বোরো সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ, খুলনা বিভাগে জামানত বাজেয়াপ্তসহ কালো তালিকাভুক্ত হচ্ছে ৫৮৮ চালকল

0

সুন্দর সাহা ॥ খুলনা বিভাগে এবার বোরো মৌসুমে সরকারের চাল সংগ্রহের ল্যমাত্রা পূরণ হয়নি। খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেও অসহযোগিতার কারণে মিলের জামানত বাজেয়াপ্ত করাসহ কালো তালিকাভুক্ত হচ্ছে জেলার ৫৮৮টি চালকল। খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগে এবার বোরো মৌসুমে সরকারের চাল সংগ্রহের ল্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এই বিভাগ সফল হয়নি। অর্জিত হয়েছে ল্যমাত্রার ৭১ শতাংশ চাল। অর্থাৎ ৯৩ হাজার ২৬০ মেট্রিক টন। একইভাবে ধান সংগ্রহের ল্যমাত্রাও ব্যর্থ হয়েছে। টার্গেট ছিল ৯৬ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন। যার মধ্যে অর্জিত হয়েছে ল্যমাত্রার মাত্র ২৫ শতাংশ ধান। অর্থাৎ ২৩ হাজার ৮৭০ মেট্রিক টন ধান। চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি কেজি ৩৬ টাকা দরে মোটা চাল কেনার ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। একইভাবে ধানের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারিত ছিল ২৬ টাকা কেজি দরে। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযানের সময়সীমা নির্ধারণ ছিল। সেখানে সময় বাড়িয়েও সংগ্রহের টার্গেট পূরণ হয়নি। ব্যর্থ হয়েছে এবারের বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান। সূত্র জানায়, খুলনা বিভাগে এবার বোরো মৌসুমে সরকারের সাথে ২ হাজার ৩১০টি চালকল মালিক ১ লাখ ৩১ হাজার ৯২৮ মেট্রিক টন সরবরাহের জন্য চুক্তি করেন। আপদকালীন মজুদের ল্েয চলতি মৌসুমে সরকার নির্ধারিত মূল্যে এসব চালকল থেকে চাল কেনার চুক্তি করে স্থানীয় খাদ্য বিভাগ। যার মধ্যে ১ হাজার ৭২২টি মিলার কমবেশি চাল সরবরাহ করলেও চুক্তি ভঙ্গ করে ৫৮৮টি মিল। এই মিলগুলো এক ছটাক চালও সরবরাহ করেনি। আংশিক সরবরাহ করেছে ৩ শতাধিক মিল। খুলনা বিভাগে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা কুষ্টিয়া জেলার। কুষ্টিয়ায় বোরো মৌসুমে সরকারের চাল সংগ্রহের ল্যমাত্রা পূরণ হয়নি। কুষ্টিয়া জেলার ৫৮৪ জন চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করে। যার মধ্যে ৩২৩ জন মিলার কমবেশি চাল সরবরাহ করলেও ২৬১ জন মিলার এক ছটাকও চাল সরবরাহ করেননি। এছাড়া যশোর জেলার ৩৫৯ জন চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেন। যার মধ্যে ২৭৩ জন মিলার কমবেশি চাল সরবরাহ করলেও ৮৬ জন এক ছটাকও চাল সরবরাহ করেননি। খুলনা জেলার ১৪১ জন চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেন। যার মধ্যে ১৩৯ জন মিলার কমবেশি চাল সরবরাহ করলেও ২ জন এক ছটাকও সরবরাহ করেননি। ঝিনাইদহ জেলার ৪৩৭ জন চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেন। যার মধ্যে ৩১১ জন মিলার কমবেশি সরবরাহ করলেও ১২৬ জন চাল সরবরাহ করেননি। মাগুরা জেলার ১৮৪ জন চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেন। এর মধ্যে ১৪১ জন মিলার কমবেশি চাল সরবরাহ করলেও ৪৩ জন এক ছটাকও সরবরাহ করেননি। চুয়াডাঙ্গা জেলার ১৯৭ জন চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেন। যার মধ্যে ১৬৩ জন মিলার কমবেশি চাল সরবরাহ করলেও ৩৪ জন এক ছটাকও সরবরাহ করেননি। সাতক্ষীরা জেলার ৩০৯ জন চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেন। এর মধ্যে ২৭৪ জন মিলার কমবেশি চাল সরবরাহ করলেও ৩৫ জন মিলার চাল সরবরাহ করেননি। মেহেরপুর জেলার ১৯ জন চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। যার মধ্যে ১৮ জন মিলার কমবেশি চাল সরবরাহ করলেও একজন মিলার এক ছটাকও চাল সরবরাহ করেননি। শুধুমাত্র নড়াইল ও বাগেরহাট জেলায় শতভাগ মিলার চাল সরবরাহ করেছেন। নড়াইল জেলার ৪১ জন চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেন। এই জেলার সব মিলার কমবেশি চাল সরবরাহ করেছেন। বাগেরহাট জেলার ৩৯ জন চালকল মালিক চুক্তি করেন খাদ্য বিভাগের সাথে। এই জেলার সব মিলার কমবেশি চাল সরবরাহ করেন।
সূত্র আরও জানায়, যারা চুক্তি করেও চাল দেননি তাদের তালিকা করা হয়েছে। একই সাথে কী কারণে তারা চাল দিতে পারেননি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী এসব মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি এসব মিলের জামানত বাজেয়াপ্ত, প্রণোদনা বাতিল ও আগামী দুই মৌসুম চাল সরবরাহ থেকে চুক্তির বাইরে রাখার মতো পদপে গ্রহণ করতে যাচ্ছে খাদ্য বিভাগ।
এ বিষয়ে মিলাররা জানান, এ বছর দেশে প্রচুর ধান উৎপাদনের পরেও ধানের বাজার দর বেড়ে যায়। আর বোরো মৌসুমে মোটা ধানের উৎপাদন হয় একেবারেই কম। এ কারণে সরকার নির্ধারিত দরের তুলনায় চালের উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে গেছে। মিল মালিকরা কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা লোকসান দিয়েও চাল সরবরাহ করেছেন। তবে যারা চুক্তি করে চাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের ব্যাপারে পদপে নেয়ার আগে ভাবলে ভাল হয়। ছোট মিলাররা এমনিতেই দেউলিয়া হয়ে গেছেন, তার ওপর কড়া পদপে নিলে তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারবেন না। বাংলাদেশ অটো মেজর এন্ড হাসকিং মিল মালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, বোরো মৌসুমে যারা লোকসানে চাল দিয়েছেন তাদেরকে আগামীতে বাড়তি সুবিধা দিতে হবে।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুর রহমান লোকসমাজকে বলেন, যশোর জেলাসহ যে সব জেলার মিলাররা চুক্তি করেও অসহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দফতর। মিলাররা বলছেন বাজার দর বেশি থাকায় নাকি তারা চাল সরবরাহ করতে পারেননি। যশোর জেলায় ৮৬ জন মিলার এক ছটাকও চাল সরবরাহ করেননি বলে তিনি জানান।  কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য কর্মকর্তা তাহসিনুল হক জানান, কুষ্টিয়ায় বোরো মৌসুমে সরকারের চাল সংগ্রহের ল্যমাত্রা পূরণ হয়নি। খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি করেও অসহযোগিতার কারণে কালো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে জেলার ২৬১টি চালকল।
এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান লোকসমাজকে বলেন, যারা চুক্তি করেও চাল দেননি তাদের তালিকা করা হয়েছে। কী কারণে চাল দিতে পারেননি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী এসব মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি এসব মিলের জামানত বাজেয়াপ্ত, প্রণোদনা বাতিল ও আগামী দুই মৌসুম চাল সরবরাহ থেকে চুক্তির বাইরে রাখার মতো পদপে গ্রহণ করতে যাচ্ছে খাদ্য বিভাগ। একই সাথে চুক্তি করে যারা নামমাত্র চাল দিয়ে দায় সেরেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে তিনি জানান। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তের ওপর।