জননেতা তরিকুল ইসরামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরন সংখ্যাার একগুচ্ছ রেখা-৫

0

উন্নয়নের এক কারিগরের প্রতি শ্রদ্ধা
সুন্দর সাহা

“জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে…।” জন্ম হলেই মৃত্যু অবধারিত। সর্বক্ষণ মৃত্যু মানুষের পিছু হাটছেই। কে বা মরতে চায় এই সুন্দর পৃথিবী হতে? তারপরও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেই হয়। পৃথিবীতে কোন মৃত্যুই আনন্দের নয়, সব মৃত্যুর সাথেই সম্পর্ক শোকের। জীবিত বা মৃত যা-ই হোক, ভালো মানুষের ক্ষমতা অসীম। সেই অসীমতায় ভিন্ন থেকে অভিন্ন হয়ে যায় একজন মানুষ। মৃত্যু নয়, মানুষ নয়, মৃতের বিশেষ কোনো পরিচয় বা সম্পর্কে নির্ধারিত হয় শোকের মাত্রা। যেকোনো মানুষের মৃত্যুই দুঃখের, বেদনার। একজন সম্মানিত মানুষ হিসেবে যশোর উন্নয়নের কারিগর বালাদেশী জাতীয়তাবাদের অন্যতম কান্ডারী, সাবেক সফল মন্ত্রী গণমানুষের নন্দিত জননেতা তরিকুল ইসলামের প্রয়াণে অশ্রুসজল লাখ লাখ মানুষ শহরে আছড়ে পড়ায় দৃশ্যমান হয়েছিল যে, মৃত্যু কতোটা শোকের। সেই শ্রদ্ধাভাজন জননেতা তরিকুল ইসলামের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যেস্মরণ সংখ্যা প্রকাশ করছে দৈনিক লোকসমাজ। কেন যশোর শহরের ঘোপ থেকে কারবালা কবর স্থান পর্যন্ত ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর লাখ-লাখ মানুষ আঁছড়ে পড়েছিল একটু ফিরে দেখলেই তার প্রমান মেলে। তাঁর জীবদ্দশায় তিনিই ছিলেন যশোর উন্নয়নের একমাত্র কারিগর। বিভিন্ন দফতরের আকাশ ছোঁয়া ভবন আর সড়ক-ব্রিজ গুলোই বলে দেয় জননেতা তরিকুল ইসলামের হাতের ছোঁয়ায় কেমন ভাবে উন্নয়নের ফুলের মালায় সাজানো হয়েছিল অবহেলিত যশোরকে। আজ তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে হৃদয়ের গভীর থেকে জানাই শ্রদ্ধা। যেখানেই থাকেন আপনি ভালো থাকুন, আর্শিবাদ করুন।

স্মৃতির মিনারে প্রকাশক তরিকুল ইসলাম
মো: আনোয়ার হোসেন

আগামী ৩০ অক্টোবর ২০২০ লোকসমাজের ২৫ বছরে পাঁ রাখতে যাচ্ছে। কিন্তু মনে হচ্ছে কি যেন নেই। হ্যা যাঁর কথা লেখবো তা লেখার, বলার, যোগ্যতা সাহস, ক্ষমতা কোনটিই আমার নেই তা আমি জানি, তিনি হলেন দক্ষিণবঙ্গের শীর্ষ দৈনিক লোকসমাজের সাবেক প্রকাশক, মহান হৃদয়ের মানুষ ও যশোরের উন্নয়নের রূপকার জননেতা জনাব তরিকুল ইসলাম। ২৫ বছর আগে দৈনিক ভোরের ডাকে চাকরি করতাম, সম্পাদক জনাব কে এম বেলায়েত হোসেনের অধিনে। একদিন আমে ডেকে বললেন যশোরে জনাব তরিকুল ইসলামের নাম শুনেছ। আমি বললাম হে তিনিতো মন্ত্রী। বললেন, যশোরে যাবা, বয়স যেহেতু কম বাবা/মার ইচ্ছে ছিল যশোরে যেন না আসি । এর পরও আপনি বললে যাব। বয়স তখন মাত্র ২০/২২ তাই একটু ভয় ও হচ্ছিল। পত্রিকার প্রকাশের ১৫ দিন আগেই ১৯৯৬ সালের ১৫ অক্টোবর যশোরে আসলাম। পত্রিকার শুরুতে চাকরির সুবাধে প্রয়াত প্রকাশকের কাছ থেকে অনেক স্নেহ, আদর ও ভালোবাসা পেয়েছি, তিনি যে কত বড় মন ও হৃদয়ের মানুষ ছিলেন তা কিছুট হলেও দীর্ঘদিন চাকুরি করার সুবাধে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। তিঁনি দৈনিক লোকসমাজকে ঠিক সন্তানের মত করেই দেখতেন। আর সেই ভালোবাসা থেকে আমি নিজেও বঞ্চিত হয়নি। আমারও কয়েকটি স্মৃতি জাগানিয়া অনুভূতি তুলে ধরলাম।-একজন মহান ব্যক্তির মহাত্ম বোঝা যায় ছোট ব্যক্তিদের সাথে তাঁর ব্যবহার দেখে -কার্লাইন।
আসার কিছু দিন পরই ১৯৯৬ সালে শবে বরাত, থাকতাম এইচএমএম রোডে সাবেক লোকসমাজ অফিসের ৩য় তলায়। শবেরাতের রাতে রিতু প্রিন্টার্সের তোতা ভাইকে ফোন দিয়ে প্রকাশক সাহেব বললেন, ছোট একটি ছেলে ঢাকা থেকে আসছে না? নাম জানি কি? তাকে আমার বাসায় পাঠিয়ে দেও। আমিতো ভয়ে ভয়ে গেলাম। বললো কেমন আছ বাবা, ভয় কিসের, খোঁজ খবর নিল, আমাকে কিছু খেতে বললো, বললো কারবালা চিন, আমি বললাম না। সেখানে নামাজ পড়ে এসো খুব ভাল লাগবে। প্রায়ই আমাকে বলতো যশোরে বিয়ে করে যশোরে থেকে যাও। মেয়ে পছন্দ করো আমি সব ব্যবস্থা করে দিব। প্রকাশক সাহেব তিনি তাঁর কথা রেখেছিলেন।
আমার বিয়ের যথ রকম আয়োজন সব কিছু তখনকার লোকসমাজের (এমডি) জনাব মাহবুবুর রহমান (খোকন) ভাই, ম্যানেজার (প্রয়াত) বাদল ভাই ও সেলিম ভাইকে ব্যবস্থা করতে বললেন। এমন কি, গায়ের হলুদ, কোন গাড়িতে করে খুলনায় বিয়ে করতে যাব তাও ব্যবস্থা করলেন। কেশবপুরের জনাব আজাদ ভাইয়ের ছোট ভাইয়ের গাড়ি নাম মনে নেই তার এসি গাড়ির জন্য বলে দিল। বলল বিয়ে করতে যাবে এসি গাড়ি ছাড়া কি হয়। এমনকি গাড়ির সাজানোরও সব রকম ব্যবস্থা ছিল। আমি দাওয়াত দিতে গেলাম সাবেক বার্তা সম্পাদক জনাব মিজান ভাইকে নিয়ে, বললো বাবা আমি দোয়া করি, কিন্তু আমি যদি খুলনায় যায়, আমার সাথে ৩০/৪০ জন লোক বেশি হয়ে যাবে তোমার শ্বশুর পক্ষের উপর চাপ পড়বে। আমি লোকসমাজের খুলনা ব্যুরো প্রধান জনাব তাইয়েব মুন্সিকে বলে দিয়েছি। সে সব ব্যবস্থা করে রাখবে। তখনকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব দেলোয়ার হোসেন খোকন ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব আনোয়ারুল কবীর নান্টু ভাইসহ ঝাঁকজমপূর্ণভাবে গাড়ির বহর নিয়ে খুলনায় গিয়ে বিয়ে করে আসি। যেহেতু মন্ত্রী মহোদয় বলে দিয়েছিলেন তাই কোন রকম ঘাটতি ছিল না।
প্রথম ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাব, তাই আমাদের সাংবাদিক ক্রাইম রিপোর্টার মিজান ভাইকে বললো আনোয়ারকে ওর মার জন্য ইন্ডিয়ান শাড়ি কিনে দিবে। মার জন্য ইন্ডিয়ান শাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। এই স্মৃতিগুলো কি আজীবন ভুলা যায়। এরই নাম গণমানুষের নেতা আমাদের সাবেক প্রকাশক তরিকুল ইসলাম। আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করতো দিনাজপুরে, বদলির ব্যাপারে জীবনের প্রথম মন্ত্রী পাড়ায় ছোট ভাইকে নিয়ে মিন্টু রোডের বাসায় গেলাম। নিচে গেস্ট রুমে সবাই বসা আমিও বসা পেছনের দিকে। এপিএস হাফিজ ভাই সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। যখন আমার কথা বললেন আনোয়ার লোকসমাজ থেকে আসছে। তখন জননেতা জনাব তরিকুল ইসলাম (মন্ত্রী মহোদয়) বললেন, তোমার বলতে হবে না ওকে আমি চিনি। হাতে ইশারা দিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের পাশে চেয়ারে বসতে বললেন, সবাইতো আমার দিগে তাকিয়ে রইলো। সবাইকে বিদায় দিয়ে আমাকে হাত ধরে বাইরে গাড়ি পর্যন্ত গিয়ে হাফিজ ভাইকে বললো আনোয়ারকে নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চলে যাও, স্বাস্থ্য মহা পরিচালককে আমার কথা বলে ওর স্ত্রীর বদলির কাজটি করে দেও। হাফিজ ভাইয়ের গাড়িতে গেলাম। তখন মনে হলো বদলি যদি না হয় । যে স্নেহ , আদর, সম্মান পেয়েছি। আমি সন্তুষ্ট ও আনন্দিত, উচ্ছসিত হয়েছিলাম। এরই নাম সাবেক মন্ত্রী মহোদয় আমাদের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রকাশক জনাব তরিকুল ইসলাম। কিছুদিন পর আমার স্ত্রীর বদলিও হয়েছিল।
প্রিন্টিং লাইনে কাজ করলে কম/বেশি ভুল হয় এটাই স্বাভাবিক, তাই লোকসমাজেও অনেক সময় বানান ভুল হয়েছে। ভুল হলে পরেরদিন ডাকতো মন্ত্রী মহোদয়, ভয় পেতাম কি জানি বলে। লোকসমাজের সাবেক এমডি জনাব মাহবুবুর রহমান বড় খোকন ভাই বলতো ভয় নেই, আমি পাশে বসে থাকবো। কিন্তু কোনদিনও আমাকে কঠিন কোন কথা বলেনি। শুধু বলেছে বাবা পত্রিকা পড়েছে। তুমি আবার নতুন করে ওয়ান-টুতে ভর্তি হও। বানান শিখ।
সব শেষে মরে যাওয়ার কিছু দিন আগে আমিও নিজেও অসুস্থ মেরুদণ্ডে সমস্যা হাটতে পারছি না। বাসায় গেলাম, সোপায় শুয়ে আছে প্রকাশক সাহেব জনাব তরিকুল ইসলাম, সালাম দিলাম, বললো কি বাবা কেমন আছে, আমি বললাম আমিতো অসুস্থ অনেক চিকিৎসা করেছি তাও ভাল হয়নি হাঁটতে পারছি না। তখন বললো আমিওতো হাটতে পারছি না। এরপরও আমার বয়স হয়েছে। তোমারতো বয়স কম তুমি ইন্ডিয়া যাও, ভেলরে সেখানে ভাল চিকিৎসা হয় তুমি ভাল হয়ে যাবে। সামনে বসা ছিলেন বাঘারপাড়া চেয়ারম্যান জনাব মসিয়ার ভাই, বললো এইতো সেখানে থেকে চেয়ারম্যানও চিকিৎসা নিয়ে ভাল হয়ে গেছে। আমি বললাম আমারতো টাকার লাগবে। তখন বললো কত লাগবে। আমি ভয়তে কথা বলছিলাম না। তারপর বলল, বল, বল, কথা বল। আমি যা চেয়েছিলাম তাই আমাকে দিয়েছিল। সেই স্বপ্নের মানুষকে কি ভুল যায়। যতদিন বেঁচে থাকি আমি ও আমার পরিবার স্মরণ রাখবো। মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে প্রাণভরে দোয়া করবো আল্লাহ যেন আমাদের সাবেক প্রকাশক জননেতা যশোর উন্নয়নের রূপকার জনাব তরিকুল ইসলামকে বেহেশত নসিব করেন, আমিন। আর আমার প্রিয় লোকসমাজ ৩০ অক্টোবর ২৫ বছর নয়, শতবর্ষ জন্মদিন পালন করুক এই কামনা করি। দীর্ঘ ২৪ বছরে বেশ ক’জন সহকর্মী আমাদের মাঝ থেকে চির বিদায় নিয়েছেন। মহান রাব্বুল আলামীন যে তাদের বেহেশত নসিব করুন। আমিন। আমার নিজেরও শরীল বেশি ভাল না। কবে মরে যাব জানি না, অনেক চিকিৎসা করেও ভাল হয়নি। বেঁচে আছি, কাজ কর্ম করতে পারছি। আলহামদুল্লিাহ। আমার জন্যও সবাই দোয়া করবেন। আমিন।
লেখক: আইটি বিভাগ প্রধান, দৈনিক লোকসমাজ

স্বাস্থ্যসেবায় তরিকুল ইসলাম
বিএম আসাদ

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ঘড়ির কাটায় বিকেল সাড়ে ৩টা। ২০০৪ সাল। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হাসপাতাল চত্বরে কর্মব্যস্ততায় দিন কাটাচ্ছি। হাসপাতাল মর্গ থেকে লাশের সংবাদ নিয়ে যাচ্ছি।জরুরি বিভাগের দিকে যাচ্ছি। এমন সময় জিপ এসে থামলো। পিছনে পুলিশের ভ্যান ভর্তি একদল পুলিশ। জিপ থেকে নেমে আসলেন আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মন্ত্রী বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। জীপ থেকে নেমেই সোজা চলে গেলেন জরুরি বিভাগে। কর্তব্যরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা হতবাক হলেন। আচমকা চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালেন সবাই। তারা স্যার স্যার বলেই চেয়ার এগিয়ে দিলেন তাকে বসার জন্য। তিনি বললেন না। না বসেই চিকিৎসক-কর্মচারীদের বললেন, হাসপাতালে জনগণের চিকিৎসা সেবা কেমন দিচ্ছো তোমরা। উত্তরে চিকিৎসক-কর্মচারীরা বললেন, স্যার আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি ভালো চিকিৎসা সেবা দেয়ার। তখন মন্ত্রী জনাব তরিকুল ইসলাম চিকিৎসক কর্মচারীদের বললেন, ঠিক আছে। ভালো করে চিকিৎসা দাও। আমি তোমাদের দেখতে আসছি, তোমরা হাসপাতালে জনগণের ভালো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছ কি-না ? সাথে পরামর্শও দিলেন তাদের। বললেন, জনগণ তোমাদের কাছে এমন কিছু চায় না। বাড়ি-গাড়ি করে দিতে বলেন না। তারা চায় একটু ভালো চিকিৎসাসেবা। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ট্যাস্কের টাকায় তোমাদের বেতন হয়। সেদিকে চিন্তা করেই জনগণকে একটু ভালো চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। তাহলে তারা খুশি হবেন। এতে সরকারের সুনাম হবে। একথা বলেই তিনি নিজে নেমে জরুরি বিভাগের সামনে দাঁড়ালেন। চারিদিকে পুলিশ ঘিরে দাঁড়ালো। এ অবস্থা দেখে তিনি পুলিশকে প্রশ্ন করে বললেন, তোমরা এভাবে আমাকে ঘিরে রয়েছো কেন, আমি মন্ত্রী বলে বুঝেছি। তো এভাবে আমাকে ঘিরে দাঁড়াতে হবে না। যাও ওই পাশে যাও। পুলিশ থাকলে সাধারণ মানুষ আমার কাছে আসতে পারবেন না। তাদের মনের কথা বলতে পারবেন না। আমি জনগণের নেতা। আমাকে কেউ মারবে না। তোমরা চলে যাও। আমার পুলিশ লাগে না। যশোরের মানুষ আমাকে নিরাপত্তা দিবে। একথা শুনে পুলিশ হতবাক। কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে বেশ দূরে সরে গেল পুলিশ। দূরে এমনভাবে পুলিশ অবস্থান নিল যে মন্ত্রীর নিরাপত্তার কোন আছে বলে কেউ মনে হচ্ছে না। তার এমন কথা শুনে আমিও ৬/৭ হাত দূরে দাঁড়িয়ে রইলাম। মাঝেমধ্যে হাসপাতালে লোকজন আসছেন। তারা একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে সালাম দিচ্ছেন। আর কেমন আছেন বলে কুশল বিনিময় করছেন। খোলা মনে কথা বলছেন। সুবিধা-অসুবিধার কথা জানাচ্ছেন। অনেকে প্রশ্ন করছেন ভাই আপনি মন্ত্রী। একা এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন। তরিকুল ইসলামও তাদের বলছেন, খোলা জায়গায় এখানে দাঁড়িয়ে আছি তোমাদের জন্য। তোমরা তো আর আমার মন্ত্রণালয়ে কিংবা সার্কিট হাউজে গিয়ে কথা বলতে পারো না। তাই খোলা জায়গায় তোমাদের দেখা পাচ্ছি। তোমাদের সুখ-দুঃখের কথা জানতে পারছি। সার্কিট হাউজে চার দেয়ালের ভেতর বসে থাকলে তো তোমরা তো যেতে পারো না। সেখানে থাকে পুলিশ, সরাসরি কর্মকর্তা আর সুবিধাবাদীরা। কে কি কাজ আদায় করে নিবে। এ নিয়ে কান ঝালাপালা করে দেয়। একেবারে দমবেন আটকে যায়। তাই, সবাইকে রেখে একা এখানে খোলা জায়গায় এসেছি একটু স্বস্তি নিতে। এতে তোমাদের সাথেও কথা হল। আবার স্বস্তি পাওয়া গেল। মন্ত্রীর মুখে ত কথা শুনে সাধারণ লোকজন খুশি হলেন এবং চলতি পথে পরস্পর আলোচনা করতে লাগলের একেই বলে জননেতা। তরিকুল ভাইয়ের মতো রাজনৈতিক নেতা পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু যশোরের মানুষ আসলে সবাই তাকে চিনতে পারলেন না। আবার দলগতভাবে বিরোধী মতের লোকজন প্রকাশ্যে সমালোচনা করলেও রাজনীতির বাইরে ব্যক্তিগতভাবে তরিকুল ইসলামকে অন্তরে নেতা হিসেবে গুরু বলে ভক্তি করেন বলে আলোচনা করেন তার সাথে সাক্ষাৎ করা ওই সব লোকজন। এভাবে কেটে গেলো এক ঘন্টা।
এরপর আমার পালা। কাছে দাঁড়িয়ে আমি। জনাব তরিকুল ইসলাম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, দেখলেতো। সার্কিট হাউজে বসে থাকলে এসব মানুষের সুখ-দুঃখ আমি জানতে পারতাম না। বুঝতে পারতাম না সাধারণ মানুষের দুঃখ-বেদনা। এদের সাথে দেখা হওয়ায় তারাও খুশি হলো আবার আমারও অভিজ্ঞতা হলো। এবার তোমার কথা বল, হাসপাতালের খবর কি ? সাংবাদিক হিসেবে তুমি কি দেখছো। লোকজন হাসপাতালে কেমন চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে। আর তুমি কি সংবাদ লিখছো। জনাব তরিকুল ইসলাম আমার পত্রিকা প্রতিশ্রুতিশীল দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক মালিক। আমি তার পত্রিকার স্বাস্থ্যবিষয়ক রিপোর্টার। তখন বিএনপি ক্ষমতাসীন দল। হাসপাতালের শতকরা ৭০ ভাগ চিকিৎসক কর্মকর্তা বিএনপি সমর্থিত। যারা বিএনপি সমর্থন করেন না তারাও তখন বিএনপির হয়ে আছেন কৌশলগত দিক বিবেচনা করে। এ সময় হাসপাতালের সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বিরাজমান সমস্যা ও সমাধানের বিষয়টি তুলে ধরলাম। জানালাম, হাসপাতালে একটি সিটিস্ক্যান মেশিন দরকার। খুলনায় সিটিস্ক্যান মেশিন এসেছে। তারা এককভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে। যশোর থেকে রোগী নিয়ে যাওয়া হচ্ছে খুলনায়। সিটিস্ক্যান করতে জনপ্রতি ৬ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন মানুষের বেশি টাকা লাগছে। তেমনি সময়ও লাগছে বেশি। রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে। তখন মন্ত্রী জনাব তরিকুল ইসলাম বললেন, ঠিক কথা বলেছ। যশোরে একটি সিটিস্ক্যান মেশিন হলে এলাকার লোকজন হাতের কাছে এ সেবাটা পেতো। কিন্তু কি করা। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে এখন একটি সিটিস্ক্যান মেশিন আমি দিতে পারবো। কিন্তু তাতে অন্য মন্ত্রীগণ বিদ্রোহ করবে। কারণ হচ্ছে জেলা হাসপাতালে তখন কোন সিটিস্ক্যান মেশিন দেয়ার প্রকল্প চালু হয়নি। এক জেলায় সিটিস্ক্যান মেশিন দিলে সব জেলার লোকজন ক্ষিপ্ত হবে। তাই সিটিস্ক্যান মেশিন যশোরে আনতে হলে করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) চালু করতে হবে। সেখানে সিটিস্ক্যান মেশিন দিলে কোন সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় মন্ত্রী প্রয়াত তরিকুল ইসলাম। তখন সিসিইউ সম্পর্কে আমার জ্ঞান ছিল না। বিষয়টি আমি বুঝতে পারিনি তা দূরদর্শি জ্ঞানের অধিকারী জনাব তরিকুল ইসলাম আমার অজান্তে বুঝতে পেরেছিলেন। আমাকে বুঝিয়ে ছিলেন করোনারী কেয়ার ইউনিটে হার্টের রোগীদের চিকিৎসা করোনা হয়। যাদের কার্ডিয়াক রোগী বলে। আইসিইউ সিসিইউ থাকে সেখানে। এনজিওগ্রাম করানো যায় করোনারী হাসপাতালে। তখন আমার নতুন জ্ঞান হলো। তার কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছিলাম সিসিইউ সম্পর্কে। বিষয়টি জানতে পেরে আমি সাথে সাথে দাবি করে বলেছিলাম, তাহলে এ হাসপাতালে একটি সিসিইউ ভবন নির্মাণ করলেন ভালো হতো।
যশোরসহ আশপাশের লোকজন এসে এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ সময় জনাব তরিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, দেখা যাক কি করা যায়। ঢাকায় যেয়ে দেখি। আর যাই কই ? প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর মন্ত্রী হলে যা হয়। মাত্র এক মাসের মধ্যে শুরু হল তৎপরতা। হাসপাতালের সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক প্রয়াত ডা. হাসান-আল-মামুন। ডা. হাসান-আল-মামুন ছিলেন জনাব তরিকুল ইসলামের ভাইঝি জামাতা। তার প্রতি তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন আমি যশোরবাসীর উন্নত চিকিৎসাসেবায় একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছি। যা খুলনা বিভাগে নেই। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে এ অঞ্চলের মানুষ ভালো চিকিৎসা-সুবিধা পাবেন। তোমাকে ঢাকায় দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে হবে ফাইনালপত্র নিয়ে। আর সেখানে বাঁধা পড়বে আমাকে জানালে আমি তার সমাধান করবো। এরপর শুরু হলো ডা. হাসান-আল-মামুনের যশোর হতে ঢাকায় যাবার দৌঁড়াদৌঁড়ি। জনাব তরিকুল ইসলাম দ্রুত সময়ে ২০০৫ সালে ১৭ কোটি টাকার ২৮ শয্যা বিশিষ্ট সিসিইউ প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে দিলেন। শুরু হলো সয়েল টেস্টের কাজ। টেন্ডার প্রক্রিয়া ও টাকা ছাড় করতে দেরি হচ্ছিল। তাই, নিকট আত্মীয় বিশিষ্ট ঠিকাদার হাসান আলী মিয়াকে তিনি তাকে ডেকে বললেন, যশোর সিসিইউ প্রকল্প অনুমোদন হয়ে গেছে। তখন টেন্ডার আহ্বান ও টাকা ছাড় করতে সময় লাগবে। জীবনে অনেক বিল্ডিং করেছো। এবার দ্রুত সময়ে আমার এ বিল্ডিংটি করে দেয়া লাগবে। কারণ, সকল প্রক্রিয়া সেরে সিসিইউ চালু করতে দু’বছর/আড়াই বছর সময় লেগে যাবে। তাতে বিএনপি ক্ষমতা নাও আসতে পারে। তখন আমার হাতছাড়া হয়ে যাবে ২৮ শয্যা যশোর করোনারী কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)। ঠিকাদার হাসান আলী মিয়া বলেছিলেন, টেন্ডার না হলে কিভাবে করবো। তার আগে বিল্ডিং করলে যদি টাকা মার যায়। তখন জনাব তরিকুল ইসলামের বাঘের মতো গর্জন। তিনি বললেন, টাকা দিয়ে তরিকুল ইসলাম। এ কাজ তুমি পাবে। টাকাও তোমার নামে পরিশোধ হবে। আমি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বলে দেবো। যাও তুমি নিজের টাকা দিয়ে বিল্ডিয়ের কাজে হাত দাও। ঠিকাদার হাসান আলী মিয়া তাই করলেন। বিল্ডিং করার জন্য ১ বছর সময় নিলেন। তার ভেতর ১০ মাসের মধ্যেই সম্পন্ন করলেন করোনারী কেয়ার ইউনিট ভবন নির্মাণের কাজ। ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন নির্মাণ এবং বাকি টাকায় চিকিৎসার উপকরণ ক্রয় ইত্যাদি কাজে ব্যয় হয়েছিলো। এরপর বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে ২০০৬ সালে তিনি করোনারী কেয়ার ইউনিট উদ্বোধন করেন। যার উদ্বোধনী নেমপ্লেট রয়েছে এ ভবনে। অথচ, তার এ অবদান অস্বীকার করে বলা হয়েছে ২০০৯ সালে ২৮ শয্যা করোনারী কেয়ার ইউনিট চালু হয়। যশোর করোনারী কেয়ার ইউনিটের এটি ছিল প্রকৃত ইতিহাস। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করেছিলেন তরিকুল ইসলাম। ২০০৩ সালে এটি চালু হয়েছিল। সেখানে কর্মচারী নিয়োগ ছিল আওয়ামী লীগ আমলের। উদার রাজনৈতিক মানসিকতায় প্রকল্প শেষ হলেও তিনি ছাড় দিয়ে তাদের চাকরিতে থাকার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ১৯৮৩ সালে হাসপাতালটি ১শ’ বেডে উন্নীত করা হয়। ১৯৬২ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। ১০ বেড নিয়ে ১৯৫০ সালে সদর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ১৮৬৭ সালে এ হাসপাতালের প্রাথমিক কার্যকম শুরু হয়। বাঘুটিয়ার জমিদার কালিপদ ঘোষ তার পৈত্রিক বাড়িটি এ হাসপাতালে দান করেছিলেন। ২০১১ সালে হাসপাতালটি অস্থায়ীভাবে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তরিকুল ইসলামের হাতের ছোঁয়ায় এ হাসপাতাল এখন এতদাঞ্চলের চিকিৎসার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। শুধু যশোর নয়। জেলার ৮ উপজেলায়, চৌগাছায়, অভয়নগর, বাঘারপাড়া, মনিরামপুর, ঝিকরগাছা, শার্শার হাসপাতালগুলো চিকিৎসাসেবায় উন্নতমানের ভবন পেয়েছে তরিকুল ইসলামের সহযোগিতায়। বকচর বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, টিবি ক্লিনিক, উপশহর শিশু হাসপাতালের আজকের এ উন্নয়ন পরিস্থিতিতে তার রয়েছে অবদান। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বেসরকারি হাসপাতাল করা এবং সরকারের প্রতি জনগণের কিছুটা চাপ কমানোর জন্য বেসরকারি চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করতে মালিকদের উৎসাহিত করেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে সরকারি ও বেসরকারি চিকিৎসা সেবায় আজ যশোর চিকিৎসা নগরীতে পরিণত হয়েছে। এ কারণে তরিকুল ইসলামের অবদান যশোরবাসীকে চিরদিন স্বীকার করতেই হবে। শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে নয়। প্রাচীন যশোরের খোলস পাল্টে আধুনিক যশোর গড়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা, যোগাযোগ, সবক্ষেত্রে তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেন। মেডিকেল কলেজ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যশোরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারই প্রচেষ্টায়।
তরিকুল ইসলাম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোর শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আলহাজ্ব আব্দুল আজিজ একজন ব্যবসায়ী এবং মাতা মোসাম্মাৎ নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিনী। তরিকুল ইসলাম দুই পুত্র সন্তানের জনক। স্ত্রী অধ্যাপক নার্গিস বেগম ছিলেন তার সহযোদ্ধা। বর্তমানে তিনি যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও দৈনিক লোকসমাজের সম্পাদক। বড় পুত্র শান্তনু ইসলাম সুমিত পত্রিকার প্রকাশক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। ছোট পুত্র আলহাজ্ব অনিন্দ্য ইসলাম অমিত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এবং রাজনীতিবিদ। তিনি পিতার যোগ্য উত্তরসুরী। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সাথে জড়িত হন তরিকুল ইসলাম এবং রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় হয়ে ওঠেন বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ও জাতীয় নেতা। একাধিকবার মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তাকে নিয়ে শুধু যশোর নয়, দক্ষিণবঙ্গের মানুষ গর্ভবোধ করেন। পরিশেষে বলতে হয়, জনাব তরিকুল ইসলামের হাত ধরেই আমাদের যশোর জেলার আধুনিক চিকিৎসাসেবার উন্নতি সাধিত হয়েছে। বর্তমানে হাতের নাগালে মানুষ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন তা তরিকুল ইসলামের কারণে। তাই, চিকিৎসাসেবায় তরিকুল ইসলাম ইতিহাস। যশোরবাসীর মাঝে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।