দুর্যোগ সহনীয় ঘর পেয়ে মহাদুর্যোগে মহেশপুরের হতদরিদ্র মমিন !

0

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ ॥ এক কড়াই সিমেন্টের সাথে ১৬ কড়াই বালি। নি¯œমানের কাঠ ও টিনের ছাউনি। মেঝের পলেস্তারা খসে উঠে যাচ্ছে। বৃষ্টির ফোটা পড়ে ঘরের মধ্যে। ঠিক এমন করেই টিআর কর্মসূচির আওতায় মহশেপুর উপজেলার হুদাশ্রীরামপুর গ্রামে দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের ৩ লাখ টাকার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাড়িটি বরাদ্দ পেতে উপকারভোগী মমিনুর রহমান স্থানীয় মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিদুল ইসলামকে দিয়েছেন ২০ হাজার টাকার ঘুষ। তারপরও স্বপ্নের বাড়িটি এখন বসবাসের অযোগ্য। মমিনুর রহমান উপায় না পেয়ে মহেশপুর উপজেলা নির্বহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন। মহেশপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বেনজামিন জানান, উপজেলার মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের হুদাশ্রীরামপুর গ্রামে দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি করেন স্থানীয় চেয়ারম্যান। তিনিই প্রকল্পের সভাপতি। বাড়িটি তৈরি করতে সরকার ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬০ টাকা বরাদ্ধ করে। তিনি বলেন, অতি বৃষ্টি ও অবহেলার কারণে বাড়িটির এ রকম অবস্থা হয়েছে বলে আমি মনে করি, তবে নির্মাণ কাজে কোন দুর্নীতি হয়নি। ঘর মালিককে ঘরের পরিচর্যা করতে বললে তারা চেয়ারম্যানকে দেখায়। তিনি জানান, উপকারভোগীর সাথে চেয়ারম্যানের কিছু একটা সম্পর্ক আছে। সেটা লেনদেনেরও হতে পারে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হুদাশ্রীরামপুর গ্রামের মমিনুর রহমানের বাড়িটি একেবারইে বসবাসের অযোগ্য। ঘরের মেঝে ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে। কাঠগুলো নি¤œমানের। ঘরটিতে এখনো হতদরিদ্র ওই পরিবার ওঠেনি। উপকারভোগী মমিনুর রহমান অভিযোগ করেন, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের সভাপতি শফিদুল ইসলাম ঘর নির্মাণের শুরু থেকেই দুই নম্বর ইট দিয়ে কাজ করছেন। ১৬ কড়াই বালির সাথে এক কড়াই সিমেন্ট দিয়েছেন। আমি এ ভাবে কাজ করার প্রতিবাদ করলে হুমকি ও ধমকের সুরে বলেন, ঘর না নিলে কিন্তু টাকা ফেরৎ যাবে। ইঞ্জিনিয়ারকেও আমরা অনিয়মের কথা বলেছি। তিনিও কোনো কর্ণপাত করেননি। মমিনুর রহমান জানান, বাসগৃহ নির্মাণ সামগ্রী আনতেও ভাড়ার টাকা আমাকেই দিতে হয়েছে। মমিনুর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, এমন ঘরের দরকার ছিলো না। মাটির ভফুা ঘরেই না হয় থাকতাম প্রতিবন্ধী ছেলে আর বউকে নিয়ে। ঘর নির্মাণ সম্পর্কে মান্দারবাড়িয়ার চেয়ারম্যান শফিদুল ইসলাম জানান, ঝড় আর বৃষ্টির কারণে এমনটি হয়েছে। তাছাড়া ঢালাই দেওয়ার পর আমি ওদের বলেছিলাম ঢেকে রাখতে। ওরা কথা শোনেনি। বৃষ্টিতে পলেস্তার ও মেঝে নষ্ট হয়েছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, আমি বয়োবৃদ্ধ মানুষ। ঘর নিয়ে অভিযোগ ওঠায় আমি লজ্জিত। তিনি বলেন, ঘর তৈরি করতে গিয়ে আমার ৩ ব্যাগ সিমেন্ট চুরি হয়েছে। নির্মাণ কাজে আমি কেনো গাফলতি করিনি। তিনি আজকালের মধ্যে দ্রুত ঘরটি সংস্কার করে দিবেন বলে জানান। মহেশপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মেহেরুন নেছা ও মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাশ^তী শীল জানান, ছুটিতে থাকা অবস্থায় এ ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে বিষয়টি আমরা জানি না। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাশ^তী শীল জানান, আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ এসেছে। আমি দু’পকেই ডেকে তাদের কাছে এ বিষয়ে শুনবো।