নভেম্বরে রাশিয়ার ভ্যাকসিন আসবে কীভাবে?

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার আশায় বিশ্ববাসী। একটি নির্ভরযোগ্য টিকার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। নানামুখী চেষ্টা চলছে। তবে এখন আশাপ্রদ তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন নভেম্বরে পাওয়া যাবে টিকা। রাশিয়ার তৈরি এ টিকা পাওয়ার তথ্য তিনি জানালেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে এখনই টিকা পাওয়ার দিনক্ষণ বলা ঠিক হবে না। কারণ যে টিকাই আসুক তার ট্রায়াল বা অনুমোদন লাগবে। সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হতে হবে। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, আমরা যে টিকাই আনি না কেন তা যেন নিরাপদ, মানসম্পন্ন এবং কার্যকর হয়। আমাদের শরীরে তা ক্ষতিকর হবে না। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য লাইসেন্স প্রদানকারী সংস্থা যারা স্বীকৃতি দেয় এবং মার্কেটিংয়ের অনুমোদন দেয়, সেটাই আমাদের আহরণ বা ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য নাকি রাশিয়ার টিকা। তিনি বলেন, আমাদের দেশীয় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে টিকা আসবে। এ ব্যাপারে আগাম কিছু বলা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক মোজাহেরুল হক।
জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য, দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি কমিটিতে আলোচনা করতে হবে। তাদের টিকা বাংলাদেশে আনলেও তা ট্রায়াল দিতে হবে। আমাদের এখানে কি প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখতে হবে। আমাদের দেশীয় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে টিকা আসতে হবে। রাশিয়া তাদের টিকার ব্যাপারে তেমন খবরাখবর দেয় না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং সংস্থাটির উপদেষ্টা ডা. মুস্তাক হোসেন এ বিষয়ে বলেন, রাশিয়ার টিকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন লাগবে। রাশিয়া তাদের তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালই শুরু করলো মাত্র। পরীক্ষামূলক সাময়িক অনুমোদন নিয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের শেষে বৈজ্ঞানিকভাবে তা প্রকাশ করতে হবে। তারপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন লাগবে। তারা প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপেরটা প্রকাশ করেছে। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, তাদের টিকা আমাদের দেশে আনলে প্রথমে ট্রায়াল দিতে হবে। তা কার্যকর কিনা দেখতে হবে। এটা নিয়ম। ঔষধ প্রশাসনের অনুমোদন লাগবে। হু এবং কোভ্যাক্সের (কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন গ্লোবাল অ্যাকসেস) মাধ্যমে টিকা পাওয়া যাবে। তা সমবণ্টন হবে ঝুঁকিপূর্ণ জনসংখ্যা অনুসারে।
গত ২৮শে সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরের শেষ নাগাদ রাশিয়ার উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ এর টিকা বাংলাদেশ পেতে পারে। বর্তমানে বিশ্বে যে কয়েকটি দেশ করোনার টিকা উদ্ভাবন করে তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষ করেছে, তাদের মধ্যে রাশিয়ার টিকা এগিয়ে রয়েছে। আগামী নভেম্বরের শেষদিকে এ টিকা বাজারজাত হতে পারে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা এ টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বে ১০টির মতো সংস্থা করোনার টিকা আবিষ্কার করেছে। এরমধ্যে ৪ থেকে ৫টি কোম্পানি তাদের তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষ করেছে। আমরা এদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। চিঠি চালাচালিও হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা আমাদের স্থানীয় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে এখানে টিকা উৎপাদন করবে, আমরা তাদের সঙ্গে চুক্তিতে যাবো। এতে আমাদের টিকা পেতে সহজ হবে। এটিকেই আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।