আবারো মূল্যযুদ্ধ শুরু করবে সৌদি আরব?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার আঘাতে বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে অন্যতম বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া জ্বালানি তেলের বাজার এখনো নিম্নমুখী। ফলে বিক্রি কমে গিয়ে জ্বালানি পণ্যটির মজুদ বাড়ছে। এতে করে জ্বালানি তেলের বাজারে নেতৃত্ব দেয়া ওপেক প্লাস জোটের মজুদের পরিমাণ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ফলে জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে চলা দীর্ঘদিনের বিরোধ এখন আরো দৃশ্যমান হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ওপেক প্লাস জোটের নেতৃত্বে এখন চিড় ধরতে পারে। জ্বালানি পণ্যটির দাম নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘদিন উৎপাদন ও রফতানি হ্রাস-বৃদ্ধি করার যে মতৈক্য, সেটিও এখন ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর নিজেদের এ মতানৈক্য সবশেষ জ্বালানি পণ্যটির শীর্ষ সরবরাহকারী সৌদি আরবকে মূল্যযুদ্ধে ঠেলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। খবর অয়েল প্রাইস ডটকম
জ্বালানি তেলের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত আধিপত্য এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের সঙ্গে রাশিয়াসহ অন্যান্য উত্তোলনকারী দেশ নিয়ে ওপেক প্লাস জোট গঠিত হয়। যার নেতৃত্বে একদিকে রয়েছে সৌদি আরব, অন্যদিকে রাশিয়া। কিন্তু জোট গঠনের কিছুদিনের মধ্যেই এটিতে একের পর এক মতানৈক্যের সুর ওঠে। অনেক দেশ জোটের সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী উত্তোলন হ্রাস-বৃদ্ধিতে রাজি না হওয়াসহ নানাবিধ অনৈক্য দেখা যায়। এসব কারণে জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া, চুক্তির বাইরে গিয়ে উত্তোলন, রফতানি বাড়ানোর মতো ঘটনা ঘটেছে। এর পরও মস্কো-রিয়াদের চেষ্টায় একের পর এক জ্বালানি তেলের উত্তোলন হ্রাস-বৃদ্ধির সময়সীমা ও পরিমাণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে সবচেয়ে বড় আঘাত হেনেছে করোনা মহামারী। কারণ এতে একদিকে যেমন নিজেদের মধ্যে বিরোধ আরো তীব্র হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে জ্বালানি পণ্যটির মজুদের পরিমাণ।
যদিও আগামী বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা বাড়ার পূর্বাভাস এবং আন্তর্জাতিক এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) প্রতিবেদনে পণ্যটির জন্য কিছুটা স্বস্তি এনেছে। কিন্তু বাস্তবতা এখনো ভিন্ন। কারণ দীর্ঘদিন ধরে মন্দা থাকা জ্বালানি তেলের বাজারে করোনার যে আঘাত সেটি দ্রুতই কাটার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কারণ করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ইউরোপজুড়ে আবারো লকডাউন ফিরে আসার আশঙ্কা রয়েছে। সেটি হলে জ্বালানি পণ্যটির চাহিদার ক্ষেত্রে নতুন করে আবারো অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, যা অর্থনীতির জন্যও বড় ধাক্কা।
প্রণোদনা, আর্থিক সহায়তার মতো বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণায়ও বৈশ্বিক অর্থনীতি আগের মতো শক্ত অবস্থায় ফিরতে পারছে না। ফলে কেবল অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বা ওইসিডিভুক্ত দেশগুলোতে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমবে সেটি নয়। বরং এশিয়ার উৎপাদন খাতেও চাহিদায় বড় পতন হবে।
যদিও এখন পর্যন্ত কেউ নিশ্চিতভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যযুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছে না। তবে জোটের বেশকিছু দেশ বাজারের উদ্বৃত্ত কমিয়ে আনতে উত্তোলন কমাতে গিয়ে রীতিমতো ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে এশিয়ার আমদানিকারক দেশগুলো বিশেষ করে চীন ও ভারতের মতো শীর্ষ আমদানিকারকরা কম দামে পর্যাপ্ত জ্বালানি তেলের মজুদ করতে সক্ষম হচ্ছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে জ্বালানি তেলের বাজারে বিশেষ করে এশিয়ায় চাহিদা বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে সৌদি আরব ও রাশিয়ার মতো শীর্ষ উৎপাদক দেশগুলো থেকে শুরু করে জোটের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভর করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার যে আশা দেখছে সেটি ফিকে হওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
অন্যদিকে সৌদি আরবের তেলনির্ভর অর্থনীতি অভ্যন্তরীণভাবে বেশ চাপেই ছিল। এর ওপর যোগ হয়েছে করোনা মহামারীর আঘাত। ফলে অর্থনৈতিক চাপ ও বেকারত্ব এখন তীব্র হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে। এ অবস্থায় দেশটির যুবসমাজ অন্য পথ অনুসরণ করতে বাধ্য হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সৌদি আরব বাধ্য হয়েই অর্থনীতি টেনে তুলতে জ্বালানি তেলের মূল্য নিজেদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর সেটি হলে অন্যান্য উত্তোলনকারী দেশের সঙ্গে মূল্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায়