অভিযুক্ত ৬ জন পরিস্থিতির শিকার বলে দাবি স্বজনদের: বাসের মধ্যে নারীর সাথে স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ক হয়, কোর্টে স্বীকারোক্তি মনি’র

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বেচ্ছায় নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক হয়েছে বলে স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এমকে পরিবহনের হেলপার মনিরুল ইসলাম মনি (২৮)। যশোরে বাসের মধ্যে নারীকে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে মারপিটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামি মনি (২৮) গতকাল শনিবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রহমান ১৬৪ ধারায় আসামি মনি’র স্বীকারোক্তি রেকর্ড করেন। মনি’র সাথে বাকি ৬ আসামিকে আদালতের নির্দেশে এদিন জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এদিকে মনিরুল ইসলাম মনি বাদে বাকি ৬ আসামি (শ্রমিক) পরিস্থিতির শিকার বলে দাবি করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা ‘গাড়ি চুরি হয়েছে’ এমন সংবাদ পেয়ে তা উদ্ধার করতে গিয়ে ধর্ষণের মতো মামলার আসামি হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।


পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসামি মনি আদালতকে জানিয়েছেন তার সাথে ওই নারীর বছর দুয়েক আগে থেকে পরিচয়। তিনি যখন রাজশাহী যাতায়াত করতেন তখন থেকে মনি তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। এছাড়াও তার সাথে ওই নারীর মোবাইল ফোনে কথা হতো। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারী রাজশাহী থেকে যশোরে এসে মনি’র সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি রাতে ওই নারীর অনুরোধে তার থাকার ব্যবস্থা করেন। বাড়িতে না নিয়ে তিনি বাসের মধ্যেই ঘুমানোর ব্যবস্থা করেন। গাড়ির মধ্যে উভয়ের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক হয়। রাতেই অন্যান্য শ্রমিক গিয়ে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নেন। পরে ওই নারীর সাথে অন্য কারোর যৌন সম্পর্ক হয়েছে কি-না তা তিনি জানেন না বলে আদালতকে জানিয়েছেন। এদিকে মামলার এজাহারে ওই নারী দাবি করেছেন, তিনি রাজশাহী থেকে যশোরে আসতে রাত ১১টা বেজে যায়। সে সময় মনি’র সাথে তার কথা হয়। তারা একটি রেস্তোরাঁয় রাতের খাবার খান।

মনি তাকে নিউমার্কেটে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে রিকসাযোগে এমকে পরিবহনের কাছে নিয়ে যান। বাসটি কোল্ডস্টোরেজের পাশে রাখা ছিলো। মনি গাড়ির মধ্যে নিয়ে গিয়ে রাত ১২ টার দিকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। পরে অন্য আসামিরা এসে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালান। তারা ব্যর্থ হয়ে মারপিট করেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ সেখানে গিয়ে তাকে উদ্ধারের পর যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনায় তিনি (নারী) মনিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। বাকি আসামিরা হলেন-শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়ার মহিদুল ইসলাম বাবুর ছেলে শাহিন হোসেন জনি, সিটি কলেজপাড়ার রনজিৎ বিশ্বাসের ছেলে কৃষ্ণ বিশ্বাস, একই এলাকার মৃত সমর সিংহের ছেলে সুভাষ সিংহ, বারান্দী কাঁঠালতলা বৌবাজার এলাকার জাবেদুল ইসলামের ছেলে রাকিবুল ইসলাম রকিব, বারান্দীপাড়ার কাজী আব্দুস সামাদের ছেলে কাজী মুকুল ও বেজপাড়া কবরস্থান রোডের গোলাম মাওলার ছেলে মাঈনুল ইসলাম।


এদিকে ধর্ষণ মামলার কয়েকজন আসামির পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, রাতে যখন তারা জানতে পারেন একটি বাস চুরি হয়েছে তখন অনেক শ্রমিক বাসটি খোঁজার চেষ্টা করেন। বাসের মধ্যে হেলপার মনি থাকেন। তাকে ফোন দেয় মালিক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বহুবার ফোনে কল দেয়া হলেও মনি রিসিভ করেননি। ফলে বাসটি চুরি হয়েছে বলে অনেকে ধারণা করেন। রাত দেড়টার দিকে শ্রমিকরা কোল্ডস্টোরেজের পাশের একটি ফাওয়ার মিলের সামনে থেকে বাসটি উদ্ধার করেন। বাসের মধ্যে মনি ও ওই নারীকে দেখতে পান তারা। সে সময় শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে মনিকে মারপিট করেন। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে মনি ও ওই নারীকে আটক করে থানায় নেয়। সেখানে থাকা অন্য ৬ শ্রমিককেও ধরে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়।
আসামি শাহিন আহম্মেদ জনির পিতা মফিজুল ইসলাম বাবু জানান, এমকে পরিবহনের বাস চুরি হয়ে গেছে এমন সংবাদ পেয়ে বাড়ি থেকে তিনি ও তার ছেলে জনি মনিহার প্রেক্ষাগৃহ এলাকায় আসেন। তারা সেখানে গিয়ে হট্টোগোল দেখতে পান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জনিকেও নিয়ে যায় থানায়। পরে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে মারপিটের অভিযোগ আনা হয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, পিতার সামনে ছেলে কোনদিন ধর্ষণের চেষ্টা করতে পারে ? একই অভিযোগ করেন অন্য আসামিদের স্বজনরাও। তবে পুলিশ ও শ্রমিকদের একটি সূত্রে জানা গেছে, বাকি ৬ আসামির মধ্যে কেউ কেউ সুযোগ নেয়ার চেষ্টা (ধর্ষণের চেষ্টা) করেছিলেন। আর মনি ও ওই নারী মারপিটের শিকার হয়েছিলেন। একজন নারীর শরীরে আঘাত করা অপরাধ। সে কারণে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মারপিটের অভিযোগ এনেছে। উল্লেখ্য, যশোরে বাসের মধ্যে এক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এমন সংবাদে তোলপাড় হয়। পুলিশ প্রথমে জানতে পারে ওই নারীর বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার শতপাড়া গ্রামে। কিন্তু অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় ওই নারীর বাড়ি আসলে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের মীর্জাপুর গ্রামে। ওই নারী (২৫) রাজশাহীর লক্ষীপুর এলাকার জিপিও নামক একটি কিনিকে আয়ার কাজ করেন। তিনি স্বামী পরিত্যাক্ত। তার আট বছরের একটি ছেলে আছে। শালিখার শতপাড়ায় তার সাবেক স্বামীর বাড়ি। যশোর থেকে রাজশাহী যাতায়াতের পথে এমকে পরিবহনের হেলপার মনি’র সাথে তার পরিচয় হয়। গত বৃহস্পতিবার যশোরে এসে তিনি বাড়ি ফিরে যেতে না পারায় বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে মনি তাকে ধর্ষণ করেন। অন্য ৬ জন তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান।