বর্তমান পরিস্থিতি খারাপ হলে বিশ্ব বাণিজ্য ভেঙে পড়বে

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) মহামারীর ফলে আগে প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে কৌশলগুলো সফল হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলো আর কার্যকর হবে না। একই সঙ্গে সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে এবং একটি ভালো অবস্থানে থাকবে। পরিস্থিতি খারাপ হলে বিশ্ববাণিজ্য ভেঙে পড়বে। আর সবচেয়ে খারাপ হলে আরো বাণিজ্যযুদ্ধ হবে। মহামারীর ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির এ তিন ধরনের পরিণতি হতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এ পরিস্থিতিতে কভিড-১৯-এর ফলে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে বিশ্বায়ন ও উন্নয়নের বিকল্প মডেলের ওপর জোর দেন তারা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) উদ্যোগে ‘সানেম ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কনফারেন্স-২০২০’ থেকে বৈশ্বিক অর্থনীতি সম্পর্কে এমনটি পূর্বাভাস দিয়েছেন অংশগ্রহণকারী আলোচকরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে অনলাইনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক এ সম্মেলন শুরু হয়েছে, যা আজ শনিবার শেষ হবে।
সম্মেলনের প্রথম দিনে দুটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এর একটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘কভিড-১৯ এবং উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ’। অন্যটি ছিল ‘শ্রমবাজার’ নিয়ে। প্রথম সেশনটিতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্টের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতির ফোর্ড ফাউন্ডেশন অধ্যাপক ড্যানি রডরিক।
‘শ্রমবাজার’ সেশনটিতে সভাপতিত্ব করেন ভারতের জহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারপারসন রবি এস শ্রীবাস্তব। আলোচক ছিলেন আইএলওর এমপ্লয়মেন্ট, লেবার মার্কেট অ্যান্ড ইয়ুথ ব্রাঞ্চের হেড অব এমপ্লয়মেন্ট স্ট্র্যাটেজিস ইউনিট ড. শের ভেরিক।
সেশনে চারটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়। ‘দ্য লেবার মার্কেট অ্যান্ড পোভার্টি ইমপ্যাক্টস অব কভিড নাইনটিন ইন সাউথ আফ্রিকা’ শীর্ষক প্রথম প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী রনক জেইন। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্রমবাজারের ওপর কভিড-১৯-এর প্রভাব এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও দারিদ্র্যসহ নানা আঙ্গিক প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়।
এর পর ‘লংটার্ম কনসিকুয়েন্সেস অব কভিড নাইনটিন অন লেবার মার্কেট আউটকামস: লেসনস ফ্রম পাস্ট ইকোনমিক ক্রাইসিস’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সোস্যাল প্রোটেকশন মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন এক্সপার্ট এবং অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী দিয়া প্রিতাদ্রাজাতি। ইন্দোনেশিয়ার অতীত অর্থনৈতিক সংকটের নানা অভিজ্ঞতা এবং কভিড-১৯ সংকট মোকাবেলায় প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো প্রবন্ধটিতে উপস্থাপিত হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা ‘অকুপেশন বেজড পোভার্টি অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি ইন বাংলাদেশ: ইনসাইটস ফ্রম কভিড নাইনটিন’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রবন্ধটিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাস, বিপরীত অভিবাসন এবং মানবসম্পদ হ্রাস নিয়ে আলোচনা করা হয়। তার প্রবন্ধে বলা হয়, সংকটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন মূলত অনানুষ্ঠানিক খাতে যারা কাজ করেন। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসাগুলো প্রণোদনা প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত নয়।
‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ওয়েজ ডিজিটাইজেশন: ইমপ্লিকেশন্স ফর দ্য ফিউচার অব দ্য বাংলাদেশ ইকোনমি’ শীর্ষক সর্বশেষ প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাইক্রোফাইন্যান্স অপরচুনিটিজের নির্বাহী পরিচালক ড. গাই স্টুয়ার্ট। বাংলাদেশের প্রায় ১ হাজার ৩০০ জন গার্মেন্ট শ্রমিকের সাক্ষাত্কারের ওপর ভিত্তি করে প্রবন্ধটি রচনা করা হয়। প্রবন্ধে ডিজিটাল মজুরি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
অধ্যাপক রডরিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে কভিড-১৯ মহামারীর নানা প্রভাবের বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিশ্বায়ন ও উন্নয়নের বর্তমান মডেলগুলো টেকসই না এবং হাইপার- গ্লোবালাইজেশন বা উচ্চ মাত্রায় বিশ্বায়ন বিভিন্ন দেশে অভ্যন্তরীণ উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
তার বক্তব্যে তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্প খাত, সেবা খাত এবং প্রযুক্তির মধ্যকার সম্পর্ক বিন্যাস নিয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, উন্নততর বা অগ্রসর খাতগুলো শ্রমঘন নয়। উন্নত দেশগুলো শ্রমবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করা শুরু করলেও উন্নয়নশীল দেশগুলো যে উৎপাদন প্রযুক্তি চায় সেটি তারা পাবে না।
শ্রমবাজারের নানা আঙ্গিক নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নীতিগুলো যে আরো বেশি উৎপাদনমুখী হতে হবে এবং শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে হবে সে ব্যাপারেও জোর দেন তিনি।
সেশনটিতে অধ্যাপক রেহমান সোবহান এবং ড. জায়েদী সাত্তারের মতো স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদরাও যোগ দেন। জুম অ্যাপের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের প্রথম দিনে বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৫০ জন অর্থনীতিবিদ, গবেষক, শিক্ষক, সাংবাদিক, উন্নয়ন কর্মী ও শিক্ষার্থী যোগ দেন।
সম্মেলনে কভিড-১৯ মহামারীর সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, জনস্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, শ্রমবাজার, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স, অভিবাসন, দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং সামাজিক সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর ২৪টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে।