যশোরের একদিনে পেঁয়াজের দাম বাড়লো কেজিতে ৩০ টাকা

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পরের দিন যশোরের বাজারে এক লাফে কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে গেছে। ৬০ টাকার দেশি পেঁয়াজ একদিনের ব্যবধানে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা ও ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের সাথে সাথে এই মুহূর্তে দেশি পেঁয়াজের সংকটের কোনো কারণ হতে পারে না। চাষি এবং মজুতদারদের কাছে প্রচুর পেঁয়াজ মজুত আছে। যথাযথভাবে ওই গুদামগুলোর পেঁয়াজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বাজারে কৃত্রিম সংকট দূর হবে, দামও কমে আসবে। এদিকে, বাজার তদারকি সরকারি সংস্থাগুলো বলছে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে তারা সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সোমবার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ডিরেক্টর জেনারেল অব ফরেন ট্রেড পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের এই নির্দেশনা দেয়। দক্ষিণ ভারতের বড় পেঁয়াজ উৎপাদন এলাকা বেঙ্গালুরে অতিবৃষ্টি হওয়ায় ফলন মার খেয়েছে। সেখানকার বাজারেও এখন পেঁয়াজের দাম চড়া। এ কারণে রফতানিকারকরা বড় ধরনের লোকসানের আশঙ্কায় ২৫০ মার্কিন ডলারে প্রতি মেট্রিকটন পেঁয়াজ বাংলাদেশে রফতানি বন্ধ করে দেয়। তারা ৭৫০ মার্কিন ডলারের নিচে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি করবে না বলে জানান।
সোমবার বিকেলে ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ায় এদিন রাত থেকেই যশোরের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে বড়বাজার হাটখোলা রোডে পেঁয়াজের আড়ত ‘নিউ আমিন অ্যান্ড সন্স’ এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুল হক জানান, তিনি দেশি পেঁয়াজ পাইকারি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন, সোমবার বিক্রি করেছিলেন ৫০ থেকে ৫৪ টাকায়। আর ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি করেছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, সোমবার বিক্রি করেছিলেন ৩৮ থেকে ৪০ টাকায়। একই বাজারের আরেক আড়তদার ‘মহিমা ভান্ডার’ এর স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর সরদার জানান, তিনি গতকাল মঙ্গলবার দেশি পেঁয়াজের কেজি পাইকারি বিক্রি করেছেন ৮০ টাকায়, সোমবার বিক্রি করেছিলেন ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়। বড়বাজার এইচ.এম.এম রোড ও মাছ বাজার রোডের খুচরা বিক্রেতাদের গতকাল মঙ্গলবার দেশি পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। একদিন আগে সোমবার দেশি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ৬০ টাকায়। মঙ্গলবার ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। সোমবার বিক্রি হয়েছিল ৪৫ টাকায়।
যশোর বড়বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, যশোরে ব্যাপারিরা দেশি পেঁয়াজ আড়তে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন মূলত ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ি ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে কিনে এনে। ওইসব অঞ্চলে যেমন ঝিনাইদহের শৈলকুপা হাট, মাগুরার আড়পাড়া ও শালিখা হাট, রাজবাড়ির নারুয়া, বালিয়াকান্দি সদর, সমাধিনগর, সোনাপুর ও মির্জাঘাট এবং ফরিদপুরের বিভিন্ন হাটে হাজার হাজার মণ পেঁয়াজ ওঠে পাইকারি বিক্রির জন্য। অধিকাংশ ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে জানান, সরকারের তদারকি সংস্থাকে ওইসব বড় বড় হাট-বাজারে লাগাতার অভিযান চালিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ওইসব অঞ্চলে চাষিদের ঘরে ঘরে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা আছে। তাছাড়া মজুতদাররাও পেঁয়াজ গুদামজাত করে রেখেছেন। পেঁয়াজের দাম সহনশীল পর্যায়ে আনতে হলে ওই মজুত ভাঙতে হবে। ওখানে দাম বেশি হলে যশোর বাজারে স্বাভাবিকভাবে পেঁয়াজের দামও বেশি হবে। এইচ.এম.এম রোডের মদিনা ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শেখ জিয়া জানান, যশোর বড়বাজারে আড়তদাররা (কমিশন এজেন্ট) ব্যাপারিদের পেঁয়াজ কমিশনে বিক্রি করেন। বিক্রিত দর আড়তদার নয়, ব্যাপারিরা পান। আড়তদারদের প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১ টাকা কমিশন থাকে। গতকাল মঙ্গলবার ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ছিল পেঁয়াজের বড় হাট। মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় শৈলকুপা হাটের আড়তদার সফি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ইসমাইল হোসেনের সাথে। তিনি জানান, এদিন হাটে দেশি পেঁয়াজ পাইকারি ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা (সাড়ে ৮৭ টাকা কেজি) মণ দরে বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও জানান, হাটবাজারে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদফতর যশোর জেলা মার্কেটিং অফিসার সুজাত হোসেন খান মঙ্গলবার এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা বাজারে সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। যে কোনো ভাবেই হোক আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখবো। এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিদফতর যশোরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন খালিদ মঙ্গলবার এ প্রতিবেদককে জানান, সোমবার বাংলাদেশে ভারতীয় পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকে আমরা তৎপর হয়েছি। বাজার নিয়ন্ত্রণে যা যা করার দরকার আমরা সে পদক্ষেপ নেব। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর যশোরের বাজারে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে যায়। খুচরা বাজারে ৮০ টাকার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। আর ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ওঠে ৯০ টাকা।