ইউএনও’র ওপর হামলার ঘটনায় নতুনমোড়, কারণ জানালো পুলিশ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ ঘোড়াঘাটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ওপর তারই সাবেক মালী হামলা চালিয়েছিল বলে পুলিশ দাবি করেছে। শনিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, ওই হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন ইউএনওর বাসার সাবেক মালী রবিউল ইসলাম ফরাস। তার দেয়া তথ্যে হামলায় ব্যবহৃত মই ও হাতুড়ি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় বাড়ির নৈশ প্রহরী নাজিম হাসান পলাশকেও গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। যদিও রবিউল ইসলামকে রিমান্ডে নেয়া হলেও নাজিম হাসানের জন্য রিমান্ড চাওয়া হয়নি। এর আগে এই ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগের একজন নেতাসহ তিনজনকে গ্রেফতারের পর র‌্যাব জানিয়েছিল, তারা চুরির উদ্দেশে ওই বাড়িতে ঢুকে হামলা চালিয়েছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
সেই সময় র‌্যাব-১৩ অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলেছিলেন, তাদের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুল জানিয়েছেন, নবীরুল এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাওয়া ব্যক্তি নবীরুল বলেও সে জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এই ঘটনার পর ুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছিল যে, তারা মনে করেন, এটা কোন চুরির ঘটনা নয়। ‘অ্যাসোসিয়েশন মনে করে এটি কোনো চুরির ঘটনা নয়। কারণ দুর্বৃত্তরা কোনো প্রকার জিনিস বা সম্পদ চুরি করেনি। এটি একটি পরিকল্পিত আক্রমণের ঘটনা এবং এর সঙ্গে আরো অনেক ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন।’ লিখিত বক্তব্যে বলেছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। পরে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ‘ইউএনওর বাসায় চুরির ঘটনা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। কী কারণে তার ওপর হামলা হয়েছে, তা আরো তদন্তের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছি।’ এরপরেই ডিবি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করতে শুরু করে। এর কয়েকদিন পরেই ইউএনও কার্যালয়ের মালীকে গ্রেফতারের পর পুলিশ জানালো, এই কর্মচারীই ইউএনও-র ওপর হামলা চালিয়েছিল।
পুলিশ ও র‌্যাবের ভিন্ন তথ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাব-১৩ অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলছেন, “গ্রেফতারের পর তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই ওই স্বীকারোক্তি দিয়েছিল। সেটা তাদের বক্তব্য ছিল। তখনো আমরা বলেছি, প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আরও সময় দিতে হবে, তদন্ত করতে হবে। এখন পুলিশ তদন্ত করে যা পেয়েছে, সেটাই ঠিক।”
গত দোসরা সেপ্টেম্বর রাতে ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
হামলার কারণ সম্পর্কে পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক কংকর কর্মকার বলছেন, রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, চারমাস আগে তিনি ইউএনওর ব্যাগ থেকে ৪০/ ৫০ হাজার টাকা চুরি করেছিলেন। সেই ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাকে শনাক্ত করার পর সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে যে এ ঘটনার কারণে ইউএনও-র ওপর ােভ ছিল রবিউলের এবং সেজন্যই সে হামলা চালিয়েছে ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তবে তাকে এখনো কেবিনে স্থানান্তরের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান জাহেদ হোসেন শনিবার সকালে জানান, মুখের পর তার মাথার সেলাইও কাটা হয়েছে। “অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা ভালো। তার জটিলতা কেটে গেছে। তিনি বলেন, তার ডান দিকটা অবশ। তবে তিনি এখন ডান হাতের আঙুল নাড়াচড়া করতে পারছেন।” “ফিজিওথেরাপি দিলে অবশ থেকে তার অবস্থা স্বাভাবিক হতে পারে। সলিড খাবার খেতে পারছেন তিনি”- তিনি জানান। বিবিসি