অর্থনীতি সচল রাখতে ১৭ হাজার কোটি ডলার অর্থছাড়

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ চীনের শেয়ারবাজারের বেঞ্চমার্ক সূচক থেকে গতকাল বিনিয়োগকারীরা ৪২ হাজার কোটি ডলার তুলে নিয়েছেন। বিক্রি করে দিয়েছেন ইউয়ান এবং করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ভীতি থেকে বর্জন করেছেন পণ্যদ্রব্য। এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটের মধ্যে দেশটির অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আর্থিক ব্যবস্থায় ১৭ হাজার ৩৮১ কোটি ডলার ছেড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দ্য পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) বাজারে এ পরিমাণ অর্থ ছেড়েছে রিভার্স বন্ড পার্চেজ এগ্রিমেন্টের ভিত্তিতে। একই সঙ্গে ব্যাংকটি ১০টি ভিত্তি পয়েন্টের সাপেক্ষে স্বল্পমেয়াদি তহবিল সরবরাহে সুদহারও কমিয়েছে। খবর রয়টার্স ও গার্ডিয়ান।
গতকাল মধ্যাহ্ন পর্যন্ত দ্য বেঞ্চমার্ক সাংহাই কম্পোজিট ইনডেস্কে ৮ শতাংশ পতন হয়। একই সঙ্গে চলতি বছরের মধ্যে গতকাল ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের মান সবচেয়ে কম ছিল। ইউয়ানের মানের পতন হয় প্রায় ১ দশমিক ২ শতাংশ। মূলত চীনে নতুন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস আশঙ্কাজনক হারে ছড়িয়ে পড়ায় দেশটির অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
আইএনজির চীনের অর্থনীতিবিদ আউরিশ প্যাং বলেন, এ অবস্থা আরো বেশ কিছুদিন চলবে। কারণ কারখানার শ্রমিকরা আদৌ কাজে ফিরবেন কিনা, ফিরলেও কতজন ফিরবেন, তা বলা যাচ্ছে না। ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটি করপোরেট আয়ের মুখ দেখেনি। একই সঙ্গে এ সময়ে রেস্তোরাঁ ও খুচরা বাজারে বিক্রিও খুব কম হয়েছে।
সাংহাই ও শেনজেন শেয়ারবাজারে যে গতকাল অস্থির অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে তা আগেই ধারণা করা হচ্ছিল। গত ২৩ জানুয়ারি থেকে উৎসবের ছুটির কারণে বন্ধ ছিল শেয়ারবাজার দুটি। আর এ সময়ের মধ্যেই বাড়তে থাকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, যা দেশটির সার্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। নেতিবাচক প্রভাব পড়ে হংকংয়ের শেয়ারবাজারেও।
শেয়ারবাজারের এ অস্থির অবস্থার মধ্যে চীনের আর্থিক বাজারে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৭ হাজার ৩৮১ কোটি ডলার) ছেড়েছে পিবিওসি। ‘রিজার্ভ রেপো’ স্কিমের আওতায় ব্যাংকটি এ পরিমাণ অর্থ বাজারে ছেড়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো, নগদ অর্থ খুঁজছে এমন বিনিয়োগকারীদের অর্থের জোগান দেয়া, যাতে নববর্ষের ছুটি থেকে ফিরে এসে আর্থিক সংকটের কারণে তাদের ব্যবসা বিক্রি করে দিতে না হয়।
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ পদক্ষেপের বিষয়ে সিঙ্গাপুরের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ম্যাক্রো স্ট্র্যাটেজিস্ট মায়াংক মিশ্র বলেন, চীনা সরকার দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এ সহায়ক উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তারা বাজারের সুস্থিরতা ধরে রাখতে উদগ্রীব। তিনি আরো বলেন, চীন সম্ভবত পরিস্থিতি বেশ ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছে। বিশেষ করে যত দ্রুত রেপো রেট কর্তন করা হয়েছে, অনেকেই তা আশা করেননি। মূলত এর মধ্য দিয়ে চীন সরকার অর্থনৈতিক বিষয়ে তাদের সচেতনতার বিষয়ে সবাইকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছিল।
এদিকে করোনাভাইরাসের উত্পত্তিস্থল চীনের উহানসহ বেশকিছু শহর বর্তমানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবেও চীন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, এ ভাইরাসের প্রভাব ২০০৩ সালে ছড়িয়ে পড়া সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রমের (সার্স) থেকেও মারাত্মক হবে।
ওভারসি-চাইনিজ ব্যাংকিং করপোরেশনে গ্রেটার চায়না রিসার্চের প্রধান টমি শি বলেন, অধিকাংশ বিশ্লেষকই বলছেন যে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব নিয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না। কিন্তু এখানে একটি বিষয়ে আমি নিশ্চিত আর সেটি হলো, শিগগিরই চীনের অর্থনীতি মারাত্মক সংকটে পড়তে যাচ্ছে, যার প্রভাব সার্সের সময়ের থেকে অনেক বেশি হবে। সার্বিকভাবে চীনের উৎপাদন খাত ও শিল্প বেশ হুমকির মধ্যে রয়েছে। আর এ বিষয়ে আমার বিশ্বাস দিন দিন বাড়ছেই।