লাশবাহী গাড়িতে কাফনে মুড়িয়ে ফেনসিডিল পাচার

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ মাদক পাচার হবে- এমন তথ্য গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে আগে থেকেই ছিল। সেই মোতাবেক চালান ধরার জন্য গোয়েন্দাদের নজরদারি ও প্রস্তুতি ছিল। নির্দিষ্ট রুটে ওত পেতে বসেছিলেন গোয়েন্দারা। কখন সেই চালান আসবে। টার্গেট করে কয়েকটি গাড়িতে তল্লাশিও চালানো হয়েছিলো। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ওই গাড়িগুলোতে মাদকের কোনো চালান ছিল না। অবশেষে থামানো হয় একটি লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি।
চালককে জিজ্ঞেস করা হয় ভেতরে কি আছে? চালকের সোজাসাপ্টা উত্তর মরদেহ আছে। আবার জিজ্ঞেস করা হয় কয়টি মরদেহ আছে? চালক জানায়, চারটি মরদেহ। তখনই গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সন্দেহ বেড়ে যায়। এরপর লাশবাহী গাড়ির পেছনের গেট খুলে দেখা যায় কাফনের কাপড়ে মোড়ানো চারটি লাশসদৃশ বস্তু। তবে মরদেহের আকৃতি দেখে গোয়েন্দাদের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। পরে অবশ্য কাফনের কাপড় খুলে যা দেখা গেল সেটি রীতিমতো বিস্মকর। লাশসদৃশ কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে ফেনসিডিলের ৩ হাজার বোতল। যার বাজার দর আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার গুলশান জোনের একটি অভিযানিক টিম মাদকের এই বড় চালানটি উদ্ধার করেছে। চালানের সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এরমধ্যে চারজনের নাম জানা গেছে। তারা হলো মাদক ব্যবসায়ী মাহাবুবুল ইসলাম (২৯), হাসানুর রহমান সবুজ (২২), মো. সোহেল মিয়া ওরফে এমিল (২৫) ও রোমান (২৩)। রোববার শাহবাগ থানার গণপূর্ত স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে থেকে এই চালান ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করা হয়। জব্দ করা হয় তিন হাজার বোতল ফেনসিডিল, একটি লাশবাহী গাড়ি ও একটি মাইক্রোবাস। অভিযানিক দলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কুমিল্লা থেকে ফেনসিডিলের চালানটি নিয়ে গ্রেপ্তারকৃতরা রোববার সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। তারা এসব ফেনসিডিল কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে কৌশলে কিনে এনে ঢাকায় পাইকারি বিক্রি করতে চেয়েছিলো।
অভিযানিক দলের সদস্য ও মহানগর গোয়েন্দা সংস্থার সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহবুবুল আলম বলেন, লাশবাহী গাড়িতে কাফনের কাপড়ে মুড়িয়ে ফেনসিডিল পাচার দেখে আমরা অবাক হয়েছি। এরা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অনেকের তথ্য আমরা পেয়েছি। চক্রের মূল হোতা এমিলি। তার বাড়ি কুমিল্লায়। যাদেরকে গ্রেপ্তার করেছি তারা প্রত্যেকেই একাধিক মামলার আসামি। দীর্ঘদিন ধরে তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তারকৃত সবাইকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছিলো। আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। রিমান্ডে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান মানবজমিনকে বলেন, মাদক কারবারিদের বহু কৌশলে মাদক কারবার করতে দেখেছি। কিন্তু লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে কাফনে মুড়িয়ে মাদক পাচার দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছি। মানুষের অন্তিম যাত্রার সঙ্গী লাশবাহী এসব গাড়ি। রাস্তাঘাটে এধরনের গাড়ি দেখলে চলাচলের সুবিধা করে দেয়া হয়। অথচ এধরনের গাড়িতেই মাদক কারবারিরা কৌশল অবলম্বন করে মাদক পাচার করছে। কারণ তারা ধরে নিয়েছিলো লাশবাহী গাড়ি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি করেন না। আর মাদক কারবারিরাও পুলিশকে ফাঁকি দিতে লাশবাহী গাড়ির পেছনে একটি মাইক্রোবাসে করে যাত্রী সেজে আসছিলো। গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, কুমিল্লা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরা বর্ডার এলাকা থেকে তারা এসব ফেনসিডিল সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করতো। তিনি বলেন, আমরা ম্যানুয়াল ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য নিয়ে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক উদ্ধারের চেষ্টা করছি। দেশের অভ্যন্তরে একবার মাদক ঢুকে গেলে সেটি খুঁজে বের করা কঠিন। তাই সীমান্তে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা অনেক স্মার্ট। তারা আরেকটু আন্তরিক ও বিবেকবান হলে মূল জায়গা থেকে সাপ্লাই চেইন বন্ধ করে দিলে দেশের ভেতর থেকে মাদকের চালান ধরতে আমাদের এত বেগ পেতে হয় না। মাদক ও মাদক ব্যবসায়ীদের জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি থেকে এই চালান ধরা গোয়েন্দা সংস্থার জন্য বড় অর্জন।