শেষ বয়সে এসে সংসারের ঘানি টানতে অক্ষম নিরর কবিয়াল হাসেম আলী

0

আড়পাড়া (মাগুরা) সংবাদদাতা ॥ মাগুরার শালিখা উপজেলার কাতলী গ্রামের নিরক্ষর কবিয়াল হাসেম আলী এ অঞ্চলের ২/৪ জেলার এমন কোন হাটবাজার নেই যেখানে তিনি গান গাননি। যশোর, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলার হাটবাজারে মজমা করে গানের পর গান গেয়ে শ্রোতা দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। এমনকি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানী সেনা ও রাজাকারদের বিরুদ্ধে অসংখ্য গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করেছিলেন। সেই নিরক্ষর কবিয়াল হাসেম আলী শেষ বয়সে এসে চরম কষ্টের মধ্যে দিনযাপন করছেন।
কবিয়াল হাসেম আলী ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানার মেহেদীভাঙ্গা গ্রামে ১৯২৭ সালের ১৭ মার্চ (আইডি কার্ড অনুসারে) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম জিনাতুল্লাহ মোল্লা। মাতার নাম ওয়াজেদা খাতুন। পিতা-মাতার তিন সন্তানের মধ্যে হাসেম আলী সবার বড়। বাংলা ১৩৫৮ সনে জিনাতুল্লাহ মোল্লা পরিবার পরিজন নিয়ে শালিখা থানার কাতলী গ্রামে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এখানে এসে তিন বছর পর তার মৃত্যু হয়। সবার বড় সন্তান হিসেবে সংসারের দায়িত্ব পড়ে হাসেম আলীর ওপর। এই সময় তিনি গান রচনা শুরু করেন এবং গেয়ে শোনান। এরপর থেকে তার গান ধীরে ধীরে লোকমুখে প্রচার হতে থাকে। বাম হাতে প্রেমজুড়ি বাজিয়ে হাটবাজারে মজমা করে গান গেয়ে শ্রোতা দর্শককে মুগ্ধ করে তোলেন। তিনি প্রায় চারশ‘ গান রচনা করেছেন। ৫ খানি কবিতার (সায়ের) বই প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে চারখানি প্রেম কাহিনী অবলম্বনে লিখিত। তিনি ৬ পুত্র ও ৫ কন্যা সন্তানের জনক।
কবিয়াল হাসেম আলী যে সব গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করতেন, সেসব গনের কয়েকটি হলো, ও ভাই বাঙালী রাজাকারে কেন নাম দিলি, গাওরে গান গাওরে গান জয় বাংলা জয়ের গান, শোন শোন বন্ধুগনে করি আমি বর্ননা, বাংলায় দান করে সরকার মানে হলো না, সোনার বাংলা সোনার মানুষ সোনার বাংলাদেশ এই বাংলাদেশ স্বাধীন করতে কতই মানুষ হলো শেষ, আড়পাড়া বাজারে দেখলাম আজব কারখানা, টিনের ঘরে পড়লো শিল, বন্ধ হলো রাইস মিল, কারো পিঠে লাথি কিল, হাটে মানুষ থাকলো না।
২০১৯ সালের ২৭ ডিসেম্বর মাগুরার গাবতলা বাজারে ঐ এলাকার সুশিল সমাজ ‘হাসেম আলী বয়াতী সংবর্ধনা সমাজ‘ ব্যানারে তাকে সংবর্ধনা দেয়। অনুষ্ঠানে তাকে ফুলের তোড়া, নতুন বস্ত্র ,ক্রেস্ট ও নগদ ৬২ হাজার টাকা তার হাতে তুে দেয়া হয়। বর্তমানে কবিয়াল হাসেম আলী শেষ বয়সে এসে আর সংসারের ঘানি টানতে পারছেন না। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সরকারিভাবে তার মুল্যায়ন হওয়া উচিত বলে সচেতনমহল মনে করেন।