যশোর উপশহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি টিকলো না ছ’মাসও

0

আকরামুজ্জামান ॥ যশোর উপশহরের টিএন্ডটি মোড় থেকে লেকপার্ক হয়ে সারথী টেক্সটাইল মিল পর্যন্ত সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ছয় মাস আগে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কার করা হলেও এখন তার বেহাল দশা। সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার অংশের পুরো ইট-বালি, খোয়া উঠে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, একটি টাইলস কোম্পানির গোডাউনে ট্রাকে করে মালামাল আনা-নেওয়ার কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙাচোরা সড়কে তাই দুর্গতি বেড়েছে মানুষের।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে উপশহর টিএন্ডটি মোড় হতে কিসমত নওয়াপাড়া সারথী টেক্সটাইল মিল পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এই সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, যশোর। ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কারের কাজ এখনো শেষ হয়নি। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সড়কের টিএন্ডটি মোড় হতে মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিং শেষ করা হয়। কিন্তু ছয় মাস না যেতেই সড়কের ওই অংশটি এখন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। সড়কটির পাশেই মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি টাইলস ও সিরামিক মালামালের গোডাউনে প্রতিদিন ৪/৫টি ট্রাকে করে মালামাল আনা নেওয়া করা হয়। যে কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের পাশের বাসিন্দারা জানান, উপশহর এলাকায় যে কয়টি সড়ক রয়েছে তার মধ্যে এই সড়কটির গুরুত্ব অপরিসীম। এই সড়কের পাশেই একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল রয়েছে। এছাড়া আছে একাধিক বেসরকারি সংস্থার অফিস। সড়ক দিয়ে কিসমত নওয়াপাড়াসহ আশপাশের এলাকার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। প্রতিদিন সকালে এ সড়ক দিয়ে প্রাতভ্রমণে বের হন শত শত মানুষ। তাছাড়া সড়কের আশপাশ এলাকায় মাদকসেবীদের আড্ডা হওয়ায় পুলিশের টহলও জোরদার থাকে। এ কারণে চলতি অর্থবছরে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অর্থায়নে সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হলেও মাত্র ছয় মাসের মাথায় তা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।  স্থানীয় বাসিন্দা শাহাদৎ হোসেন বলেন, ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ নামের যে টাইলসের গোডাউন রয়েছে সেই গোডাউনের ম্যানেজার স্থানীয় প্রভাবশালী। ফলে এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত টাইলস ও সিরামিক মালামাল বোঝাই ট্রাক যাতায়াত করলেও কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। সম্প্রতি এলাকাবাসী বিষয়টি প্রশাসনের দৃষ্টিতে আনলে ডিবি পুলিশের একটি দল এসে গোডাউনের লোকজনকে শাসিয়ে যায়। এরপর থেকে তাদের পক্ষ থেকে ভাঙাচোরা ইট দিয়ে সড়ক জোড়াতালি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে এ সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু একটি কোম্পানির গোডাউনের কারণেই সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে উপশহর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ এলাকার লোকজন আমাকে জানিয়েছেন। আমি আজ বা কালকের মধ্যে সরেজমিনে দেখতে যাবো। কারোর ব্যক্তি স্বার্থে জনগণের সম্পদ নষ্ট হবে তা বরদাশত করা হবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ যশোরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেজাউল আহমেদের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরাও জানতে পেরেছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিধ্বস্ত এ সড়ক পুনঃনির্মাণ করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল ঠেকাতে কী করা যায় সে বিষয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এ বিষয়ে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মফিজুর রহমান মিন্টু বলেন, ‘গত এক মাস ধরে প্রচন্ড বৃষ্টি হওয়ার কারণে সড়কটি নষ্ট হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে সড়কের খানাখন্দ ইট দিয়ে পূরণ করে দিয়েছি। বৃষ্টি কমলে রোলারিং করে দেওয়া হবে।’