েক দফা প্রচার করা হয়। কিন্তু দিন দিন পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। মসজিদে নামাজের ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা রয়েছে। নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিদের মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও রাজধানীর বেশ কয়েকটি মসজিদে দেখা গেছে মুসল্লিদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন মাস্ক ব্যবহার করছেন। বেশির ভাগ মুসল্লি কোনো মাস্ক ব্যবহার করছেন না।